এশিয়া কাপ

ভারত-পাকিস্তান: প্রতিশোধের ম্যাচে জয়ের নায়ক পান্ডিয়া

প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০২২, ১৭:০১

সাহস ডেস্ক

পাকিস্তানের জন্য ম্যাচটি প্রতিপত্তি ধরে রাখা হলেও ভারতের জন্য ম্যাচটি ছিল প্রতিশোধের। দুই দলের শেষ দেখায় অর্থাৎ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতকে ১০ উইকেটের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ ব্যবধানে হারিয়েছিল পাকিস্তান। সেই শোধ নিতেই দশ মাস পর একই মাঠে পাকিস্তানকে পুরো ২০ ওভার ব্যাটিং করতে দেয়নি ভারত, গুটিয়ে দিয়েছে ১৪৭ রানে। শেষ মুহুর্তে হার্দিক পান্ডিয়ার দারুণ ফিনিসিংয়ে জয়ে তুলে প্রতিশোধটা নিতে সক্ষম হল ভারত। এই জয়ে নায়ক বনে গেলেন হার্দিক পান্ডিয়া। আর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর বিপক্ষে জয়ের ধারা বজায় রাখতে পারল না পাকিস্তান। রবিবার (২৮ আগস্ট) দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে এশিয়া কাপ শুরু করল রহিত শর্মার দল।

তবে ভারত যে জয় পেয়েছে এটা যতটা সাধারণ ও সরল ভাষায় লেখা হয়েছে, আসলে ততটা সহজে ম্যাচ জিততে পারেনি রোহিত শর্মার দল। পাকিস্তানের দেয়া ১৪৮ রানের লক্ষ্যে পৌঁছাতে ভারতকে খেলতে হয়েছে শেষ ওভার পর্যন্ত। জয়ের জন্য তাকিয়ে থাকতে হয়েছে রবীন্দ্র জাদেজা আর হার্দিক পান্ডিয়াদের ব্যাটের দিকে, যারা ব্যাটিং জানলেও আদতে বোলারও। তবে শেষ ওভারে জয়ের জন্য ভারতের দরকার ৭ রান। ওই ওভারে নেওয়াজের প্রথম বলে বোল্ড হন জাদেজা। এরপর দুই দলের জন্যই অনিশ্চয়তা ছিল। তবে চতুর্থ বলে ছক্কা মেরে সে অনিশ্চয়তার ইতি টানেন হার্দিক পান্ডিয়া।

এদিন পাকিস্তানের দেয়া ১৪৭ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৫ উইকেট হারিয়ে ২ বল বাকি রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছায় ভারত। তবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় ভারত। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই রানের খাতা খোলার আগে নাসিম শাহের শিকার হন লোকেশ রাহুল। এক বল বাদেই দ্বিতীয় স্লিপে জীবন পান বিরাট কোহলি। জীবন পেয়ে রোহিত শর্মাকে সঙ্গে নিয়ে রানের গতি বাড়ান বাঁহাতি এই ব্যাটার। তবে দলীয় ৫০ রানের মাথায় নেওয়াজের বলে শিকার হন রোহিত শর্মা। ফেরার আগে ১৮ বলে ১২ রান করেন ভারতীয় অধিনায়ক। তার পরেই স্কোরবোর্ডে ৩ রান যোগ হতেই নেওয়াজের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অফে ইফতেখার আহমেদের হাতে ধরা পরেন বিরাট কোহলি। নিজের শততম টি-টোয়েন্টিতে সাজঘরে ফেরার আগে ৩৪ বলে ৩ চার ১ ছক্কায় ৩৫ রান করেন কোহলি।

ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হন সূর্যকুমার যাদবও। ১৮ রানে তাকে মাঠছাড়া করেন নাসিম শাহ। অভিষেকেই দ্বিতীয় বলে উইকেট নেন নাসিম। লোকেশ রাহুল, রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি আর সূর্যকুমার যাদব-স্বীকৃত চার ব্যাটসম্যানই যখন প্যাভিলিয়নে ফেরেন, তখনো ৩৪ বলে ৫৯ রান দরকার ভারতের। এসময় উইকেট কামড়ে ধরে রানের চাকা সচল রাখেন রবীন্দ্র জাদেজা। সঙ্গে নেন হার্দিক পান্ডিয়াকে। স্নায়ুতে চাপ তৈরি করা সমীকরণকে বেশ ঠাণ্ডা মাথায়ই সামাল দেন জাদেজা ও পান্ডিয়া। তবে নাটক তখনও শেষ হয়নি। শেষ ওভারে জয়ের জন্য ভারতের দরকার ছিল ৭ রান। হাতে ছয় উইকেট। এমন সময় মোহাম্মদ নেওয়াজ বল হাতে এসে প্রথম বলেই তুলে নেন জাদেজার উইকেট। কোহলির শততম টেস্ট আর শততম ওয়ানডেতে ম্যাচসেরা হওয়া জাদেজা এ ম্যাচে ফিরলেন ২৯ বলে ২ চার ২ ছক্কায় ৩৫ রানের ইনিংস খেল। এ যাত্রায় ম্যাচসেরা হতে পারেননি জাদেজা। সেই স্বীকৃতি পেয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়া। শেষ ওভারের চতুর্থ বলে ছক্কা মেরে দলকে জেতান পান্ডিয়া। ১৭ বলে ৪ চার ১ ছক্কায় ৩৩ রান করে অপরাজিত থাকেন হার্দিক পান্ডিয়া। ব্যাটিংয়ের আগে বল হাতেও পান্ডিয়া ছিলেন সফল, ২৫ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। পাকিস্তানের হয়ে মোহাম্মদ নেওয়াজ ৩টি ও নাসিম শাহ ২টি উইকেট নেন।

ম্যাচ সেরা হয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়া।

এর আগে টস জিতে পাকিস্তানকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানায় ভারত। ব্যাট করতে নেমে ১৯.৫ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ১৪৭ রান করতে সক্ষম হয় পাকিস্তান। তবে আগে বোলিং নিয়ে ম্যাচের প্রথমার্ধের পুরোটাই দাপট দেখায় ভারতীয় পেসাররা। ভুবনেশ্বরদের বল সামাল দিতে বিপাকে পড়লেও রান বের করে আনছিলেন দুই ওপেনার বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। ভুবনেশ্বরের করা প্রথম ওভারেই দুইবার রিভিউ থেকে বাঁচেন মোহাম্মদ রিজওয়ান; প্রথমবার আম্পায়ারের এলবিডব্লু আউট পাল্টালে, দ্বিতীয়বার ভারতের কট বিহাইন্ডের আবেদন বাতিল হয়। তবে তাদের জুটি বড় করতে দেননি ভুবনেশ্বর কুমার। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে ভুবনেশ্বর চতুর্থ বলে মিস টাইমিংয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বাবর আজম। টি-টোয়েন্টি র‌্যাঙ্কিংয়ের নাম্বার ওয়ান ব্যাটার সোজা ব্যাটে দুটি চার মেরে শুরু করলেও ৯ বলে ১০ রান করে ফেরেন। তিন নম্বরে নামা ফখর জামানও আটকে যান ১০ রানে। আবেশ খানের উঠতি বলে কাট খেলতে গেলে বল তার ব্যাট ছুঁয়ে যায়। ভারতের উইকেটরক্ষক দিনেশ কার্তিক বা বোলার অবশ্য আবেদন করেননি, তবে নিজেই ‘ওয়াক’ করে চলে যান ফখর। ৪২ রানে পড়ে পাকিস্তানের দ্বিতীয় উইকেট।

এরপর শুধু ইফতেখার আহমেদের ব্যাট থেকে আসে ২৮ রান। এছাড়া, খুশদিল ২, শাদাব খান ১০, আসিফ আলী ৯ ও নাসিম শাহ ০ রানে আউট হলেও শেষের দিকে ঝড় ওঠে পাকিস্তান ব্যাটিং লাইনআপে। ১৩ বলে ২৯ রানের ঝড় তোলেন দুই বোলার হ্যারিস রউফ ও শাহনেওয়াজ দাহানি। ৬ বলেন ২ ছক্কায় ১৬ রান করে দাহানি ফিরলেও ৭ বলে ২ চারে ১৩ রান করে অপরাজিত থাকেন রউফ। তবে বোলারদের এই ব্যাটিং প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত কাজে আসেনি। পরাজয় নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় পাকিস্তানকে।

২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে বড় জয় পেয়েছিল পাকিস্তান। সেবার পাকিস্তানের একটি উইকেটও ফেলতে পারেননি ভারতীয় বোলাররা। এবার এশিয়া কাপে এসে পাকিস্তানের পুরো ১০ উইকেট তুলে নিয়েছে ভারতীয় পেসাররা। নেতৃত্ব দিয়েছেন ভুবনেশ্বরই। ৪ ওভারে ২৬ রান দিয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট, পাকিস্তানের বিপক্ষে যা কোনো ভারতীয়র সেরা বোলিং। পান্ডিয়া নেন ৩ উইকেট। দুটি উইকেট নেন আর্শদীপ এবং একটি নেন আবেশ। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ভারতের পেসারদের প্রতিপক্ষের ১০ উইকেটের সব কটিই নেয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। ম্যাচ সেরা হয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়া।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত