জ্ঞান আর ঐক্য দিয়ে বিশ্বকে শাসন করছে ইহুদিরা

প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১৪

ড. মো. কামরুজ্জামান
ড. মো. কামরুজ্জামান, অধ্যাপক, দা‘ওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

বিশ্ব জনসংখ্যা আটশ’ কোটির বেশি। এ আটশ’ কোটি মানুষের মধ্যে খ্রিস্টান জনসংখ্যা প্রায় ২৫০ কোটি। আর  খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের সংখ্যা ১২৬টি। পৃথিবীতে মুসলিম জনসংখ্যা ২০০ কোটি। আর মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের সংখ্যা ৫৭টি। পৃথিবীতে মোট হিন্দু জনসংখ্যা প্রায় ১৩০ কোটি। আর হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ৩টি। পৃথিবীতে ধর্ম বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সংখ্যা আনুমানিক ৫০ থেকে ৬০ কোটি। আর বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের সংখ্যা ১০টি। ধর্ম অনুসরণের দিক দিয়ে হানজু বা হান সম্প্রদায়ের সংখ্যা প্রায় ৪০ কোটি। এদের বসবাস চীনে। অনুসারী বিবেচনায় পৃথিবীর ষষ্ঠ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নাম শিখ। 

বিশ্বজুড়ে আনুমানিক ৩ কোটি মানুষ এ ধর্মে বিশ্বাস করে। অনুসারী বিবেচনায় পৃথিবীর সপ্তম বৃহৎ ধর্ম হলো ইহুদি। বিশ্বময় ইহুদি ধর্মের অনুসারী সংখ্যা ১ থেকে দেড় কোটি। এর মধ্যে ৫৪ লাখ ইহুদি বসবাস করে ইসরাইলে। অবশ্য ইসরাইল তাদের নিজস্ব ভূমি নয়। ১৯৪৮ সালে এটা তারা ফিলিস্তিনি মুসলিমদের কাছ থেকে জোর করে কেড়ে নিয়েছে। অনুমানিক ৬৮ লাখ ইহুদি বসবাস করে আমেরিকাতে। কানাডাতে বসবাস করে প্রায় ৩ লাখ, আর ইংল্যান্ডে বসবাস করে প্রায় ২ লাখ ইহুদি। সার্বিক দৃষ্টিকোণে বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র হলো আমেরিকা। 

আমেরিকার মোট জনসসংখ্যার ২% (দুই শতাংশ) হলো ইহুদি জাতি। আর পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার শূন্য দশমিক দুই শতাংশ নাগরিক হলো ইহুদি জাতি। অর্থাৎ মোট ৫০০ জন মানুষের মধ্যে ইহুদি সংখ্যা হলো মাত্র ১ জন। কিন্তু বর্তমানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গোটা পৃথিবীর নেতৃত্ব দিচ্ছে এ ইহুদি জাতি। 

আমেরিকার রাজনীতিতে ইহুদিদের প্রভাব একচেটিয়া। আশ্চার্যের ব্যাপার হলো, সংখ্যায় অতি নগণ্য এ জাতির সমর্থন ছাড়া আমেরিকার কেউই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারে না! আবার তাদের সমর্থন ছাড়া কেউ প্রেসিডেন্ট থাকতেও পারে না! ইহুদি জাতিকে হাতে রেখেই আমেরিকার রাজনীতি পরিচালিত হয়। তাদের তোয়াজ না করলে যেমন আমেরিকানরা ক্ষমতায় যেতে পারে না, তেমনি ক্ষমতায় থাকতেও পারে না। এ কারণে ক্ষমতাসীন প্রতিটি আমেরিকান প্রশাসন ইহুদিদের ভয়ে সবসময় তটস্থ থাকে। আমেরিকান প্রশাসন ইহুদিদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক লবিং মেইনটেইন করে চলে। আমেরিকার সাগগ্রিক শাসন ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ করে সেদেশের করপোরেট হাউস। আর করপোরেট হাউস হলো সেদেশের বড় বড় ব্যবসায়ী কোম্পানি। করপোরেট এ হাউসগুলো একজন প্রেসিডেন্টকে ইচ্ছামতো ওঠাতে পারে। আবার ইচ্ছা করলে বসাতেও পারে। আর এসব কোম্পানির মূল দায়িত্ব পালন করেন ইহুদি কমিউনিটির মানুষ। 

আমেরিকার নির্বাচনে ফান্ড গ্রহণ একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এ নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের সবচেয়ে বড় নির্বাচনি ফান্ডদাতা হচ্ছে ‘আমেরিকা-ইসরায়েল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি’, যা পরিচালিত হয় ইহুদি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে। আমেরিকার ১০০ জন সিনেটরের মধ্যে ১৩ জনই হলো ইহুদি। আমেরিকার সকল গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংকের মালিকানা ইহুদিদের হাতে। সকল আর্থিক কারবারের প্রযুক্তির বাটন ইহুদিদের কব্জায়। আমেরিকার অর্থনৈতিক, আর্থসমাজিক ও রাজনৈতিক সকল গুরুত্বপূর্ণ পদে সমাসীন রয়েছে ইহুদি সম্প্রদায়ের লোকেরা। তার মানে, আমেরিকা ইচ্ছেমতো দেশের বাজেট প্রণয়ন করতে পারে না। এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নির্ভর করতে হয় ইহুদিদের ওপর। 

সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, আমেরিকা ইচ্ছা করলেই ইহুদিদের কিছু করতে পারবে না। উল্টো ইহুদি সম্প্রদায়ের ধনদেবতারা মিলিতভাবে আমেরিকাতে যে কোনা ঘটনা ঘটিয়ে দিতে পারে। 

আমেরিকার সকল মিডিয়াই নিয়ন্ত্রণ করে ইহুদিরা। বিশ^খ্যাত সিএনএন, এবিসি, কার্টুন চ্যানেল, নিউ লাইন সিনেমা, ফক্স নেটওয়ার্ক, ন্যাশনাল জিওগ্রাফি, স্পোর্টস চ্যানেল, ইএসপিএনসহ অধিকাংশ মিডিয়া জগৎ ইহুদিরাই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আমেরিকার বিখ্যাত পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইম, নিউইয়র্ক পোস্ট ও ওয়াশিংটন পোস্টসহ বিখ্যাত পত্রিকাগুলো তাদেরই নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত। বিশ^ময় পরিচিত ও সোস্যাল মিডিয়াখ্যাত ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ যিনি একজন ইহুদি।

বিশ্ববিখ্যাত মিডিয়া প্রতিষ্ঠাতার নাম হলো কিথ রুপার্ট মারডক। তিনি একজন অস্ট্রেলীয় আমেরিকান ইহুদি নাগরিক। যিনি বহুজাতিক সংবাদ মাধ্যমের নির্বাহী কর্মকর্তা এবং নিউইয়র্কভিত্তিক ‘দি নিউজ করপোরেশন’-এর অধিকাংশ শেয়ারের মালিক। শুধু তাই নয়, বরং তিনি এ করপোরেশনের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। 

পৃথিবীর সেরা ১৮৫টি পত্রিকার মালিক এই রুপার্ট মারডক। এছাড়া অসংখ্য টিভি চ্যানেলের জনক ও নিয়ন্ত্রক এই ইহুদি। মিডিয়া জগতের ৭০ শতাংশের বেশি নিয়ন্ত্রণ করে তার প্রতিষ্ঠিত ‘দি নিউজ করপোরেশন!’ প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপের ওপর পরিচালিত যে কোনো হামলাকে বৈধতা দিতে তার নিয়ন্ত্রিত  পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলগুলো নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইরাকে আমেরিকার হামলাকে সাধারণ আমেরিকানদের কাছে যুক্তিগ্রাহ্য করতে তার নিয়ন্ত্রিত ‘ফক্স নিউজ’ মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

আমেরিকার পত্রিকাগুলোরর মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী পত্রিকার নাম হলো নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এবং ওয়াশিংটন পোস্ট। বিখ্যাত এ তিনটি পত্রিকার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ইহুদিদের হাতে। এসব পত্রিকা যে কোনো সময় আমেরিকার সার্বিক ব্যবস্থাপনাকে নড়বড়ে করে দিতে পারে। এর জলন্ত উদাহরণ হলো- ওয়াটারগেট কেলেংকারির জন্য প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের পদত্যাগ। ওয়াশিংটন ডিসিতে একটি বাণিজ্যিক ভবনের নাম হলো ‘ওয়াটার গেট’। এ ভবনটি ছিল ডেমোক্র্যাটদের প্রধান কার্যালয়। আর প্রেসিডেন্ট নিক্সন ছিলেন রিপাবলিকান দলের পদপ্রার্থী। নিক্সন তখনো আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। ডেমোক্র্যাটদের নির্বাচনি কৌশল জানতে ১৭ জুন ১৯৭২ সালে নিক্সনের ৫ জন গোয়েন্দা উক্ত ভবনে প্রবেশ করে। ভবনের ভিতর কিছু টেপ রেকর্ডার রেখে আসে, যা দ্বারা কথাবার্তা রেকর্ড করা যায়। এটাকে আড়িপাতা অপরাধ হিসেবে ‘ওয়াশিং পোস্ট’ ব্যাপক প্রচার করে। যা রিপাবলিকান দল ও প্রেসিডেন্ট নিক্সনের অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত হয়। ফলে নিক্সনকে পদত্যাগ করতে হয়। এ পদত্যাগের পেছনে বড় ভ‚মিকা রেখেছিল ওয়াশিংটন পোস্ট। বর্তমানে এর পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছে ইহুদিদের তৃতীয় প্রজন্মখ্যাত ডোনাল্ড গ্রেহাম। এ পত্রিকাটির অধীনে আরো অনেক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে শুধু আর্মিদের জন্যই প্রকাশিত হয় ১১টি পত্রিকা। এ পত্রিকার অধীনে আরেকটি পত্রিকার নাম হলো ‘সাপ্তাহিক নিউজ উইক’। 

বিশ্বজুড়ে সাপ্তাহিক এ পত্রিকাটির ব্যাপক খ্যাতি রয়েছে। আমেরিকার রাজনৈতিক জগতের প্রভাবশালী পত্রিকার নাম হলো ‘নিউইয়র্ক টাইমস’। যুগ যুগ ধরে এর প্রকাশক ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছে ইহুদিরা। বর্তমানে এর প্রকাশক ও চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে আর্থার সালজবার্গার। আর প্রেসিডেন্ট সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে রাসেল টি লুইস, আর ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে মাইকেল গোল্ডেন। এসব দায়িত্বরত ব্যক্তিবর্গ ইহুদি সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। আমেরিকাতে প্রতিদিন দৈনিক পত্রিকা বিক্রি হয় প্রায় ১০ কোটি কপি। এসব পত্রিকা নিউজ সার্ভিসের জন্য সাহায্য নেয় সাধারণত (এপি) তথা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস থেকে। 

শুধু আমেরিকার উল্লেখিত পত্রিকাগুলোই নয়, বিশে^র অধিকাংশ পত্রিকাগুলো নিউজ সার্ভিস পেতে উল্লেখিত অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের সাহায্য নিয়ে থাকে। আর এই অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের সাহায্য ছাড়া নিউজ প্রকাশ করা যায় না। অথচ এ অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের মালিক একজন ইহুদি। এ প্রেসের ম্যানেজিং এডিটর ও ভাইস প্রেসিডেন্ট হলো মাইকেল সিলভারম্যান। প্রতিদিন কী নিউজ প্রকাশ করতে হবে, আর কী করতে হবে না, সেটা তিনিই ঠিক করেন।

বিশ্বের অর্থনীতির একক ও অদ্বিতীয় নিয়ন্ত্রক হলো আমেরিকার বিখ্যাত পত্রিকা ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। প্রতিদিন ১৮ লাখের বেশি এটি বিতরণ হয়। পত্রিকাটির প্রকাশক ও চেয়ারম্যান হলো পিটার আর কান। যিনি ৩৩টিরও বেশি পত্রিকা ও প্রকাশনা সংস্থা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। 
আধুনিক পৃথিবীর সব খ্যাতি ইহুদি জাতির সঙ্গেই সম্পৃক্ত বলে প্রতীয়মান হয়। পৃথিবীতে মানব সমাজে ধর্মের প্রভাব শুরু থেকেই কার্যকর ছিল। তবে ধর্মের বাইরে কিছু মতবাদ আছে যা মানুষকে সাময়িকভাবে বেশ প্রভাবিত করেছিল। এসব মতবাদের মধ্যে অন্যতম হলো কমিউনিজম মতবাদ। এ কমিউনিজমের প্রবক্তা ছিলেন কার্লমার্কস, যিনি ছিলেন একজন জার্মান ইহুদি। 

আধুনিক যুগে কার্ল মার্কস একজন দার্শনিক, অর্থনীতিবিদ, ইতিহাসবেত্তা, সমাজ বিজ্ঞানী ও সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবী মহাপুরুষ হিসেবে পরিচিত। আধুনিক যুগের বিজ্ঞানের জনক বলা হয় আইনস্টাইনকে। তিনি আধুনিক পৃথিবীতে আপেক্ষিকতার তত্ত আবিষ্কারের জন্য বিখ্যাত। তিনিও একজন নোবেল বিজয়ী জার্মানি  ইহুদি। মানুষকে বোকা বানিয়ে মুগ্ধ করার অন্যতম শিল্পকর্ম হলো জাদুশিল্প, যার কারিগর ও রূপকার হলো হ্যারি হুডিনি। যিনি ছিলেন হাঙ্গেরীয় বংশোদ্ভ‚ত একজন মার্কিন জাদুশিল্পী। জাতিতে তিনি ছিলেন একজন ইহুদি। আর বর্তমানে সাড়া জাগানো জাদুকর ডেভিড কপারফিল্ডের জন্ম হয়েছে এই ইহুদি ঔরসে। 


ওআইসিভুক্ত ৫৭টি মুসলিম দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা মাত্র ৫ হাজার। আর শুধু আমেরিকাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬ হাজার। আমেরিকার উল্লেখিত বিশ্ববিদ্যালয়ে এককভাবে ইহুদি ছাত্র সংখ্যা ২০ শতাংশর বেশি। আমেরিকার নোবেল বিজয়ীদের মধ্যে এককভাবে ইহুদির সংখ্যা ৪০শতাংশ। তার মানে, প্রতি ৪ জন নোবেল বিজয়ীর মধ্যে একজন ইহুদি। 

আমেরিকার উত্তর-পূর্ব উপক‚লে ১২টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যার সব কজন ভাইস চ্যান্সেলর ইহুদি সম্প্রদায়ভুক্ত। এছাড়া আমেরিকার অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরগণ ইহুদি সম্প্রদায়ের। মুসলিম দেশগুলোর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও বিশ্ব র্র‌্যাংকিংয়ে জায়গা করে নিতে পারেনি। সেখানে এক আমেরিকাতে বিশ্ব র‌্যাংকিং-এ জায়গা করে নিয়েছে ৪৫টি বিশ্ববিদ্যালয়। যার প্রথম ১০টির মধ্যে এককভাবে সাতটিই আমেরিকার। 

পৃৃথিবীর এমন কোনো দেশ নাই যেখানে নামে বা বেনামে ইহুদিদের কর্মকান্ড নাই। এরা পৃথিবীর অতিশয় ক্ষুদ্র একটি জাতি। অথচ এ জাতিটি শুধু তাদের বুদ্ধিমত্তার জোরে সারা পৃথিবীকে শাসন ও শোষণ করে চলেছে। বিশ্বময় তারা এমন এক বলয় গড়ে তুলেছে যে, তাদের এ বলয় থেকে কারো বের হবার কোনো উপায় নেই। রাজনীতি, অর্থনীতি, মিডিয়া- সব দিক ও বিভাগ তাদের নিয়ন্ত্রণে। ব্লাড ক্যান্সারের মতো পৃথিবীর রক্তনালিতে তারা ছড়িয়ে পড়েছে। সারা দুনিয়ার সকল সংঘাতের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ নাটের গুরু এই ইহুদি জাতি।

একজন ইহুদি সন্তান জন্ম নেবার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে শেখানো হয় মুসলিমরাই তাদের শত্রু। তাকে বোঝানো হয়, বুদ্ধিমত্তা আর কৌশল দিয়েই পৃথিবীতে টিকে থাকতে হবে। জাতীয় ঐক্য ছাড়া পৃথিবীতে টিকে থাকা যাবে না। এ কারণে প্রতিটি ইহুদি নাগরিক একেকজন জ্ঞানী থেকে বিজ্ঞানীর যোগ্যতা অর্জন করেছে।

বর্তমান পৃথিবীকে কব্জা করতে সব ধরনের প্রযুক্তিগত জ্ঞান তারা অর্জন করেছে। আজ গোটা পৃথিবী অনলাইনের জালের আওতায় একটি ছোট্ট গ্রামে পরিণত হয়েছে। এর পেছনে রয়েছে ইহুদিদের আবিষ্কৃত প্রযুক্তি। এর বাইরে বিকল্প ভাবার কোনো সুযোগই এখন আর অবশিষ্ট নাই। ইহুদিদের আবিষ্কৃৃত এ জ্ঞান থেকে আমরা সামান্যই রপ্ত করে আস্ফালনে ব্যস্ত আছি। অন্যদের অবজ্ঞা ও অবহেলা করছি। এ অবজ্ঞা ও অবহেলা আমাদের জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট করছে। অথচ ইহুদিরা জ্ঞানের নতুন শাখার সংযোজনে মহা ব্যস্ত সময় পার করছে। তাদের জাতীয় ঐক্য আরো মজবুত হচ্ছে। তাদের গর্ব আর আস্ফালনের বিন্দুমাত্র ফুরসত নেই। 

মুসলিমদের মধ্যে নবীদের ওয়ারিশখ্যাত আলিমগণ এ জাতীয় যোগ্যতা থেকে যোজন যোজন দূরে অবস্থান করছে। তাদের গন্ডির চৌহদ্দি হলো ছোট্ট চার দেয়ালের মসজিদ কিংবা মাদ্রাসা! আর তাদের জ্ঞানের আস্ফালন হলো-  অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ মুস্তাহাবকেন্দ্রিক মাসআলা-মাসায়েল। তাদের জীবনোদ্দেশ্যই হলো তরিকাকেন্দ্রিক ফেরকাবাজি ও ফতোয়াবাজিতে লিপ্ত থাকা! বিশাল দুনিয়া, নিজস্ব জাতিসত্তা আর তাদের কর্তব্য থেকে তারা সম্পূর্ণ বেখবর! কথায় কথায় বিপরীত চিন্তার মুসলিমকে কাফের আখ্যা দিতে তারা বেশ তৎপর! আর অন্য ধর্মের মানুষকে ইহুদি, নাসারা, মুশরেক বলে গালি দিতে পেরেই তারা সন্তুষ্ট! 

আজকের এ প্রেক্ষাপটে ইহুদি জাতিকে ধন্যবাদ দিতেই হয় এ কারণে যে, তারা জ্ঞান আর ঐক্য দিয়ে পুরো পৃথিবীকে শাসন করছে। মধ্যপ্রাচ্যের ২৭টি রাষ্ট্রের ৩৭কোটি মুসলিমকে তারা দাসত্বে বন্দি করেছে। নিজ জাতির অস্তিত্ব রক্ষায় তারা সরব-সচেষ্ট-তৎপর রয়েছে। সুতরাং গোটা পৃথিবীর চালকের মসনদে আসীন হওয়া তাদেরই মানায়। কোনো এক অতীতে যে আসন অলংকার করেছিল আজকের এই দিশেহারা মুসলিমরা। 

(সূত্রঃ বাংলাপিডিয়া, আগামী নিউজ, বিবিসি)
লেখক:  অধ্যাপক, দা‘ওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ও নির্বাহী সদস্য (জাশিপ)
Email: dr.knzaman@gmail.com

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

লেখকদের নামঃ