রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট: বিভ্রান্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ছে অনলাইনে

প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৫:০৫

সাহস ডেস্ক
মস্কোর বিজয় দিবসের প্যারেডের ২০২০ সালের ভিডিও ফুটেজকে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে সাম্প্রতিক সংঘাতের ভিডিও হিসেবে দাবি করেছে

ইউক্রেনে যখন রুশ বাহিনীর অভিযান চলছে, তখন এই যুদ্ধ সংক্রান্ত ভুল, বিভ্রান্তিকর অনেক ভিডিও ও ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে ব্যাপকভাবে। খবর- বিবিসির।

বিবিসি সেসব ভিডিও ও ছবির সত্যতা যাচাই করার চেষ্টা করেছে। এর মধ্যে বেশ কিছু ভিডিও রয়েছে যেগুলো ইউক্রেন বা পৃথিবীর অন্য কোনো স্থানে হওয়া পুরনো যুদ্ধের ভিডিও।

আবার অনেক ছবি বা ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়াচ্ছে যেগুলো সেনা সদস্যদের মহড়ার সময়কার ছবি।

কিছু কিছু সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, যেমন টুইটার, বিভ্রান্তিকর কন্টেন্ট যেন না ছড়ায় তা নিশ্চিত করতে সক্রিয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। এই বিষয় নিয়ে যারা তথ্য যাচাই করেন এবং গবেষণা করেন, তাদের সাহায্য নিয়ে অনেক ভিডিও ও ছবি তাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে সরিয়ে দিচ্ছে টুইটার।

এই বিমানগুলো ২০২০ সালের একটি সেনা প্যারেডে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছিল

ফ্যান্টম জেট
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের প্রথম ঘণ্টার মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বিমান অভিযানের বহু ভিডিও প্রকাশিত হয়, যেগুলোকে ইউক্রেনের আকাশ সীমায় রুশ বোমারু বিমানের অভিযানের ভিডিও বলে দাবি করা হয়।

একটি শহরের ওপর দিয়ে ফাইটার জেট উড়ে যাওয়ার একটি ভিডিওকে দাবি করা হচ্ছিল ইউক্রেনে রুশ বিমান অভিযানের ভিডিও হিসেবে।

পরবর্তীতে এই ভিডিওটি সরিয়ে নেয়া হয়।

বিশদভাবে যাচাই করে দেখা যায়, বিমানটি আমেরিকা তৈরি এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন, যেটি রাশিয়া বা ইউক্রেন কোনো দেশের বিমানবাহিনী কখনো ব্যবহার করেনি।

আরেকটি ভিডিও ক্লিপে বেশ কয়েকটি ফাইটার ও বম্বার বিমানকে সংগঠিত হতে দেখা যায়। ঐ ভিডিওতে সাইরেনের আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল।

বিবিসি অনুসন্ধান করে জানতে পেরেছে যে ঐ ফুটেজটি ২০২০ সালের একটি মিলিটারি প্যারেডের। ভিডিওতে আসল অডিওর ওপর সাইরেনের আওয়াজ জুড়ে দেয়া হয়েছে।

আরেকটি ভিডিও ক্লিপে দাবি করা হয় খারকিভ শহরে রুশ প্যারাট্রুপাররা অবতরণ করছে।

এই ভিডিওটি টুইটারে লাখ লাখ বার দেখা হয়েছে। তবে আসলে রুশ ভাষার ঐ ভিডিওটি প্রথমবার ইন্টারনেটে আসে ২০১৬ সালে।

এই প্যারাট্রুপাররা ইউক্রেনের ওপর নামছিল বলে দাবি করা হলেও তা সত্য নয়

চতুর্থ একটি ভিডিও ক্লিপ টুইটার ও ইউটিউবে ব্যাপকভাবে শেয়ার হয়, যেটিতে দেখা যায় ইউক্রেনের ওপর একটি রুশ বিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করা হচ্ছে।

তবে বিবিসি সাংবাদিকরা বলছেন, তারা এই ভিডিও এর আগে দেখেছেন। ২০১১ সালে বেনগাজি শহরে বিদ্র্রোহীদের গুলিতে লিবিয়ার সরকারি বিমান ভূপাতিত হওয়ার দৃশ্য এটি।

ঐ ভিডিওতে বিমান ভূপাতিত হওয়ার পর সেনাদের আরবিতে উদযাপন করতেও শোনা যায়।

সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া কোনো কোনো ছবিতে যুদ্ধের কার্যক্রমও দেখা যায় না।

একটি বিস্ফোরণের ফুটেজে দাবি করা হয় যে সেটি দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনের মারিউপোল শহরে সাধারণ মানুষের আবাসস্থলের ভিডিও।

তবে ঐ ভিডিওর একটি ভার্সন ২৯শে জানুয়ারিতে টিকটকে আপলোড করা হয়েছিল একটি অ্যাকাউন্ট থেকে, যেটি থেকে নিয়মিত ভিত্তিতে বিস্ফোরণের ছবি ও ভিডিও আপলোড করা হয়ে থাকে।

এছাড়া, ঐ ভিডিওর ক্যাপশনে যেই বিস্ফোরণের কথা বলা হয়েছে, সেটিকে পাওয়ার স্টেশনের ওপর বজ্রপাতের ভিডিও বলেই প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে।

এই ফুটেজটি ১০ বছর আগে লিবিয়ার

সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের অনেকে এমন একটি ছবি শেয়ার করছেন যেটিকে দাবি করা হচ্ছে ইউক্রেনের খারকিভ শহরে রাশিয়ান সেনাদের পতাকা উত্তোলনের ছবি।

এই ছবিতে যে দাবি করা হচ্ছে, সেটি সঠিক - রুশ সেনারা খারকিভের একটি ভবনে রাশিয়ার পতাকা উত্তোলন করছেন।

তবে ছবিটি তোলার সময়কাল ছিল ২০১৪ সালে, দুই দেশের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হওয়ার শুরুর দিকে।

আর চীনা ভাষার একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে 'মহান পুতিন ইউক্রেনে হামলা করেছেন' ক্যাপশনে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়, যেটিকে সহজেই ২০২০ সালে বৈরুত বন্দরে বিস্ফোরণের ভিডিও বলে শনাক্ত করা যায়।

মনগড়া ও সত্য ঘটনা
চলমান কোনো ঘটনা ঘটতে থাকলে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর ছবি ও ভিডিও ছড়ানোটা অবশ্যম্ভাবী।

এরকম সময় এ ধরণের ছবি, ভিডিও সহজে এবং দ্রুত শেয়ারও হয় এবং মানুষ এ ধরণের কন্টেন্ট সত্য বলে বিশ্বাসও করে নেয়।

এই ছবিটি ২০১৪ সালের, যদিও এটিকে সাম্প্রতিক সংঘাতের মধ্যে রুশ সেনাদের মারিউপোল দখলের ছবি হিসেবে ছড়ানো হয়েছে

সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো প্রতিরোধ করতে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারেন শেয়ার করার আগে কন্টেন্টটির মূল উৎস সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে এবং যাচাই-বাছাই করে।

অধিকাংশ সংবাদ সংস্থা বা সংবাদ মাধ্যম কোনো ফুটেজ তাদের রিপোর্টে ব্যবহার করার আগে সাধারণত ব্যাপকভাবে যাচাই করে থাকে।

কাজেই কোনো ছবি বা ভিডিও শেয়ার করার আগে একাধিক বিশ্বাসযোগ্য উৎস থেকে যাচাই করে নিলে ভুল বা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত থাকা সম্ভব।

এই ফুটেজটি টিকটকে প্রকাশিত হয়েছিল জানুয়ারি মাসে

ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ নিয়ে ভুল ও বিভ্রান্তিকর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে তা অনুসন্ধান করে বেড় করেছে বিবিসি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত