পাঁচ ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি

মোস্তাফিজের ওভারেই বাংলাদেশের নাটকীয় জয়

প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৯:৪৬

শেষ ওভারে নিউজিল্যান্ডের দরকার ২০ রান। ব্যাটে ছিলেন ম্যাককনচি ও টম লাথাম। শেষ ওভারটি করতে আসলেন কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান। প্রথম বলে ম্যাকনকি ক্যাচ দিয়েছিলেন। কিন্তু মিডউইকেটে ফিল্ডার শামিমের একটু সামনে পড়ায় বল ধরতে পারেননি। হলো মিসফিল্ডিং, তাতে হলো ৩ রান। দ্বিতীয় বলে লং অফে ১ রান নিল লাথাম। তৃতীয় বলে ২ রান নিলেন ম্যাককনচি। চতুর্থ বলে ১ রান নিয়ে স্ট্রাইকে দিলেন লাথামকে।

তখন ২ বলে নিউজিল্যান্ডের দরকার ১৩ রান। এমন সময় বিমার মারলেন মোস্তাফিজ! মাথার ওপর দিয়েই ভেসে যেতে থাকা বলে ব্যাট লাগিয়ে দিলেন লাথাম। উইকেটের পেছন দিয়ে হয়ে গেলো বাউন্ডারি! একই সাথে হলো নো বলও, এই শূন্য বলে ৫ রান পেলো কিউইরা। এরপর ফ্রি-হিটও পেলো কিউইরা। ফ্রি-হিটে লেগ সাইডে ঠেলে দিয়ে লাথাম নিলেন আরও দুই রান। শেষ বলে নিউজিল্যান্ডের দরকার ৬ রান। শেষ বলটি জোরের ওপর অফ স্টাম্পের বাইরে ফুল লেংথে বল করলেন মোস্তাফিজ। কিন্তু লাথাম নিতে পারলেন মাত্র ১ রান। অবশেষে ৪ রানের নাটকীয় জয় পেলো বাংলাদেশ।

শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ৪ রানে হারিয়ে টানা জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে ৫ ম্যাচ সিরিজের ২-০তে এগিয়ে গেলো টাইগাররা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১২ বারের দেখায় ১০ ম্যাচ পর টানা ২ ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের দেওয়া ১৪২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৩৭ রান সংগ্রহ করতে পেরেছে নিউজিল্যান্ড।

এদিন ওপেনিংয়ে নামেন টম ব্লান্ডেল ও রচিন রবীন্দ্র। প্রথম ২ ওভারে ১০ রান তোলেন তারা। এরপর তৃতীয় ওভারে সাকিবরে প্রথম বলে মাথার উপর দিয়ে ছক্কা মারেন রবীন্দ্র। পরের বলে ডট দিয়ে পরের বলেই বোল্ড। তৃতীয় বলটি মারতে গিয়ে বল ব্যাট প্যাডে লেগে রবীন্দ্র হন বোল্ড। ফেরার আগে ৯ বলে ১ ছক্কায় ১০ রান করেন রচিন রবীন্দ্র। তার পরে নামেন অধিনায়ক টম লাথাম।

এরপর মেহেদী হাসানের আঘাত। চতুর্থ ওভারের মেহেদীর প্রথম বলে এগিয়ে এসে স্টাম্পড হলেন টম ব্লান্ডেল। ৮ বলে ১ চারে ৬ রান করে ফেরেন ব্লান্ডেল। তার পরে নামেন উইলি ইয়ং।

পরে পাওয়ার প্লে শেষে ২ উইকেটে ২৮ রান তোলে নিউজিল্যান্ড। পরে লাথাম ও ইয়ং মিলে ৪৩ রানের একটি জুটি বাঁধেন। ১০ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ড সংগ্রহ করে ২ উইকেটে ৫৭ রান। শেষ ১০ ওভারে নিউজিল্যান্ডের দরকার ৮৫ রান। হাতে উইকেট ৮টি। এমন সময় ১১তম ওভারটি করতে আসেন সাকিব। এই ওভারের শেষ বলে সাকিব দিলেন ব্রেক থ্রু। অফস্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে থার্ডম্যানে ধরা পড়েছেন ইয়াং। এতেই ৪৩ রানের জুটি ভেঙে যায়। ২৮ বলে ৩ চারে ২২ রান করে ফেরেন উইলি ইয়ং। তখন ১১ ওভার শেষে ৩ উইকেট হারিয়ে কিউইদের ৬১ রান।

এরপর নামেন কলিং ডি গ্রান্ডহোম। কিন্তু ১৩তম ওভারে রিভিউ নিয়ে বাঁচলেন লাথাম। দ্বিতীয় বলেই উইকেট পেয়ে যাচ্ছিলেন মোস্তাফিজ! তার দারুণ কাটারে পরাস্ত লাথামের বিরুদ্ধে এলবিডব্লুর আবেদন উঠল, আম্পায়ার আঙুলও তুলে দিলেন। কিন্তু ল্যাথাম রিভিউ নিলেন। বল-ট্র্যাকিংয়ে দেখা গেল, বল লেগ স্টাম্পকে পাশ কাটিয়ে চলে যেত। বেঁচে গেলেন লাথাম। ওই ওভারে মোস্তাফিজ দিলেন মাত্র ৩ রান।

এরপর নাসুমের আঘাত। ওভার প্রতি প্রয়োজন সাড়ে নয় করে। দেখে শুনে খেলার সময় নেই। প্রয়োজন বড় শট। আর সেই চেষ্টাতেই নাসুমের বলে ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে সীমানায় মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম। ফেরার আগে ১০ বলে ৮ রান করেন ডি গ্র্যান্ডহোম।

জয়ের জন্য শেষ ৫ ওভারে দরকার ৫৪ রান। ক্রিজে টম ল্যাথামের সঙ্গী হেনরি নিকোলস। বলে আসলেন মেহেদী। এসেই দ্রুত ফেরালেন নিকোলাসকে।

নিজের শেষ ওভারে বল করতে এসেই মেহেদী হজম করলেন বাউন্ডারি। পরের বলটি ডট দিয়ে তৃতীয় বলে ফিরিয়ে দিলেন হেনরি নিকোলসকে। মেহেদীর বল সুইপ করতে গিয়ে লং লেগে আস্থার সঙ্গে ক্যাচ মুঠোয় জমান মুশফিকুর রহিম। ফেরার আগে ৫ বলে ১ চারে ৬ রান করেন নিকোলস। এরপর নামেন কোল ম্যাককনচি।

এরপর লাথামের হাফসেঞ্চুরি। শুরু থেকেই দলের বিপদে হাল ধরেছেন লাথাম। তিন নাম্বারে নেমে খেলেছেন শেষ অব্দি। প্রমোশন নিয়ে নেমেছেন তিনে। অন্য প্রান্তে দেখছেন একের পর এক সঙ্গীর বিদায়। তবুও খেলে চলেছেন আস্থার সঙ্গে। ৩৮ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে টম লাথাম বাঁচিয়ে রেখেছেন নিউজিল্যান্ডের আশা। ৪টি চার ও একটি ছক্কায় সিরিজে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে হাফসেঞ্চুরিটি স্পর্শ করেন বাঁহাতি কিপার-ব্যাটসম্যান ও অধিনায়ক টম লাথাম।

১৮ ওভারে শেষে নিউজিল্যান্ডের ৫ উইকেটে ১১৪ রান। জয়ের জন্য শেষ ২ ওভারে সফরকারীদের প্রয়োজন ২৮ রান। এমন সময় নিউজিল্যান্ডের আশা হয়ে টিকে থাকা টম লাথামকে ফেরানোর একটা সুযোগ হাতছাড়া করলেন উইকেট নুরুল হাসান। দুই রান নেওয়ার সময় ফিরতে পারেননি কিউই অধিনায়ক। কিন্তু বল গ্লাভসে আসার আগেই বেল ফেলে দেন সোহান। এতে নট আউট থেকে যায় লাথাম। সে সময় ৫৭ রানে ছিলেন তিনি।

১৯ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের ৫ উইকেটে ১২২ রান। জয়ের জন্য শেষ ওভারে দরকার ২০ রান। শেষ ওভারটি করতে আসলেন কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান। প্রথম বলে ম্যাককনচি ক্যাচ দিয়েছিলেন। কিন্তু মিডউইকেটে ফিল্ডার শামিমের একটু সামনে পড়ায় বল ধরতে পারেননি। হলো মিসফিল্ডিং, তাতে হলো ৩ রান। দ্বিতীয় বলে লং অফে ১ রান নিল লাথাম। তৃতীয় বলে ২ রান নিলেন ম্যাককনচি। চতুর্থ বলে ১ রান নিয়ে স্ট্রাইকে দিলেন লাথামকে।

তখন ২ বলে নিউজিল্যান্ডের দরকার ১৩ রান। এমন সময় বিমার মারলেন মোস্তাফিজ! মাথার ওপর দিয়েই ভেসে যেতে থাকা বলে ব্যাট লাগিয়ে দিলেন লাথাম। উইকেটের পেছন দিয়ে হয়ে গেলো বাউন্ডারি! একই সাথে হলো নো বলও, এই শূন্য বলে ৫ রান পেলো কিউইরা। এরপর ফ্রি-হিটও পেলো কিউইরা। ফ্রি-হিটে লেগ সাইডে ঠেলে দিয়ে লাথাম নিলেন আরও দুই রান। শেষ বলে নিউজিল্যান্ডের দরকার ৬ রান। শেষ বলটি জোরের ওপর অফ স্টাম্পের বাইরে ফুল লেংথে বল করলেন মোস্তাফিজ। কিন্তু লাথাম নিতে পারলেন মাত্র ১ রান। অবশেষে ৪ রানের নাটকীয় জয় পেলো বাংলাদেশ। ৪৯ বলে ৬ চার ১ ছক্কায় ৬৫ রান করে অপরাজিত থেকে গেলেন অধিনায়ক টম লাথাম এবং ১২ বলে ১৫ রান নিয়ে অপরাজিত থেকে গেলেন কোল ম্যাককনচি।

টাইগারদের হয়ে সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান ২টি করে এবং নাসুম আহমেদ ১টি উইকেট নেন।

এর আগে টসে জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে টাইগার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে নিউজিল্যান্ডকে ১৪১ রান সংগ্রহ করেছে টাইগাররা।

ব্যাট হাতে ওপেনিংয়ে নামেন মোহাম্মদ নাঈম ও লিটন দাস। নেমেই শূন্যতে বাঁচলেন লিটন। দ্বিতীয় ওভারে কোল ম্যাককনচির বলে স্কয়ার লেগে সহজ ক্যাচ দিয়েও বেঁচে গেছেন ডানহাতি এই ওপেনার। আগের ম্যাচে মাত্র ১ রান করেছিলেন সৌম্য সরকারের যায়গায় সুযোগ পাওয়া লিটন দাস। ২ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর বিনা উইকেটে ৬। পরে তৃতীয় ওভারে এজাজ প্যাটেলকে টানা দুই বাউন্ডারি মারেন লিটন দাস। ৩ ওভার শেষে বাংলাদেশে সংগ্রহ ১৫ রান।

পাওয়ার প্লের প্রথম ৬ ওভার শেষে বিনা উইকেটে ৩৬ রান সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের মন্থর উইকেটে বল থেমে আসায় সহজাত ব্যাটিংটা করতে পারছেন না দুই ওপেনার লিটন (১৮ বলে ২০*) ও নাঈম (১৭ বলে ১৫*)।

এরপর ১০মত ওভারে এসে প্রথম ছক্কার দেখা পেল বাংলাদেশ। স্পিনার রচিন রবীন্দ্রকে মিডউইকেট দিয়ে ছক্কা মারেন লিটন দাস। তবে শেষ হাসি হাসলেন রাচিনই। এক বল পরই বোল্ড করলেন লিটনকে। অফ স্টাম্পের বাইরে বেরিয়ে যাওয়া বল অফে সরে খেলতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে বল আঘাত হানে স্টাম্পে। এতে লিটন দাস বোল্ড হয়ে ফেরেন। ফেরার আগে ২৯ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৩৩ রান করেন তিনি। তারই সাথে ৫৭ বল স্থায়ী ৫৯ রানের জুটিও ভেঙে যায়।

এরপর নামেন মুশফিকুর রহিম। নেমেই আউট। একই ওভারে অর্থাৎ ১০তম ওভারে রচিন রবীন্দ্রার চতুর্থ বলে বলে স্ট্যাম্পিং হয়ে ফেরেন মুশফিক। তার পরেই নামেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু তিনিও বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারলেন না। ১১তম ওভারে ম্যাককনচিকে দুটি চার মারেন সাকিব। তবে শেষ বলে ছক্কা মারতে গিয়ে বল লং অফে জেগে যায়। ক্যাচ ধরতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন বেন সিয়ার্স। ভাগ্যভালো তার, হাত থেকে ফস্কে গেলেও মাটিতে পড়েনি বল। পায়ে লেগে শূন্যতে থাকতেই কোনোমতে মুঠোয় জমান সিয়ার্স। ৭ বলে ২ চারে ১২ রান করে ফেরেন সাকিব আল হাসান। ১১ ওভারে তখন বাংলাদেশের স্কোর ৩ উইকেটে ৭২।

এরপর নামেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তার সাথে ক্রিজে ছিলেন ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম। ১৬তম ওভারে নাঈমকে ফেরালেন রাচিন রবীন্দ্র। তার বলে লং অন দিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে লাইনে টম ব্লান্ডেলের হাতে ধরা পরেন বাঁহাতি ওপেনার। ফেরার আগে ৩৯ বলে ৩ চারে ৩৯ রান করেন নাঈম।

এরপর নামেন আফিফ হোসেন। তিনি নেমেই দ্রুত ফিরে গেলেন। এজাজ প্যাটেলের বলে লং অনে কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন তিনি। ফেরার আগে মাত্র ৩ রান করেন আফিফ।

এরপর নির্ধারিত ওভারের শেষ বলে আউট নুরুল হাসান। শেষ বলে বাউন্ডারি মারতে গিয়ে জাগিয়ে দেন নুরুল। কিন্তু বল ৩০ গজের মধ্যেই আটকে থাকল। অনেক দূর দৌড়ে এসে দুর্দান্ত এক ক্যাচ ধরেছেন উইল ইয়ং। ফেরার আগে ৯ বলে ১৩ রান করেন নুরুল হাসান। এদিকে ৩২ বলে ৩৭ রান করে অপরাজিত থাকেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। অবশেষে ১৪১ রানে থেমে যায় বাংলাদেশ।

কিউইদের হয়ে রাচিন রবীন্দ্র ৩টি এবং এজাজ প্যাটেল, ম্যাককনচি ও হামিস বেননেট ১টি করে উইকেট নেন।

ম্যাচ সেরা হয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত