দৈনিক সাহস পত্রিকায় ভর্তি জালিয়াতির সংবাদ প্রকাশের পর কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এর ৭ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল

প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮:২৪

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:

ভর্তি জলিয়াতির সংবাদ প্রকাশের পর মাউশির মৌখিক নির্দেশ এবং রংপুর বিভাগীয় উপ-পরিচালকের লিখিত  নির্দেশে অভিযোগ তদন্তে কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াসমিন আরা হকের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের শিক্ষার্থী ভর্তিতে জালিয়াতির সত্যতা পেয়েছে শিক্ষা বিভাগ। কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার (ডিইও) মো. শামসুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত১০ ডিসেম্বর  স্কুলটিতে ভর্তি জালিয়াতি নিয়ে দৈনিক সাহস পএিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পরে নড়েচড়ে বসে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর সহ স্থানীয় প্রশাসন।  মাউশির নির্দেশে অভিযোগের তদন্ত করেন ডিইও।

ডিইও শামসুল আলম বলেন, ভর্তি জালিয়াতির অভিযোগ  তদন্তে বিধি বহির্ভূতভাবে ৭ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সত্যতা মিলেছে। প্রধান শিক্ষকের একক সিদ্ধান্তে লটারির তালিকা বহির্ভূত   শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হয়েছে বলে ভর্তি কমিটির দেওয়া প্রতিবেদন ও নথিতে প্রমাণ মিলেছে।’

বর্তমান নীতিমালা ও নির্দেশনা মোতাবেক লটারির ফলাফলের বাইরে একজন শিক্ষার্থীও ভর্তির কোনও সুযোগ না থাকলে ও  সরকারি কর্মচারিদের বদলিজনিত কারণে তাদের সন্তানদের বছরের অন্য সময় ভর্তি করার সুযোগ আছে।। তবে সেটাও প্রধান শিক্ষক একক সিদ্ধান্তে পারেন না। ৭ শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ অবৈধ।

‘প্রধান শিক্ষক বলেছেন তিনি ভুলবশত ৭ শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়েছেন। বাঁচার জন্য এভাবে বলাটা স্বাভাবিক। 
এর আগে তালিকা বহির্ভূত শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়টি অস্বীকার করেছিলেন প্রধান শিক্ষক জিয়াসমিন আরা হক। তবে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ওই ৭ শিক্ষার্থীকে বিধিবহির্ভূতভাবে ভর্তি করা হয়েছিল বলে স্বীকার করে বলেন , ভর্তিগুলো বাতিল করে আমরা অপেক্ষমান তালিকা প্রকাশ করেছি।’

ভর্তি কমিটির একাধিক সদস্য সহ কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, ‘ এভাবে তালিকা বহির্ভূত শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে ভর্তি কমিটির সদস্যরা আপত্তি জানানোর পরেও  প্রধান  শিক্ষক লিখিত নির্দেশ দিয়ে ওই শিক্ষার্থীদের ভর্তি করাতে বাধ্য করেন।

তদন্তে ভর্তি জালিয়াতির সত্যতা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, রংপুর কার্যালয়ের উপ পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে মাউশির মহাপরিচালক বরাবর প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।  মহাপরিচালক পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।’
  
প্রসঙ্গত, কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০২৪ সালে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে প্রভাতী ও দিবা শিফটে ক ও খ শাখা মিলে মোট ২২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সে অনুযায়ী কেন্দ্রীয় লটারির মাধ্যমে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। গত ৩ ডিসেম্বর  শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রমের প্রথম দিনেই প্রধান শিক্ষক তাড়াহুড়ো করে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৬ জন ও নবম শ্রেণিতে একজন শিক্ষার্থীকে ভর্তির সুপারিশ করেন। কিন্তু এদের কেউই লটারিতে ভর্তির সুযোগ পায়নি। এমন কি এক শিক্ষার্থী অনলাইনে আবেদনও করেনি। ওই ৭ শিক্ষার্থীর মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণির চার শিক্ষার্থী কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের চার শিক্ষকের সন্তান। ভর্তি কমিটির সদস্য শিক্ষকরা এতে আপত্তি জানালে প্রধান শিক্ষক জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলে নিয়েছেন জানিয়ে তাদেরকে ভর্তি করাতেবাধ্য করেন। পরে ওই ৭ শিক্ষার্থীর ৬ জনকে প্রভাতী শিফটে ৬ ষ্ঠ শ্রেণির ‘ক’ শাখায় ও অপর একজনকে নবম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত