শৌলপাড়ায় অতিদরিদ্রদের প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশ : ০১ জুন ২০২২, ১৯:৪৭

সাহস ডেস্ক

শরীয়তপুর সদর উপজেলার শৌলপাড়া ইউনিয়নের ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় পর্যায়ের অতিদরিদ্রদের প্রকল্প কর্মসূচির (৪০ দিনের কর্মসূচি) তিনটি প্রকল্পে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তিনটি প্রকল্পে নিজস্ব শ্রমিকদের নামের তালিকা করে নামমাত্র কাজের মধ্য দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন, হামেদ রাজ ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য মেরিয়া বেগমের বিরুদ্ধে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রকল্পের শ্রমজীবী অতিদরিদ্রদের তালিকায় রয়েছে ইউপি সদস্যদের মনোনীত সচ্ছল প্রতিনিধিদের নাম। এসব কর্মসূচিতে নামমাত্র কাজ করে, শতভাগ কাজ ও শ্রমিক উপস্থিতি দেখিয়ে লুটে নেওয়া হচ্ছে প্রকল্পের লাখ লাখ টাকা।

শরিয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) অফিসের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) তথ্য মতে, সদর উপজেলার শৌলপাড়া ইউনিয়নে ২২-২৩ অর্থবছরের আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে তিনটি ওয়ার্ডে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান প্রকল্প (৪০ দিনের কর্মসূচি) ৭ মে থেকে শুরু হয়ে চলবে ২৩ জুন পর্যন্ত। কিন্তু কাজ ৭ মে থেকে শুরুর কথা থাকলেও তা শুরু করা হয় ৯ মে থেকে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের তালিকা মতে, ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কুন্দুরিয়া এলাকার নুরু সৈয়ালের বাড়ি থেকে দুলাল সর্দারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুনর্নির্মাণ কাজের ১৩ জন শ্রমিকের মজুরি ব্যয় ধরা হয় ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। কাজটির সভাপতি ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম সারেঙ্গা এলাকায় মজিদ রাজের বাড়ি থেকে সালাউদ্দিন সরদারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার নির্মাণ কাজের ১৩ জন শ্রমিকের নির্মাণ ব্যয় বরাদ্দ হয় ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। প্রকল্পটির সভাপতি ইউপি সদস্য হামেদ রাজ। একই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার কামরুল মাদবরের বাড়ি থেকে সেলিম খলিফার জমি পর্যন্ত রাস্তাটির পুনর্নির্মাণ কাজে ১৫ জন শ্রমিকের জন্য বরাদ্দ করা ব্যয় ধরা হয় ২ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা। প্রকল্পটির সভাপতি সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য মেরিয়া বেগম।

এলাকাবাসীর একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদস্য দেলোয়ার হোসেনের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাজে ১৩ জন শ্রমিকের জায়গায় ৫ জন শ্রমিক কাজ করছেন। সদস্য হামেদ রাজের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাজে ১৩ জন শ্রমিকের জায়গায় কাজ করছেন ৫ জন শ্রমিক। একইভাবে সদস্য মেরিয়া বেগমের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বেলা ১২টা ১৫ মিনিটে প্রকল্প এলাকায় গিয়ে একজন শ্রমিকও পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় কয়েকজন জানান, ৫ জন শ্রমিক কাজ করছিল। তারা আরও এক ঘণ্টা আগে চলে গেছেন।

অধিকতর যাচাইয়ের জন্য ২২ মে সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে তিনটি প্রকল্পেই পুনরায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দেলোয়ার হোসেনের প্রকল্পে কোনো শ্রমিক কাজে করছেন না। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের হামেদ রাজের প্রকল্পে  শ্রমিক পাওয়া যায় ৫ জন, এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেরিয়া বেগমের প্রকল্পের কাজে শ্রমিক পাওয়া যায় ৫ জন। তিনটি প্রকল্পের কাজে মোট ৪১ জন শ্রমিক থাকার কথা থাকলেও, কাজ করছে ১৫ জন শ্রমিক। কখনোই ৪১ শ্রমিকের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। আবার মাঝেমধ্যে কোনো প্রকল্পে একজন শ্রমিকও থাকেন না।

কিন্তু প্রতিদিনই হাজিরায় শতভাগ শ্রমিক দেখানো হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, মেম্বারদের এসব কাজের অনিয়মের কথা বললে আমাদের উপর অত্যাচার হবে। এমনিতেই আমাদের রাস্তাগুলোর বেহাল অবস্থা, তাই যতটুকু করছে তাইতো আমাদের জন্য অনেক।

শ্রমিক সংখ্যা কম ও নিম্নমানের কাজের বিষয়ে ৯ নম্বর প্রকল্প কাজের সভাপতি ইউপি সদস্য মেরিয়া বেগমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে মেরিয়া বেগমের পক্ষে তার স্বামী মনির হোসেন, সদস্য দেলোয়ার হোসেন ও হামেদ রাজ বলেন, ‘এসব প্রকল্পের কাজ এভাবেই হয়ে থাকে। আপনার নিউজ করতে মনে চায় নিউজ করে দিন। যা মনে চায় লিখে দিন। কোনো সমস্যা নেই। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও), প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ (পিআইও) সকলেই অবগত আছে।’

শৌলপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান খান ভাষানী বলেন, ‘প্রতিটি প্রকল্পের কাজের সভাপতি স্থানীয় ইউপি সদস্যরা। তবে স্থানীয়ভাবে কয়েকজনের কাছে কাজের অনিয়মের কথা শুনেছি, আপনাদের কাছেও শুনলাম। এসব কাজের দায়দায়িত্ব প্রকল্প সভাপতিদের। তারপরও সরেজমিনে গিয়ে খোঁজ নেব, যদি কোনো অনিয়ম পাওয়া যায়, তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলব।’

সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের জনবল সংকটের কারণে প্রতিদিন প্রকল্পগুলো পরিদর্শন করা সম্ভব হয় না। তবে মাঝেমধ্যে পরিদর্শনে যাওয়া হয়। যেসব প্রকল্পে দুর্নীতি কিংবা অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাবে, তাদের টাকা কাটা হবে। প্রকল্পের কাজে অনিয়মের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মনদীপ ঘরাই বলেন, ‘কর্মসূচির অনিয়মের বিষয়ে নির্বাহী অফিসার কোনো বিষয়ে অবগত নই। যদি কোনো প্রকল্পের কাজে অনিয়ম হয়ে থাকে এবং প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিল আটকে দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় সমস্ত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত