রেফারির কথায় খেলার মধ্যে মাঠ ছাড়লেন নেইমরারা

প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২০, ১৭:৪৫

সাহস ডেস্ক

শেষ ষোলোতে যেতে হলে দুই দলকেই জিততে হবে, এমন সমীকরণ নিয়ে গতকাল মাঠে নেমেছিল প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি) ও ইস্তাম্বুল বাশাকশেহির। দু’দলেরই সমান ম্যাচে ৯ করে সমান পয়েন্ট।  এমনই সময়ে পিএসজি-বাশাকশেহিরের ম্যাচটা মাঠে গড়ানোর ১৪ মিনিটে বন্ধ হয়ে যায়। কারণ বর্ণবাদের অভিযোগ তুলে মাঠ ছেড়েছেন ইস্তানবুল বাশাকশেহিরের খেলোয়াড়রা। তাদের সঙ্গে মাঠ ছাড়লেন পিএসজির নেইমার-এমবাপ্পেরাও। ম্যাচ তখনো গোলশূন্য ছিল।

মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর)  রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে ঘরের মাঠ পার্ক দেস প্রিন্সেসে বাশাকশেহিরের পিবক্ষে মাঠে নামেন নেইমরা-এমবাপ্পেরা। তবে আজ বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে একই মাঠে ১৪তম মিনিট থেকেই খেলা শুরু হবে, তবে রেফারি থাকবেন ভিন্ন।

এদিন ম্যাচের চতুর্দশ মিনিটে টাচলাইনে দাঁড়িয়ে তর্ক করায় তুরস্কের দলটির সহকারী কোচ পিঁয়েরে ওয়েবোকে লাল কার্ড দেখান চতুর্থ রেফারি।

লাল কার্ড দেখার পর চতুর্থ রেফারির বিরুদ্ধে বর্ণবাদের অভিযোগ তোলেন কামেরুনের সাবেক স্ট্রাইকার ওয়েবো। তার সঙ্গে সুর মেলান সফরকারীদের অন্য স্টাফ ও খেলোয়াড়রা। ফলে উত্তপ্ত হয়ে উঠে মাঠ। পরিস্থিতি সামাল দিতে দুই দলের প্রধান কোচ আসরে নামলেও কাজ হয়নি।  

আলোচনায় সমাধান না মিললে রোমানিয়ান চতুর্থ রেফারি সেবাস্তিয়ান কোলেসকুকে গালাগাল দিতে দিতে মাঠ ছাড়েন বাসাকসেহিরের খেলোয়াড়রা। কিছুক্ষণ পর মাঠ ছাড়েন নেইমার-এমবাপ্পেরাও।  পরে ম্যাচটি স্থগিত করা হয়। এবং নেইমরা-এমবাপ্পেরা জানান, ওই রেফারি ম্যাচের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলে খেলবেন না তারা।

ইস্তানবুল অবশ্য সেবাস্তিয়ান কোলেসকুর বদলে ডাচ রেফারি ওভিদিউ হেইগেনকে দিয়ে ম্যাচ পরিচালনার অনুরোধ জানিয়েছিল। কারণ তাদের অভিযোগ, ওয়েবোকে 'নিগ্রো' বলে ডেকেছিলেন কোলেসকু। পরে ওয়েবো বলেন, ‘আমরা একটি ফাউলের বিরোধিতা করছিলাম। বেঞ্চে আমরা চার বা পাঁচজন ছিলাম এবং চতুর্থ রেফারি বলেন, “ওই কালো লোকটাকে বের করো”। এটা অবিশ্বাস্য ঘটনা।’

সে সময়ে বাশাকশেহিরের বেঞ্চে থাকা সেনেগালিজ স্ট্রাইকার ডেম্বা বা রেফারির কাছে কৈফিয়ত চান। টিভিতে শোনা যায়, তিনি ইংরেজিতে বলছেন, ‘আপনি যখন কোনো ফরসা ব্যক্তিকে ডাকেন, তখন তো বলেন না “ওই যে সাদা লোকটা”। আপনি তখন বলেন, “ওই লোকটা।” তাহলে কালো ব্যক্তির ক্ষেত্রে কেন “কালো লোকটা” বলছেন?’ কোলতেসকু তখন বলেন, ‘আমরা একে অন্যের সঙ্গে রোমানিয়ান ভাষায় কথা বলছিলাম।’

বাশাকশেহিরের খেলোয়াড়েরা তো প্রতিবাদ করেনই, পিএসজির খেলোয়াড়েরাও প্রতিবাদ করেন ঘৃণিত এই কথার। কিলিয়ান এমবাপ্পে তখন বলেন, ‘চতুর্থ রেফারি যদি এটা বলে থাকেন, তাহলে তাঁকে সরে যেতে হবে।’ 

পিএসজি ডিফেন্ডার প্রেসনেল কিমপেম্বে জানিয়ে দেন, ‘তিনি সত্যিই এটা বলেছেন? তাহলে আর কথা নয়! আমরা ড্রেসিংরুমে চলে যাচ্ছি।’ মিনিট দশেক বচসার পর দুই দলের খেলোয়াড়েরা মাঠ ছেড়ে যান।

স্প্যানিশ দৈনিক এএস জানাচ্ছে, এ নিয়ে রেফারি ও দুই দলের মধ্যে যখন পরিস্থিতি শান্ত করে খেলা মাঠে ফেরানোর চেষ্টা চলছে, তখন নেইমার ও এমবাপ্পে যান রেফারির কাছে। নেইমার সোজা জানিয়ে দেন, ‘আমরা এই রেফারির অধীনে খেলব না।’ এমবাপ্পেও তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন, ‘এই চেহারাটা সরে না যাওয়া পর্যন্ত আমরা খেলব না।’

উয়েফার নিয়মে সাধারণত কোনো ক্লাব খেলতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের ৩-০ গোলে হার মেনে ম্যাচ পরিত্যক্ত করতে হয়, ওই ক্লাবকে ২ লাখ ৫০ হাজার ইউরো জরিমানাও করতে হয়। কিন্তু কালকের ঘটনাটা অন্য রকম।

উয়েফা জানিয়েছে, ‘অনন্য একটা সিদ্ধান্তে বুধবার (আজ) ভিন্ন এক দল রেফারির অধীনে ম্যাচটার বাকি থাকা সময় খেলা হবে।’ এ ঘটনায় তদন্ত করা হবে বলেও বিবৃতিতে জানিয়েছে উয়েফা।

মাঠের ঘটনা অবশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি। নেইমার টুইট করেছেন, ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার।’ এমবাপ্পের টুইট, ‘বর্ণবাদকে “না” বলুন। মি. ওয়েবো, আমরা আপনার পাশে আছি।’ উয়েফার বর্ণবাদবিরোধী স্লোগানের লোগোর ছবি দিয়ে ‘বর্ণবাদকে “না” বলুন’ টুইট করেছে বাশাকশেহির। সেটি রিটুইট করেছে পিএসজিও।

বাশাকশেহিরের সভাপতি গোকসেল গুমুসদাগ তুর্কি চ্যানেল টিআরটি স্পোরে বলেছেন, ‘চতুর্থ রেফারি সবার সামনে “নিগ্রো” শব্দটা ব্যবহার করেছে। মাঠ থেকে এই রেফারিকে সরানো হলেই কেবল আমরা মাঠে নামব।’

ম্যাচটা কাল হচ্ছিল জার্মানিতে লাইপজিগ-ইউনাইটেড ম্যাচের সঙ্গে একই সময়ে। ম্যাচটা না হওয়ায় পিএসজির এখন সুবিধাই হলো, লাইপজিগের মাঠে ইউনাইটেড ৩-২ গোলে হেরে যাওয়ায় লাইপজিগ ও পিএসজির শেষ ষোলোতে ওঠা নিশ্চিত হয়ে গেছে। পিএসজি আজ হেরে গেলেও তাই সমস্যা থাকছে না, মুখোমুখি লড়াইয়ে ইউনাইটেডের চেয়ে এগিয়ে থাকায় তারাই উঠবে শেষ ষোলোতে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত