কানে ‘মুজিব’ ট্রেলার, মুক্তি সেপ্টেম্বরে
প্রকাশ : ২০ মে ২০২২, ১৬:২৮
![](https://mail.sahos24.com/templates/sahos-v2/images/sahosh.png)
![](/assets/news_photos/2022/05/20/image-76454.jpg)
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে নির্মিত 'মুজিব: একটি জাতির রূপকার' ছবিটির ট্রেলার প্রকাশিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ মে) রাত ১০টায় প্রকাশিত ১ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের ট্রেলারে উঠে এসেছে বঙ্গবন্ধুর পুরো জীবনের এক ঝলক। 'মুজিব' বায়োপিকের ট্রেলারটি ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত ৭৫তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে উন্মুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ছবিটি এ বছরের সেপ্টেম্বরে মুক্তি পেতে যাচ্ছে।
ট্রেলারটি শুরু হয়েছে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ভাষণ দিয়ে। ভাষণের মাঝে মাঝে দেখানো হয়েছে ১৯৫২ সালে ফরিদপুর কারাগারের সামনে বঙ্গবন্ধু ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগান দিচ্ছেন। তবে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। নেটিজানরা বলছেন, ’৫২ তে শেখ মুজিব কারাগারে ছিলেন, আন্দোলনের নেতৃত্ব সেখানে বসে দিলেও সরাসরি ছিলেন না রাজপথে। এছাড়াও ট্রেলারটিতে দেখানো হয়েছে কীভাবে সারাদেশে ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন শেখ মুজিব। তার রাজনৈতিক জীবনে অবদান থাকা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকেও এক পলক দেখানো হয়েছে। এসেছে তাজউদ্দিন আহমেদ, খন্দকার মোশতাকসহ শেখ হাসিনা। দেখানো হয়েছে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু বলছেন, ‘ভারত বাংলাদেশ ভাই ভাই’।
আরও দেখানো হয়েছে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে কীভাবে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। দেখানো হয়েছে তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টিও। সব মিলিয়ে ট্রেলারে দেখা যাচ্ছে, এ প্রজন্মের কেউ যদি খুব অল্প সময়ে বঙ্গবন্ধুকে জানতে চায়, তাহলে এ ছবিটি তার জন্য অনেক বড় সোর্স হবে।
শ্যাম বেনেগাল নির্মিত 'মুজিব' সিনেমায় বঙ্গবন্ধুর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আরিফিন শুভ। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তরুণ বয়সের চরিত্রে অভিনয় করছেন নুসরাত ফারিয়া। অন্যান্য অভিনেতাদের মধ্যে রয়েছেন- তৌকির আহমেদ (হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী), রাইসুল ইসলাম আসাদ (মওলানা ভাসানী), সাবিলা নূর (শেখ রেহানা), সিয়াম আহমেদ (শামসুল হক), খায়রুল আলম সবুজ (লুৎফর রহমান), চঞ্চল চৌধুরী (তরুণ লুৎফর রহমান), দিলারা জামান (সায়েরা খাতুন), সায়েম সামাদ (সৈয়দ নজরুল ইসলাম), শহীদুল আলম সাচ্চু (এ কে ফজলুল হক), প্রার্থনা দীঘি (ছোট রেনু), রিয়াজ আহমেদ (তাজউদ্দিন আহমেদ), তুষার খান (মানিক মিয়া), সমু চৌধুরী (কামারুজ্জামান) ও খলিলুর রহমান কাদেরিসহ (এম মনসুর আলী) অন্যরা।
ফ্রান্সে ট্রেলার প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার এবং যুব বিষয়ক ও ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ সিং ঠাকুর, এ সিনেমায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকায় অভিনয় করা আরিফিন শুভ, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের চরিত্রে অভিনয় করা নুসরাত ইমরোজ তিশাসহ অনেকেই।
এ সময় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, 'জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চেতনাকে যুগে যুগে জাগ্রত করে রাখবে ‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’ সিনেমাটি। এ চলচ্চিত্রটিতে আমাদের বঙ্গবন্ধুর জীবন, জাতির জন্য সংগ্রাম থেকে বিজয় ও পরম আত্মত্যাগের চিত্র ফুটে উঠেছে। বঙ্গবন্ধু, মহাত্মা গান্ধী, মার্টিন লুথার কিং, নেলসন ম্যান্ডেলার মতো মহান মানুষদের জীবনী একটি চলচ্চিত্রে ফুটিয়ে তোলা দুরূহ হলেও বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত এই সিনেমাটি বঙ্গবন্ধুর চেতনাকে যুগে যুগে জাগ্রত রাখবে এবং মানবতার জন্য আত্মনিবেদনের প্রেরণা যোগাবে, বলেন তিনি।
ভারতের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী অনুরাগ সিং ঠাকুর তার বক্তৃতায় বাংলাদেশের সাথে যৌথভাবে বঙ্গবন্ধুর জীবনচিত্র নির্মাণের এ কাজকে তাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দ ও গর্বের বলে বর্ণনা করেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর একদিন পরেই ১৮ মার্চ, ২০২০ সালে চলচ্চিত্রটির নির্মাণকাজ শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে এটি বিলম্বিত হয়। পরে পরিচালক শ্যাম বেনেগাল স্থান বদলে মুম্বাইয়ে শুটিং শুরু করেন। শুটিংয়ের সময় চলচ্চিত্রটির নাম ছিল "বঙ্গবন্ধু"। পরে ২০২২ সালে নাম পরিবর্তন করে মুজিব: একটি জাতির রূপকার রাখা হয়।
২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি ভারতের মুম্বইয়ের ফিল্ম সিটিতে চলচ্চিত্রটির শুটিং শুরু হয়। সেখানে গোরেগাঁও ফিল্ম সিটিসহ বেশ কয়েকটি অবস্থানে শুটিং করা হয়। একই বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশ অংশের শুটিং সম্পন্ন হয়। ছবিটির বাংলাদেশের অংশের প্রযোজক ছিলেন মোহাম্মদ হোসেন জেমী।
বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জীবনীনির্ভর সিনেমা নির্মাণে ভারতের প্রখ্যাত পরিচালক শ্যাম বেনেগাল সিদ্ধহস্ত। মহাত্মা গান্ধীকে নিয়ে তিনি ১৯৯৬ সালে নির্মাণ করেছিলেন ‘দ্য মেকিং অব দ্য মহাত্মা’। এর নয় বছর পর ২০০৫ সালে নির্মাণ করেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস: দ্য ফরগটেন হিরো। ১৭ বছর পর তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে নির্মাণ করছেন একটি সিনেমা। প্রতিটি সিনেমাতেই বেনেগালের গভীর অভিনিবেশ ও গবেষণা নজরে আসে।
শেষ মুহূর্তে এসে বর্তমান সিনেমাটির নাম ‘বঙ্গবন্ধু’ থেকে বদলে হয়েছে ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ বা ‘মুজিব: দ্য মেকিং অব আ নেশন’। বেনেগাল মনে করেন, মুজিব নামের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা সম্ভব। শ্যাম বেনেগালের ভাষায়, ‘সিনেমার নামটা এভাবেই অনেক বেশি অর্থবহ হবে। মুজিব অর্থ উত্তরদাতা। আর এ মানুষটি ছিলেন তার দেশের জনগণের জন্য বাতিঘরস্বরূপ। জনগণ দিকনির্দেশনা ও তাদের প্রশ্নের উত্তরের জন্য তার দিকে তাকিয়ে থাকত। কেবল তা-ই নয়, মানুষ তাকে বিশ্বাস করত।’
এ ছাড়াও ছবিটি নির্মাণ করতে গিয়ে বাংলাদেশ ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (বিএফডিসি) থেকে পাওয়া সহায়তার কথা সন্তুষ্টচিত্তে স্মরণ করেছেন শ্যাম বেনেগাল। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন আমাকে পরিচালক হিসেবে বেছে নিয়েছেন—এজন্য আমি কৃতজ্ঞ। এর সঙ্গে গবেষক, লেখক, অনুবাদক ও দোভাষীদের কাছ থেকে আমি বড় সহায়তা পেয়েছি। চিত্রনাট্যটি তাই যথার্থ হয়েছে। আমি তার কন্যা ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কয়েকবার সাক্ষাৎ করেছি। উদ্দেশ্য ছিল তার বাবার ব্যক্তিত্বের সূক্ষ্ম দিকগুলো সম্পর্কে জানা এবং তিনি আমাকে অনেক অজানা বিষয় জানিয়েছেন।’
‘মুজিব’ সিনেমাটি ভারতের দর্শকদের কেমন লাগবে এমন প্রশ্নে শ্যাম বেনেগাল বলেছেন, ‘মুজিব ভারতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। আর মানবীয় কাহিনী মানুষ সবসময়ই দেখতে চায়।’
সাহস২৪/এআর/এসটি/এসকে.