টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

নিজেদের রেকর্ড ভেঙে হারল বাংলাদেশ

প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২২, ১৯:৩১

সাহস ডেস্ক

ম্যাচ শুরুর আগের দিন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলেছিলেন, পয়েন্ট ভাগাভাগি করে বিশ্বকাপ শুরু করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, এতে কিছুটা চাপে রয়েছে তারা। সেই চাপকে কাজে লাগিয়ে জয় বাগিয়ে নিয়ে মাঠ ছাড়তে চান সাকিব, কিন্তু বৃহস্পতিবার সিডনিতে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। ব্যাট হাতে বাংলাদেশ বোলারদের রিতিমতো তুলোধুনো করেছেন কুইনটন ডি কক ও রাইলি রুশো। বিস্ফোরক সেঞ্চুরি করেন রাইলি রুশোর ও ঝড়ো ফিফটি করেন কুইন্টেন ডি কক। তাদের বিশাল জুটিতে দুইশো ছাড়িয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। বোলিংয়ের মতো ব্যাটিংয়েও অসহায়ত্ব ধরে রাখে সাকিবের দল। শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং ব্যর্থতায় নিজেদের রেকর্ড ভেঙে হারল বাংলাদেশ। রানের হিসেবে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যবধানে হার এটি। এর আগে করাচিতে ২০০৮ সালে ২০৩ রান তাড়ায় ১০১ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। এতদিন রানের হিসেবে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ হারের ব্যবধান ছিল সেটিই-১০২ রান। আর রানের হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয়।

বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) সিডনিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১০৪ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। এদিন টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে রাইলি রুশোর বিস্ফোরক সেঞ্চুরি ও কুইনটন ডি ককের ঝড়ো ফিফটিতে ২০৫ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাবে ১৬.৩ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে মাত্র ১০১ তুলতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। এ ম্যাচশেষে দক্ষিণ আফ্রিকার রানরেট এখন ৫.২০০! ২ ম্যাচে ১ জয় পাওয়া বাংলাদেশের রান রেট -২.৩৭৫।

পাহাড় ডিঙানোর ভীষণ কঠিন চ্যালেঞ্জে নেমে প্রথম ওভারেই উড়ন্ত শুরু চলে এসেছিল। কাগিসো রাবাদার বলে বাউন্ডারি মেরে সৌম্য সরকারকে স্ট্রাইক দেন নাজমুল হোসেন শান্ত। পরপর দুটি ছক্কা মেরেছিলেন সৌম্য সরকার। দারুণ দুটি ফ্লিকে টাইমিং ছিল অসাধারণ। এতে প্রথম ওভারে উঠেছিল ১৭ রান। এরপর তাদেরকে আর টিকতে দেননি পোট্রিয়া বোলাররা। তৃতীয় ওভারে আনরিখ নর্কিয়ার প্রথম ৪ বলের মধ্যে ফিরে গেছেন দুই ওপেনার, প্রথম ১০ বলের মধ্যে ফিরে গেছেন সাকিবও। শান্ত ৯, সৌম্য সরকার ২ ছক্কায় ১৫ ও সাকিব ১ রানে ফিরে যান। বাংলাদেশ সেই যে পথ হারিয়েছে, আর খুঁজে পায়নি। শেষের দিকে তাসকিনকে (১০) বোল্ড করে নিজের চতুর্থ উইকেট তুলে নেন পোট্রিয়া পেসার নর্কিয়া। পোট্রিয়াদের হয়ে ৩টি উইকেট নিয়েছেন স্পিনার তাব্রেইজ শামসি। শুধু লিটন দাসের ব্যাট থেকে আসে ৩৪ রান। ৩১ বল খেলে ১ চার ১ ছক্কা মারেন তিনি। লিটন দাসকে ফেরান শামসি। উইকেটে আর কেউ থিতু হয়ে থাকতে পারেনি। অবশেষে ১০১ রানে গুটিয়ে যায় সাকিবের দল। এতে ১০৪ রানের সর্বোচ্চ হারের রেকর্ড গড়ল বাংলাদেশ।

এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নামা প্রোটিয়াদের ইনিংস জুড়েই ছিল চার-ছক্কার গল্প। তবে প্রথম ওভারের শেষ বলে টেম্বা বাভুমাকে তুলে নিয়ে ভালো শুরুর আভাস দিয়েছিল তাসকিন আহমেদ। অফ স্টাম্পের বাইরে তাসকিনের অসাধারণ এক লেংথ বলে খোঁচা মেরে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন পোট্রিয়া অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। এরপর টাইগার বোলিং লাইন এলোমেলো করে দিলেন ডি কক ও রুশো। দ্বিতীয় উইকেটে মাত্র ৮৫ বলে ১৬৮ রানের রেকর্ড জুটি গড়েন তারা। এই দুজনের সামনে বাংলাদেশের কোন বোলারই দাঁড়াতে পারেননি। তাসকিন প্রথম ওভারে ২ রান দিয়ে এক উইকেট পেলেও পরের ওভার থেকেই ছিলেন খরুচে। ৩টি নো বলও করেন তিনি। তিন ওভার করে রান দিয়েছেন ৪৬, উইকেট নিয়েছেন ১টি। সাকিব তার প্রথম ওভারেই দিয়ে ফেলেছিলেন ২১ রান। বাকি সবার খরুচে দিনে বরং ভাল বল করেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। ৪ ওভার করে দেন ২৫ রান। ১০ ওভারের পর দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ছিল ৯১ রান। ১৫ ওভার শেষে সেটা হয়ে যায় ১৭১ রান। শেষের ৫ ওভারে আবার ঘুরে দাঁড়িয়ে ৩৪ রান দেয় বাংলাদেশ। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। দুশো রানের উপর পুঁজি করে ফেলে দক্ষিণ আফ্রিকা। বিরতিতেই যেন বড় হারের শঙ্কা দেখছিল বাংলাদেশ।

এর মধ্যে আবার বৃষ্টি! ষষ্ঠ ওভার করতে এসেছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান, প্রথম দুই বলে এসেছিল দুটি সিঙ্গেল। এরপরই আবার নেমেছে বৃষ্টি। খেলা বন্ধ করে দেন আম্পায়াররা। ম্যাচের শুরুর আগেও নেমেছিল বৃষ্টি, তবে টস হয়েছিল নির্ধারিত সময়েই। খেলা শুরুর আগে আবার বৃষ্টি নামলেও খেলাও শুরু হয় নির্ধারিত সময়ে। তবে পাওয়ার প্লে শেষ না হতেই আবার বৃষ্টি। প্রায় ১৭ মিনিট বন্ধ থাকার পর আবার শুরু হয়েছে খেলা। তবে ওভার কাটা যায়নি কোনো। পাওয়ার প্লে-র শেষ ওভারে এসে মোস্তাফিজ দিয়েছেন ৫ রান। প্রথম ৬ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকা ৬৩ রান তুলেছে ১ উইকেটে। এ বছর পাওয়ার প্লে-তে দক্ষিণ আফ্রিকার এটি সর্বোচ্চ স্কোর। পাওয়ার প্লে-র শেষে মোস্তাফিজের ওভার থেকে বৃষ্টি-বিরতি-একটু ছন্দপতন হয়েছিল ডি কক ও রুশোর। পরের ৩ ওভারে এসেছিল ১৬ রান। দশম ওভারে মোস্তাফিজকে ফিরিয়েছেন সাকিব। এসেছে চারটি সিঙ্গেল, এর একটি দিয়ে ফিফটি হয়ে যায় রুশোর। ১০ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ১ উইকেটে ৯১ রান। রুশো বা ডি কক দুজনের কেউই থামেননি। ডি কক পেরিয়ে গেছেন ফিফটি। সেঞ্চুরির কাছাকাছি রুশো। তবে ৮৮ রানে দাঁড়িয়ে ক্যাচ তুলেছিলেন রুশো, কিন্তু থার্ডম্যানে ছুটে এসে নাগাল পেলেও নিতে পারেননি হাসান। ১৪ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার ১৬৫/১।

অবশেষে ব্রেকথ্রু, তবে এর আগে রেকর্ড জুটি গড়ে ফেলেন ডি কক ও রুশো। ১৫তম ওভার করতে আসেন আফিফ হোসেন। এসেই সফল হয়েছেন। ওই ওভারের তৃতীয় বলে তুলে মারতে গিয়ে লং অফে ক্যাচ দিয়েছেন কুইন্টন ডি কক। ফেরার আগে ৩৮ বলে ৭ চার ৩ ছক্কায় ৬৩ রান করেন ডি কক। আউট হওয়ার আগে রুশোর সঙ্গে তার জুটিতে উঠেছে ১৬৩ রান। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যে কোনো দলের যে কোনো উইকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি এটি। দক্ষিণ আফ্রিকার যে কোনো উইকেটে তৃতীয় সর্বোচ্চ জুটি। ডি কক ফেরার পর মাত্র ১০ রানের মাথায় ফেরেন ট্রিস্টান স্টাবস। প্রথম ওভারে ২১ রান দেয়ার পর দ্বিতীয় ওভারে সফল হলেন সাকিব। ওভারের প্রথম বলে হাঁটু গেঁড়ে মারেন ট্রিস্টান স্টাবস, বল উঠেছিল বেশ। তবে ডিপ মিডউইকেটে ধরা পড়েন তিনি। ১৮০ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

কাইলি রুশোর সেঞ্চুরি উদযাপন।

এরপরই রুশোর সেঞ্চুরি। অফ সাইডে খেলে সিঙ্গেল নিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন রাইলি রুশো। সেঞ্চুরি করতে বল খেলেছেন ৫২টি। এটি তার টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। বিশ্বকাপে কোনো দক্ষিণ আফ্রিকানের এটি প্রথম সেঞ্চুরি। ডেভিড মিলারের পর দ্বিতীয় দক্ষিণ আফ্রিকান ও সব মিলিয়ে ১৭তম ব্যাটার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে একাধিক সেঞ্চুরি পেলেন রুশো। ভারতের বিপক্ষে ইন্দোরে পেয়েছিলেন প্রথম সেঞ্চুরিটি। সে হিসেবে টানা দুটি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ইনিংসে সেঞ্চুরি পেলেন এ বাঁহাতি। সবচেয়ে বেশি ৪টি সেঞ্চুরি রোহিত শর্মার। ৩টি করে সেঞ্চুরি আছে তিন জনের-সাবাউন দাভিজি, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও কলিন মানরোর।

অবশেষে রুশোকে থামালেন সাকিব। প্রথম ওভারের শেষ বলে বাভুমা ফেরার পর নেমেছিলেন রুশো। আউট হলেন গিয়ে ১৯তম ওভারে। সাকিবের করা তৃতীয় বল তুলে মারতে গিয়ে মিসটাইমিংয়ে কাভারে ক্যাচ তুলে দেন রুশো। ফেরার আগে ৫৬ বলে ৭ চার ও ৮টি ছক্কায় ১০৯ রানের ইনিংস খেলেন এ বাঁহাতি ব্যাটার। এরপর শেষ ওভারে হাসানের ব্যাক অব দ্য হ্যান্ড স্লোয়ারে ক্যাচ তুলেছেন এইডেন মার্করাম। শেষ ওভারে উঠেছে ১২ রান। শেষ ৫ ওভারে উঠেছে ২৯ রান। ২০ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকা তুলেছে ৫ উইকেটে ২০৫ রান।

বাংলাদেশের হয়ে সাকিব আল হাসান নিয়েছেন ২টি উইকেট। এছাড়া তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ ও আফিফ হোসেন নিয়েছেন ১টি করে উইকেট। ম্যাচ সেরা হয়েছেন কাইলি রুশো।

বাংলাদেশ একাদশ:
সৌম্য সরকার, নাজমুল হোসেন, লিটন দাস, সাকিব আল হাসান, আফিফ হোসেন, নুরুল হাসান, মোসাদ্দেক হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ ও মোস্তাফিজুর রহমান। 

দক্ষিণ আফ্রিকা একাদশ:
টেম্বা বাভুমা, কুইন্টন ডি কক, রাইলি রুশো, এইডেন মার্করাম, ডেভিড মিলার, ট্রিস্টান স্টাবস, ওয়েইন পারনেল, কেশব মহারাজ, কাগিসো রাবাদা, আনরিখ নর্কিয়া, তাব্রেইজ শামসি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত