গাংনীতে সেচপাম্প স্থাপনে অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১৩:৫৯

সাহস ডেস্ক

মেহেরপুরের গাংনীতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) ‘মুজিবনগর ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন প্রকল্পে’ সেচপাম্প স্থাপনে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে একই সেচ স্কিমের আওতায় একাধিক সেচপাম্প বরাদ্দের ঘটনা ঘটেছে। এতে করে সেচপাম্পের মালিকেরা প্রতিযোগিতা থেকে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়ানোর পাশাপাশি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিরোধ মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছে। গাংনী উপজেলা সেচ ও কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতি বিএডিসির কর্মকর্তাদের অনিয়মের ব্যাপারে দুদক প্রধান কার্যালয়ে অভিযোগ করেছে।

বিএডিসি ও সেবাগ্রহীতারা জানান, সেচ কার্যক্রমের সমন্বয়, দক্ষ পানি ব্যবস্থাপনা, পানির অপচয় রোধ, সেচ খরচ হ্রাস ও অংশগ্রহণমূলক পানিব্যবস্থা নিশ্চিতে ক্ষুদ্র এলাকা নিয়ে ২০২১ সালে এ সেচ স্কিম চালু হয়। নীতিমালা অনুযায়ী, একটি সেচপাম্পের সঙ্গে আরেকটির ২৭০০ ফুট (৮২৩ মিটার) দূরত্ব থাকতে হবে। একটি লো-লিফট পাম্পের (এলএলপি) আওতায় সর্বোচ্চ দুই হাজার হেক্টর (১৪ হাজার ৯৪০ বিঘা) আবাদি জমি থাকতে পারে।

পাম্পমালিকেরা বলছেন, বিএডিসির কর্মকর্তারা সেচপাম্প বরাদ্দের নীতিমালা মানেননি। ২০০ মিটারের মধ্যে একাধিক পাম্প দেওয়া হয়েছে। এতে একেকটি পাম্প ৩০০-৪০০ বিঘা জমিতে সেচ দিতে পারছে না। পাম্পমালিকেরা জানান, মাসে কমপক্ষে ১২০০-১৩০০ বিঘা জমিতে সেচ দিতে পারলে মাসিক বিদ্যুৎ বিল উঠে আসে। কাছাকাছি দূরত্বে একাধিক পাম্প দেওয়ায় বিলের টাকাই উঠছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাংনী উপজেলায় প্রকল্পের আওতায় এলএলপি রয়েছে ১২টি। এর মধ্যে ৬টি রয়েছে ৪০০ মিটারেরও কম দূরত্বের মধ্যে। এর মধ্যে মটমুড়া ইউনিয়নের মুহাম্মদপুর গ্রামেই রয়েছে চারটি, যাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। দুজন পাম্পমালিকের দ্বন্দ্ব গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত।

শনিবার বিকালে মুহাম্মদপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাথাভাঙ্গা নদী থেকে পাইপের মাধ্যমে পাম্প দিয়ে পানি টেনে আনা হচ্ছে। কংক্রিটের ট্যাংকে জমা হচ্ছে সেই পানি। ট্যাংক থেকে মাটির নিচ দিয়ে পাইপের মাধ্যমে অনেক দূর গিয়ে পাকা নালায় পৌঁছেছে। এভাবে নানা ফসলের খেতে গিয়ে পৌঁছাচ্ছে ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের পানি।

একটি সেচপাম্পের মালিক সাইদুল ইসলাম বলেন, মুহাম্মদপুর পাগলার মাঠে সেচের জন্য তিনি এলএলপি সেচপাম্প পান। এখানে একটি সেচপাম্পই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু বিএডিসির কর্মকর্তারা গোপনে আরও একজনকে একই স্কিমের আওতায় সেচপাম্প দিয়েছেন। মাত্র ২০০ মিটারের মধ্যে আরও একটি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এতে বিরোধ তৈরি হয়েছে, যা মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছে।

একই গ্রামের বাসিন্দা লিয়াকত হোসেন বলেন, কয়েকজন দালালের যোগসাজশে বিএডিসির কর্মকর্তারা কয়েকজন পাগলার মাঠে সরেজমিন প্রদর্শন করে তাকে প্রকল্প নিতে আবেদন করতে বলেন। সেই মতো তাকে এলএলপি সেচপাম্প দেন। একই স্কিমের মধ্যে দুটি প্রকল্প হবে, তা তাকে জানানো হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।

আরেকটি সেচপাম্পের মালিক আহসান হাবিব বলেন, বিএডিসির কর্মকর্তারা তার সেচপ্রকল্পের নালা তৈরিতে অনিয়ম করেছেন। বেশির ভাগ কংক্রিটের নালার নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। প্রতিবাদ করতে গেলে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।

বামন্দী ইউনিয়নের ভোলাডাঙ্গা গ্রামের ওসমান আলী ও আম্বিয়া খাতুন পাশাপাশি দুটি পাম্প পেয়েছেন। আম্বিয়া খাতুন বলেন, গ্রামের কয়েকজন দালাল সেচপাম্পের জন্য আবেদন করতে তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন। পরে আরও কয়েক দফা নগদ টাকা নেন। এখন সেচপাম্প নিয়ে পার্শ্ববর্তী সেচপাম্পের মালিক ওসমানের সঙ্গে তার বিরোধ চলছে।

উপজেলা সেচ ও কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির সভাপতি হারুন-অর রশীদ বলেন, মুজিবনগর ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন প্রকল্পে কর্মকর্তারা সেচপাম্পমালিকদের মধ্যে বিরোধ তৈরি করে দিয়েছেন। সামান্য অনৈতিক সুবিধা পেতে তারা কাছাকাছি একাধিক সেচপাম্প বসিয়েছেন।

বিএডিসি ক্ষুদ্র সেচ গাংনী কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী শ্যামল হোসেন বলেন, প্রকল্পের আওতায় যেসব এলাকায় নদ-নদী থেকে পানি ব্যবহার করে সেচ সুবিধা পাওয়া যায়, সেখানে একাধিক এলএলপি স্থাপন করা হয়েছে। যেসব মাঠে সেচের চাহিদা ব্যাপক, সেখানে অতিরিক্ত পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এখানে কোনো প্রকার অনিয়ম করা হয়নি।

জানতে চাইলে জেলা বিএডিসির সেচ প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী মাজহারুল ইসলাম বলেন, পাম্প স্থাপনে অনিয়ম হয়েছে, এমন লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন পাঁচজন সেচপাম্পমালিক। অনিয়মের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত