টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

প্রথম দেখায় বাংলাদেশের পরাজয়, ইংল্যান্ডের টানা দ্বিতীয় জয়

প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২১, ১৯:২০

সাহস ডেস্ক
ছবি: এএফপি

১৫তম ওভারে শরীফুল ইসলামের প্রথম বলে পুল করে চার মেরে ইংল্যান্ডের জয় নিশ্চিত করে দেন জনি বেয়ারস্টো। শুধু বিশ্বকাপ নয়, টি-টোয়েন্টিতেই প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। প্রথমবারের দেখায় টাইগারদের বড় ব্যবধানেই হারাল ইংল্যান্ড। শ্রীলঙ্কার পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও হারল মাহমুদউল্লাহ বাহিনীরা। অন্যদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর বাংলাদেশকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় জয় পেল ইংলিশরা।

আজ বুধবার (২৭ অক্টোবর) আবুধাবি স্টেডিয়ামে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ইংলিশদের কাছে ৩৫ বল ও ৮ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ।

এদিন টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১২৪ রান তুলতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। ১২৫ রানের সহজ লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ১৪.১ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ১২৬ রান করে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ইংল্যান্ড।

দলের হয়ে ওপেনিংয়ে নামেন জেসন রয় ও জস বাটলার। প্রথম ওভারে বলে আসেন সাকিব আল হাসান। তাকে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে ছয় মারেন বাটলার। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে দারুণ টাইমিংয়ে ইনিংসের প্রথম ছয় মারেন তিনি। ইনিংসের প্রথম ছয় পেতে ১৯তম ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। রয়-বাটলার শুরুটা করলেন উড়ন্তই।

এরপর নাসুমের প্রথম আঘাত। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইনিংসের প্রথম ওভার করতে এসেই সফল হয়েছিলেন নাসুম আহমেদ। আজ তাকে বোলিংয়ে আনা হলো পঞ্চম ওভারে। ওভারের পঞ্চম বলে ক্রিজের পেছনে গিয়ে আটকে থেকে তুলে মেরেন বাটলার। লং-অফ থেকে বাঁদিকে ছুটে গিয়ে ভালো ক্যাচ নিয়েছেন মোহাম্মদ নাঈম। ১৮ বলে ১ চার ১ ছক্কায় ১৮ রান করেন বাটলার। ৫ ওভার শেষে ইংল্যান্ডের ১ উইকেটে ৪০ রান।

এরপর নামেন ডেভিড মালান। মোস্তাফিজের বেরিয়ে যাওয়া বলে শট খেলেছিলেন রয়, তবে তার ব্যাট ছিল প্যাডের পেছনে। বাংলাদেশের করা কট-বিহাইন্ডের আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার ল্যাংটন রুজেরে। মাহমুদউল্লাহ রিভিউ করলেও সফল হয়নি সেটা। যে শব্দ ছিল, প্যাডে রয়ের ব্যাট আঘাত করার ফলেই এসেছিল সেটা। আল্ট্রা-এজে কোনো স্পাইক দেখা যায়নি তাই। শেষ বলে আবারও এলবিডব্লুর আবেদন হয়েছিল, তবে এবার আর রিভিউ হয়নি। লেগবাই থেকে এসেছে চার রান। পাওয়ার প্লে শেষে ইংল্যান্ড তোলে ৫০ রান।

এরপর ১০ ওভার শেষে ১ উইকেটে ইংল্যান্ড তুলেছে ৯০ রান। বাংলাদেশ তুলেছিল ৬০ রান। পরে চলতি বিশ্বকাপে নিজের দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি তুলে নিলেন রয়। ১১তম ওভারে নাসুমের চতুর্থ বলে ছয় মেরে ফিফটি তুলে নেন জেসন রয়।

এরপরই শরিফুলের আঘাত। ১৩তম ওভারে পঞ্চম বলটি অফস্টাম্পের বাইরে দেন শরিফুল। অফস্টাম্পের বাইরের বলটি মারতে গিয়ে থার্ডম্যানে থাকা মোহাম্মদ নাঈমের হাতে ধরা পরেন রয়। ফেরার আগে ৩৮ বলে ৫ চার ৩ ছক্কায় ৬১ রান করেন জেসন রয়। এরপর ১৫তম ওভারে শরিফুলের প্রথম বলে চার মারেন জনি বেয়ারস্টো। এতে ৮ উইকেটে জিতে যায় ইংল্যান্ড।

টাইগারদের হয়ে উইকেট দুটি নেন নাসুম আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম।

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও জনি বেয়ারস্টো। ছবি: রয়টার্স

এর আগে টসে জিতে দলের হয়ে ওপেনিংয়ে নামের লিটন দাস ও মোহাম্মদ নাঈম। প্রথম ওভারেই ২ চার মারেন লিটন। প্রথম ওভারে মঈন আলীকে বলে এনেছেন অধিনায়ক ইয়ন মরগান। পথম বলে ক্রিজ ছেড়ে বেড়িয়ে লং-অন দিয়ে প্রথম চারটি মারেন লিটন। পরের বলে আবারও ক্রিজ ছেড়ে এক্সট্রা কাভার দিয়ে দ্বিতীয় চার মারেন এই ডানহাতি ওপেনার। প্রথম ওভারে বাংলাদেশের বিনা উইকেটে ১০ রান।

এরপর ম্যাচের তৃতীয় ওভারে পরপর ২ বলে নেই লিটন-নাঈম। মঈনের প্রথম ওভারে ২টি চার মেরেও ছন্দে ফিরতে পারেননি লিটন। মঈনের দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে জায়গা বানিয়ে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে স্কয়ার লেগে লিয়াম লিভিংস্টোনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লিটন। ফেরার আগে ৮ বলে ২ চারে ৯ রান করেন লিটন দাস। লিটনের পরে নামেন সাকিব।

এর পরের বলেই নাঈমের উইকেট। তৃতীয় বলে উড়িয়ে মারতে দিয়ে মিড-অনে ক্রিস ওকসের হাতে ধরা পড়েছেন নাঈম। ফেরার আগে ৭ বলে ৫ রান করেন মোহাম্মদ নাঈম। মঈনের হাতে এসে যায় হ্যাটট্রিকের সুযোগ। নামেন মুশফিক। তবে মঈনের হ্যাটট্রিক বলটা ডিফেন্ড করেন মুশফিক। তখন বাংলাদেশের ১৫ রান। ৩ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে।

এরপর ফিরে যান সাকিব। শুরু থেকে গুডলেংথ, শর্ট অব আ গুডলেংথে বল করে যাচ্ছেন ক্রিস ওকস। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে ক্রিস ওকসের এমন ডেলিভারি ঘুরিয়ে খেলতে গিয়ে ওপরে তোলেন সাকিব, বৃত্তের ওপর থেকে পেছন দিকে ছুটে শেষ মুহুর্তে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ ধরেন আদিল রশিদ। ৭ বলে ৪ রান করে ফেরেন সেরা এই অলরাউন্ডার। তখন বাংলাদেশের ৩ উইকেটে ২৬ রান। পাওয়ার প্লে শেষে ২৭ রান তুলেছে বাংলাদেশ।

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম। ছবি: এএফপি

সাকিবের পর নামেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। অধিনায়ককে নিয়ে ৩৭ রানের একটি জুটি গড়েন মুশফিক। এরপর ১১তম ওভারে লিয়াম লিভিংস্টোনের চতুর্থ বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন মুশফিকুর রহিম। ফেরার আগে ৩০ বলে ৩ চারে ২৯ রান করেন।

এরপর ভুল বোঝাবুঝিতে ফিরলেন আফিফ। মিসফিল্ডে রান চুরি করতে নেই- ক্রিকেটের প্রবাদটা সামনে এল আবার। লিভিংস্টোনের বলটা ফাইন লেগে খেলেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। ঠিকঠাক সিঙ্গেল পূর্ণ করেছিলেন। তবে টাইমাল মিলসের মিসফিল্ডে ডাবলস নেওয়ার জন্য আফিফকে ডেকেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। আফিফ বেরিয়ে এসেছিলেন অনেকটাই। মাহমুদউল্লাহ এরপর ফিরিয়ে দিয়েছেন তাকে, তবে ক্রিজে ফিরতে পারেননি আফিফ। ৬ বলে ৫ রান করে রান-আউট হয়ে ফেরেন আফিফ।

এরপর মাহমুদউল্লাহকে শিকার করলেন লিভিংস্টোন। লিভিংস্টোনের বলে মারতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দেন টাইগার অধিনায়ক। ফেরার আগে ২৪ বলে ১ চারে ১৯ রান করেন। পাওয়ার প্লের পর ইনিংসের মাঝের ওভারগুলোতেও শেষ পর্যন্ত সুবিধা করতে পারল না বাংলাদেশ। ৫ ওভার বাকি থাকতে বাংলাদেশের স্কোর ৮৩ রান।

এরপর মেহেদীর দুই চার। টাইমাল মিলসকে থার্ডম্যান দিয়ে চার মারেন মেহেদী। পরের ওভারে আবারও চার। আদিল রশিদকে কাভারের ওপর দিয়ে মারেন মেহেদী। ১৭ ওভার শেষে বাংলাদেশের বোর্ডে ৯৮ রান। এরপরই মেহেদীর বিদায়। দুই চার মারার পর টাইমাল মিলসের ধীরগতির বলে স্কুপ করতে গিয়ে ফাইন লেগে থাকা ক্রিস ওকসকসের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। ফেরার আগে ১০ বলে ২ চারে ১১ রান করেন মেহেদী হাসান।

এর পরের ওভারে নাসুম আহমেদের ছয়, ছয়, চার। আদিল রশিদের ওপর চড়াও হলেন নাসুম। প্রথমে স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে মেরেছেন ইনিংসের প্রথম ছয়। ২ বল পর মেরেছেন আরেকটি। শেষ বলে থার্ডম্যান দিয়ে মেরেছেন চার। ১৯তম এই ওভারে উঠেছে ১৭ রান। যা ইনিংসে এক ওভারে সর্বোচ্চ স্কোর।

এরপর শেষ ওভারের পঞ্চম বলে রিভিউ করে নুরুল হাসানের উইকেট নিয়েছে ইংল্যান্ড। টাইমাল মিলসের দ্রুতগতির শর্ট বলে কট-বিহাইন্ড হয়েছেন বাংলাদেশের উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান। শেষ বলে ইয়র্কারে বোল্ড হয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান। টাইমাল মিলসের করা শেষ ওভারে বাংলাদেশ তুলতে পেরেছে মাত্র ৫ রান। এদিকে অপরাজিত থেকে গেছেন নাসুম আহমেদ। ৯ বলে ১ চার ২ ছক্কায় ১৯ রান করেন তিনি।

ইংলিশদের হয়ে টাইমাল মিলস ৩টি, মঈন আলী ও লিভিংস্টন ২টি করে এবং ক্রিস ওকস ১টি উইকেট নেন।

ম্যাচ সেরা হয়েছেন জেসন রয়।

সাহস২৪.কম/এসকে.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত