ড. ইউনূসের ‘দ্য ট্রি অব পিস’ পুরস্কারের খবর সত্য নয়

প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২৪, ২৩:০৩

সাহস প্রতিবেদক
ছবি: সংগৃহীত

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ইউনেস্কোর ‘দ্য ট্রি অব পিস’ পুরস্কার পাওয়ার খবরটি সত্য নয় বলে জানিয়েছে ইউনেস্কোর ঢাকা অফিস।

প্রতিষ্ঠানটি বলছেÑ প্যারিসের ইউনেস্কো সদর দফতর ড. ইউনূসের এই পুরস্কার পাওয়ার বিষয়ে একেবারেই অবহিত নয়। এটি প্রতারণামূলক এবং পরিকল্পিত মিথ্যাচার। বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন (বিএনসিইউ) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।  
যদিও ইউনূস সেন্টার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, একাদশ গ্লোবাল বাকু সম্মেলনের শেষ দিনে ড. ইউনূসের হাতে ‘দ্য ট্রি অব পিস’ সম্মাননা তুলে দেয়া হয়। এ সম্মেলনে বিশেষ বক্তা হিসেবে ভাষণ দিয়েছেন তিনি। সম্মেলনের আয়োজক ছিল নিজামি গানজাভি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের টুইটার হ্যান্ডেলেও তাঁর ‘দ্য ট্রি অব পিস’ পুরস্কার পাওয়ার কথা জানানো হয়েছে।  
তবে বিএনসিইউ-এর ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল জুবাইদা মান্নানের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি ঢাকার কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় এবং ইউনুস সেন্টারের অফিসিয়াল ওয়েব পেজে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ইউনেস্কো কর্তৃক ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার প্রদানের সংবাদটিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের (বিএনসিইউ) দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। 
ইউনূস সেন্টার থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বরাত দিয়ে পত্রিকায় যে সংবাদ ছাপা হয়েছে, তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৬ মার্চ আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত ১১তম গ্লোবাল বাকু ফোরামে ড. ইউনূসকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। কিন্তু ইউনেস্কো ঢাকা অফিস জানিয়েছে, প্যারিসে ইউনেস্কো সদর দফতর এই বিষয়ে একেবারেই অবহিত নয়। ১১তম বাকু ফোরাম যেখানে এই সম্মাননা দেয়ার সংবাদ প্রচার হয়েছে সেখানে ইউনেস্কোর কোনো অফিসিয়াল প্রতিনিধিত্বই ছিল না।
এতে আরো বলা হয়, ‘ইউনূস সেন্টার কর্তৃক দাবিকৃত সম্মাননা ইউনেস্কোর কোনো পুরস্কার বা সম্মাননাও নয়। ড. ইউনুসকে ‘ট্রি অফ পিস’ নামক একটি ভাস্কর্য স্মারক বা সম্মাননা প্রদান করেন ইজরাইলি ভাস্কর্য শিল্পী মিজ হেদভা সের। মিজ হেদভা নিজে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘ট্রি অব পিস’ প্রদানে ইউনেস্কোর কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। নিজামী গনজবী ইন্টারন্যাশন্যাল সেন্টারের আমন্ত্রণে ইজরাইলি ভাস্কর্য শিল্পী মিজ হেদভা সের ড. ইউনূসকে এটি প্রদান করেন। মিস হেদভা সের ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক কূটনীতিবিষয়ক গুইউইল অ্যাম্বাসেডর, কিন্তু ইউনেস্কোর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিনিধি নন এবং ইউনেস্কোর কোনো পুরস্কার বা সম্মাননা দেয়ার এখতিয়ার রাখেন না।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সুতরাং উল্লিখিত বাস্তবতার নিরিখে বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন ড. মুহাম্মদ ইউনূস পরিচালিত ইউনূস সেন্টার কর্তৃক পাঠানো এবং প্রচারিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং প্রতারণামূলক বলে মনে করে তার নিন্দা জানাচ্ছে। বাংলাদেশ ইউনেস্কোর অন্যতম সক্রিয় সদস্য রাষ্ট্র। ভবিষ্যতে ইউনেস্কোর মতো জাতিসংঘের এমন একটি মর্যাদাপূর্ণ এবং সুখ্যাতিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নামের অপব্যবহার থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ইউনূস সেন্টারকে সতর্ক করা হলো। এই বিষয়টি যেহেতু প্রতারণামূলক এবং পরিকল্পিত মিথ্যাচার সেহেতু তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে না তার ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।
এতে বলা হয়, ১ জানুয়ারি বাংলাদেশের আদালত ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং গ্রামীণ টেলিকমের আরও তিনজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার সহযোগীরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন যা বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন। এছাড়া আয়কর আইন লঙ্ঘনের জন্য তার ব্যক্তিগত আয়কর দাবি আদালতে বিচারাধীন। সুতরাং তিনি যতদিন আদালত কর্তৃক নির্দোষ প্রমাণিত নন, ততদিন তাকে কোনো মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার কিংবা সম্মাননা প্রদান সমীচীন নয়। বাংলাদেশে ইউনেস্কোর সঙ্গে কার্যক্রমের জন্য সরকারের ফোকাল পয়েন্ট হচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন। বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে, কেউ যাতে ইউনেস্কোর নামের অপব্যবহার কিংবা অপপ্রয়োগ না করতে পারে সেটি নিশ্চিত করা। সে হিসেবে ইউনেস্কোর নাম অপব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের পক্ষ থেকে ইউনেস্কো ঢাকা অফিস এবং ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির সঙ্গে পরামর্শ করে ইউনেস্কো সদর দফতরকে অবহিত করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত