নড়াইলে ইটভাটায় ড্রাগন চাষে সাফল্য পেয়েছেন ছয় ভাই

প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২৩, ২০:৪২

নড়াইল প্রতিনিধি
ছবি: সাহস

নড়াইলের কালিয়া উপজেলার মাউলি ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে নবগঙ্গা নদীর পাড়ে “মকছেদ মোল্যা এন্ড মহুরন নেছা এগ্রো ড্রাগন গার্ডেন” নামে  ইটভাটার মধ্যে ২৩ একর জমিতে ১৩ হাজার ৬৫০টি পিলারে শোভা পাচ্ছে ৫৬ হাজার সবুজ ড্রাগন গাছ।

সরেজমিনে দেখা যায়, ইট ভাটায় বেড়ে উঠেছে ৫৬ হাজার ড্রাগন চারার বিশাল সবুজ বাগান। এখানে রেড ভেলভেট, আমেরিকান বিউটি, ইসরাইল ইয়োলো, ভিয়েতনাম রেড, ভিয়েতনাম হোয়াইট, পলোরা জাতের ড্রাগন গাছ।

কালিয়া উপজেলার বড়দিয়াতে মুন্সী মানিক মিয়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক মরফুদুল হাসান পলাশ বলেন, তার দুই ভাইয়ের সহযোগিতায় ২০২২ সালের জানুয়ারীতে ২.৫ একর জমিতে ১৭শত পিলারে ৭ হাজার চারা দিয়ে শুরু করেন ড্রাগন বাগানের চাষ। শুরুটা ভালো ছিলো না। প্রতিবেশীরা বলতো কি গাছ লাগাইছো এতে কি হবে। এখন তারাই বলে সুন্দর বাগান হয়েছে। ইট ভাটায় পরিবেশের রক্ষা ও পুষ্টি চাহিদা অর্থনৈতিক ভাবে লাভবানের আশায় নতুন উদ্যোমে আমরা ছয় ভাই ২৩ সালের জানুয়ারিতে ইটভাটা ভেঙে দিয়ে ২৩ একর জমিতে ড্রাগন বাগান করেছি। এখানে ২০ জন শ্রমিক কাজ করছেন।

বাগান পরিচর্যাকারী শ্রমিক সুমন মোল্যা বলেন, এই বাগানের শুরু থেকে আমি কাজ করি। খুব সহজ পদ্ধতিতে বাগান তৈরি করা যায়। এটা খুব বেশি পরিশ্রমের কাজ না। তবে সবসময় খেয়াল রাখতে হয় যেন পোকামাকড় বা রোগ বালায় গাছের কোন ক্ষতি করতে না পারে। জেলার সবচেয়ে বড় এই বাগান দেখতে আসছেন দুরের উৎসাহীরা, ড্রাগন চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন তারা। অনেকই চারা কিনে নিচ্ছেন।

বাংলাদেশের বড় বাগান দাবি করে ও বছরে আড়াই কোটি টাকা আয়ের লক্ষ জানিয়ে কলেজ শিক্ষক মরফুদুল হাসান পলাশ বলেন, শিক্ষক হিসাবে ইট ভাটার কারণে পরিবেশের ক্ষতি হবে এটা আমি মেনে নিতে পারি নাই। পরে কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় গড়ে তুলি এই ড্রাগন বাগান। এ বছর ইতিমধ্যে ১৬ লক্ষ টাকার ফল বিক্রি করেছি। আগামীতে এটা কয়েকগুণ বাড়বে বলে আশা করি। এলাকার অনেকেই এখান থেকে চারা নিয়ে ছোট ছোট বাগান করছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে এ ফলের চাষ করি। এতে কোনো ওষুধ বা কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়না। শুধুমাত্র বছরে ১-২ বার সার প্রয়োগ করতে হয়। মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা ফল সংগ্রহ করা যায়। ফলের আকার ভেদে প্রতি কেজি ১৫০ টাকা থেকে ২৮০ টাকা পর্যন্ত পাইকারি বিক্রি হয়। নড়াইলের কালিয়া বাজার লোহাগড়া নড়াইল সদরসহ যশোর সদরে বিক্রয় করছি।

মাউলি ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা কালিয়া উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফিরোজ মাহামুদ বলেন, পলাশ স্যারের বাগানে কালিয়া কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে আমরা প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকি। অল্প সময়ে বাগানে ফল আসা শুরু করে, তাই এটি লাভজনক চাষ। নতুন কেই এটা করতে চাইলে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করবো।

নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দীপক কুমার রায় বলেন, জেলায় ৩৬ একর জমিতে ছোট-বড় ১৩টি ড্রাগন বাগান রয়েছে। তবে পরিবেশের কথা ভেবে ইটভাটা ভেঙ্গে কলেজ শিক্ষক যে মহৎ উদ্যোগ নিয়েছেন এটা প্রশংসার দাবিদার। এটা একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসম্য বজায় থাকবে, তেমনি পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও আর্থিক লাভবান এবং নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। এ ব্যাপারে নড়াইল কৃষি বিভাগ সবরকমের সহযোগিতা করে আসছে, ভবিষ্যতেও সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত