ঢাবি ছাত্র হাফিজুরের মৃত্যুর তদন্তের মধ্যে বেড়িয়ে এলো এলএসডি মাদক

প্রকাশ : ২৭ মে ২০২১, ১৯:০৩

সাহস ডেস্ক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমানের ‘আত্মহত্যা’র কারণ খুঁজে বের করতে তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ। এই তদন্তের মধ্যে রাজধানীর একটি বাসা থেকে লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইথ্যালামাইড বা এলএসডি নামে এক প্রকারের মাদক জব্দ করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের রমনা বিভাগ। আর হাফিজুরের ‘নিজেকে শেষ করে দেয়া’র সঙ্গে এই মাদকের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। যদিও এখনই সরাসরি কিছু বলছেন না তারা।

বৃহস্পতিবার (২৭ মে) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার ওই এলএসডি মাদক জব্দ এবং হাফিজুরের মৃত্যু প্রসঙ্গে কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঢাকার বেশ কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণ ভয়ঙ্কর মাদক এলএসডি ও গাঁজা পাতার নির্যাস দিয়ে তৈরি কেক বিক্রি করছিলেন। গ্রাহকদের কাছে পৌঁছাতে এজন্য তারা ‘বেটার ব্রাওরি অ্যান্ড বেয়ন্ড’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ খোলেন। এই গ্রুপে প্রায় এক হাজার সদস্য।

গতকাল বুধবার (২৬ মে) ওই তিনজনের কাছ থেকে এলএসডির ২০০টি ব্লট উদ্ধার করা হয়। প্রতিটি ব্লটের মূল্য ৩-৪ হাজার টাকা। এ ঘটনায় তিন তরুণকে গ্রেপ্তার করার পর তাদের কাছ থেকে গাঁজার তৈরি কেকেরও তথ্য পাওয়া গেছে। তবে কেক উদ্ধার করা যায়নি।

ঢাবি শিক্ষার্থী হাফিজুরের অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণ কি এলএসডি? গ্রেপ্তার তিনজন হচ্ছেন- সাদমান সাকিব ওরফে রুপল, আসহাব ওয়াদুদ ওরফে তুর্য, আদিন আশরাফ। তাদের বয়স ২২-২৫ বছরের মধ্যে।

সাদমান সাকিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর বহিষ্কৃত ছাত্র। বর্তমানে তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ (শেষবর্ষ) পড়াশোনা করছেন। তিনিই মূলত বছরখানেক আগে টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে নেদারল্যান্ডস থেকে এই মাদক অর্ডার করেন। মাদকের জন্য তারা পে-পালে টাকা পরিশোধ করলে পার্সেলের মাধ্যমে এই মাদক আসে। প্রতিটি ব্লট তারা ৮০০-১০০০ টাকায় কিনেছিলেন।

সাদমান ডিবির কাছে দাবি করেন, তাকে ঢাবি থেকে বহিষ্কার করা হয়নি। সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ার পর তিনি ঢাবি ছেড়ে এসেছিলেন। প্রথম দিকে ‘আপনার আব্বা’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ খুলে সাদমান ও তার তিন বন্ধু ওই গ্রুপ থেকে এলএসডি বিক্রি করছিলেন।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, উদ্ধার এলএসডিগুলো দেখতে স্ট্যাম্পের মতো। এগুলো যে মাদক তা দেখে বোঝার উপায় নেই। এলএসডি সেবকরা ঠোঁটের নিচে এলএসডি রেখে দিত। এলএসডি নতুন, ব্যয়বহুল এবং অতিরিক্ত ক্ষতিকারক মাদক (ব্যাড ড্রাগ)।

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও এলএসডির ইতিহাস ঘেঁটে ডিবি জানতে পারে, এটি ব্যবহার করলে যে কারও মাথা ভার হয়ে যাবে। হ্যালোজেনিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। কেউ যদি গান শোনে, তার সামনে গানের মিউজিকগুলো বিভিন্ন রঙের মতো ঘুরতে থাকে। সেবনকারী অত্যন্ত হিংসাত্মক ও আক্রমণাত্মক আচরণ করে। একটি এলএসডি ব্লট সেবন করলে ৮-১২ ঘণ্টা পর্যন্ত এর প্রতিক্রিয়া থাকে। অতিরিক্ত সেবনে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত প্রতিক্রিয়া হয়।

এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, এটি সেবন করে সেবনকারী নিজেকে অনেক শক্তিশালী ভাবে। সেবনকারী চিন্তা করে সে উড়তেও পারবে। তার অতীত স্মৃতি চলে আসে। অনেকে বলেছে, এটি সেবনের পর তারা মনে করে যে তারা ট্রেনেও ধাক্কা দিতে পারবে।

‘যারা নেদারল্যান্ডস থেকে এই মাদকটি বাংলাদেশে পাঠিয়েছে, তাদের শনাক্ত করতে পুলিশ সদরদফতরের এনসিবি বিভাগে চিঠি দিয়ে খোঁজ নিতে বলা হবে’—বলেন ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার।

হাফিজুরের অস্বাভাবিক মৃত্যুর নেপথ্যে এলএসডি কি-না?
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সম্প্রতি ঢাবি শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমানের ‘মৃত্যু’র ঘটনায় ডিবি তদন্ত শুরু করে। হাফিজের বন্ধুরা বলছেন, হাফিজ একটি নতুন ও অদ্ভুত মাদকে আসক্ত ছিলেন। এরপরই এলএসডির বিষয়ে তথ্য পেয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

হাফিজুরের মৃত্যুর ক্ষেত্রে এলএসডিকে সন্দেহ করা হচ্ছে কি-না, জানতে চাইলে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘আমরা আত্মহত্যা করা হাফিজুরের মরদেহের ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়ার পর বলতে পারবো, তিনি এলএসডিতে আসক্ত ছিলেন কি-না?’

এলএসডি কী?
এলএসডি ড্রাগ মস্তিষ্কে এমন এক প্রভাব সৃষ্টি করে, যা হ্যালুসিনেশনে (সম্মোহন) ফেলে দেয়। ফলে যারা এই ড্রাগ ব্যবহার করে তারা বিভিন্ন রকম রঙ এবং আকৃতির জিনিস দেখে, যার অস্তিত্ব পৃথিবীতে নেই। এছাড়া এই ড্রাগ মানব মস্তিষ্কের এমন সব স্নায়ুর কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়, যা অনেক সময় অতীত স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। এমনকি এই ড্রাগ মানুষকে তার জন্মকালীন স্মৃতিও মনে করাতে সক্ষম।

এলএসডির হ্যালুসিনেশন তৈরি করার প্রবণতা থেকে অনেক মানুষই এই মাদক সেবন শুরু করে। এমনকি ষাটের দশকে এই মাদক থেকে নতুন একটি সাইকেডেলিক কালচার তৈরি হয়। জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী ও ব্যান্ড সদস্যরা এই মাদক ব্যবহার শুরু করেন।

১৯৬৮ সালে বিশ্বব্যাপী এলএসডি নিষিদ্ধ করা হয়। নিষিদ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ এই মাদক সেবন করেছিল। বর্তমানেও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে রিক্রিয়েশনাল ড্রাগ হিসেবে এলএসডির ব্যবহার হয়। এই ড্রাগ ভারতে এখনো গোপনে ব্যবহার হয়।

সূত্র: জাগো নিউজ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত