বাড়িকে মশামুক্ত রাখার প্রাকৃতিক উপায়

প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৩, ১১:২২

সাহস ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত

সাম্প্রতিক ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের মধ্যে গ্রাম ও শহর সব পরিবেশেই জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাসায়নিক প্রতিরোধে দ্রুত সমাধান মিললেও অনেকেই খুঁজছেন তার নিজ বাড়িকে মশা মুক্ত রাখার প্রাকৃতিক উপায়। এই নির্দেশিকাটিতে রোগ-জীবাণু বহনকারী মশা থেকে পরিত্রাণ পেতে কিছু ব্যবহারিক কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হবে। চলুন, আপনার আশ্রয়টিকে মশামুক্ত রাখার জন্য এমন কিছু উপায় জেনে নেওয়া যাক, যেখানে আপনার স্বাস্থ্য ও চারপাশের পরিবেশ দুই-ই ভালো থাকবে।

বাড়িকে মশামুক্ত রাখার ১০টি প্রাকৃতিক উপায়

জমে থাকা পানি ফেলে দেয়া

মশা যে কোনো স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় জমে থাকা স্থির পানিতে বংশবিস্তার করে। তাই আপনার বাড়ির চারপাশে উন্মুক্তভাবে জমে থাকা পানির উৎসগুলো নির্মূল করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য ফুলের পাত্র, পোষ্য প্রাণির ঘরে থাকা পাত্রের মতো যাবতীয় পানির পাত্রগুলো নিয়মিত খালি ও পরিষ্কার করতে হবে।

এখানে বিশেষ নজর দিতে হবে নর্দমার দিকে, যেন মশা ডিম পাড়তে না পারে। পুকুর বা ফেলে দেওয়া জিনিসগুলোতে জমে থাকা খুব অল্প পরিমাণ পানিও মশার প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে কাজ করতে পারে।

মশা প্রতিরোধকারী ফ্যান ও আলোর ব্যবহার

মশা তাড়ানোর এক্সস্ট ফ্যানের শক্তিশালী বাতাস মশা ও অন্যান্য পোকামাকড়কে বাড়ির কাছাকাছি উড়তে দেয় না। বায়ু প্রবাহের এই প্রতিরক্ষামূলক বেষ্টনীটি বাড়ির বাইরে কাছাকাছি এলাকায় কৌশলে স্থাপন করুন।

পাশাপাশি বাড়ির আঙ্গিনায় ব্যবহৃত আলোতে হলুদ বা এলইডি লাইট ব্যবহার করা মশা তাড়ানোর কার্যকারিতা আরও বাড়িয়ে দিবে। এ ধরনের আলো মশার কাছে কম আকর্ষণীয়। বাড়ির আশেপাশে যে জায়গায় মশা বেশি জড়ো হয় সে স্থানগুলোতে এই আলো স্থাপন করুন।

জানালায় পর্দা টাঙানো

মশাকে বাড়ির বাইরে রাখার জন্য জানালার পর্দা টাঙানো যেতে পারে। জানালা ও দরজাতে যেন কোনো রকম গর্ত বা ফাঁক না থাকে। মশা এবং অন্যান্য পোকামাকড়কে বাইরে রাখার জন্য নেট সবচেয়ে কার্যকর হতে পারে। কেননা এটি ঘরের ভেতর তাজা বাতাস চলাচল করতে দেয়। সন্ধ্যায় এবং ভোরবেলা যখন মশার উপদ্রব সবচেয়ে বেশি থাকে, তখন জানালাগুলোর পর্দা টেনে দিলে ভালো কাজ দিতে পারে।

জানালা ও দরজায় মশা প্রতিরোধী নেট ব্যবহার 

এটি আপনার ঘর থেকে মশা দূরে রাখার একটি কার্যকর প্রাকৃতিক পদ্ধতি। নেটের সূক্ষ্ম ছিদ্রগুলো শুধু মশার জন্য প্রতিবন্ধকতাই তৈরি করে না, ঘরের ভেতর তাজা হাওয়াও ঢুকতে বাধার কারণ হয় না। টেকসই নেটটি সঠিকভাবে স্থাপন করা হলে এর কার্যকারিতা থেকে সর্বোচ্চ উপকারিতা পাওয়া যাবে।

সন্ধ্যা ও ভোরবেলায় দরজা-জানালা বন্ধ রাখা

বাড়িতে মশার প্রবেশ কমাতে দরজা-জানালা বন্ধ রাখুন, বিশেষ করে মশার উপদ্রবের সময়। সন্ধ্যায় ও ভোরের দিকে মশাসহ সব পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়ে যায়। এ সময় ঘরের ভেতরের গুমোট পরিবেশ আরামদায়ক রাখতে সিলিং ফ্যান ছেড়ে রাখুন।

বাড়িতে মশা প্রতিরোধী গাছ রাখা

কিছু গাছপালা তাদের মশা প্রতিরোধক বৈশিষ্ট্যের জন্য সুপরিচিত। সেগুলো আপনার বাগানে রাখতে পারেন অথবা আপনার বারান্দায়ও টবে লাগাতে পারেন। এই গাছপালা এক ধরনের প্রাকৃতিক সুগন্ধি ছড়ায়, যা মশা তাড়ায়।

উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে সিট্রোনেলা ও ল্যাভেন্ডারের কথা। এছাড়াও রয়েছে বেসিল, পুদিনা, রোজমেরি এবং গাঁদা। এই উদ্ভিদগুলো আপনার আঙ্গিনায় শুধু মশাই তাড়াবে না, দারুণ উপভোগ্য পরিবেশও তৈরি করবে।

সিট্রোনেলা মোমবাতি বা তেল ব্যবহার করা

সিট্রোনেলা লেমনগ্রাস উদ্ভিদ থেকে পাওয়া একটি প্রাকৃতিক পোকামাকড় প্রতিরোধক। সিট্রোনেলা মোমবাতি জ্বালালে বা সিট্রোনেলা তেল ব্যবহারে আপনার বাড়ির ভেতরের ও বাইরের চারপাশের এলাকা নিশ্চিতভাবে মশামুক্ত থাকবে।

এর শক্তিশালী ঘ্রাণ মশাকে আকৃষ্ট করা কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং ল্যাকটিক অ্যাসিডকে ঢেকে দেয়। বাড়ির আঙ্গিনায় কৌশলে মোমবাতি রেখে বা ডিফিউজারে সিট্রোনেলা তেল ব্যবহার করে কার্যকরভাবে মশা তাড়ানো যেতে পারে।

বাড়ির আঙ্গিনা পরিষ্কার রাখা

মশার বংশ নির্বংশ করতে বাড়ির আঙ্গিনা পরিষ্কার করা অতীব জরুরি। শুধু জমে থাকা স্থির পানিই নয়, অন্যান্য ধুলাবালি, ময়লা, আগাছা, পোষা পশু-পাখির মল, অন্যান্য উদ্বৃত্ত নিয়মিত অপসারণ করুন। ঘরের ভেতরে শোকেস, ফার্নিচার এবং ফুলদানির মত লুকানো জায়গায় জমে থাকা পানি ও ময়লা খুঁজে বের করে তা পরিষ্কার করুন।

ঘুমানোর সময় বিছানায় মশারি টাঙানো

মশারির মত প্রতিবন্ধকতাটি আপনার ঘুমানোর সময় সুরক্ষা প্রদান করতে পারে। বিছানায় মশারি ঝুলিয়ে রাখলে রাতের বেলা মশা ঘরে ঢুকলেও আপনার শরীর পর্যন্ত আসতে পারবে না। যেসব এলাকায় মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বেশি, সেখানে মশারি টাঙানো আবশ্যক।

মশা নিধনের বৈদ্যুতিক ফাঁদ ব্যবহার করা

বৈদ্যুতিক ফাঁদ আলো, তাপ ও কখনও কখনও ছোট ফ্যান ব্যবহার করে মশাকে আকর্ষণ করে। মশা বা পোকামাকড় ফাঁদে পড়তেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় বা আটকা পড়ে যায়। এই ফাঁদগুলো বাড়ির ভেতরে মশার সংখ্যা কমাতে বেশ কার্যকর। এগুলোকে এমন জায়গায় রাখুন যেখানে সাধারণত মশা বেশি দেখা যায়। যেমন- জানালার কাছে বা ঘরের অন্ধকার কোণে।

এখন আপনি আপনার বাড়িকে মশা মুক্ত করার প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে অবগত হয়ে গেছেন। আপনি এখন নিমিষেই আপনার বাড়ির ভেতর ও বাইরে আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করতে পারেন। তবে যে বিষয়টি মনে রাখা জরুরি তা হচ্ছে- এই কাঙ্ক্ষিত আশ্রয় বজায় রাখতে হলে আপনাকে নিয়মিত এর যত্ন নিতে হবে। অর্থাৎ এই কর্মতৎপরতাকে আপনার নৈমিত্তিক জীবনধারণের সঙ্গে একীভূত করে তাতে নিজেকে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে।

সূত্র: ইউএনবি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত