আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে প্রাচীন ঐতিহ্যের মৃৎশিল্প

প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০২৩, ১৫:৪৯

নীলফামারী প্রতিনিধি
ছবি: সাহস

আধুনিকতার ছোঁয়ায় মৃৎশিল্পের জায়গা দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিক, সিলভার বা মেলামাইনের তৈরী নানা রকম আধুনিক সামগ্রী। এসব পণ্য বাজার দখল করায় প্রাচীন ঐতিহ্য হারিয়েছে তার জৌলুস। তবুও আশাহত হননি নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের চওড়া চন্দ্রপাল পাড়ার মৃৎশিল্প কারিগররা।

কারিগরদের দাবি, তৈজস পণ্যের চাহিদা একবারে কম। বেড়েছে কাঁচামালের দাম, আগুনে পোড়াতেও খরচ হচ্ছে দ্বিগুন। আর মূলধনের অভাবে বিলুপ্তির পথে প্রাচীন এ ঐতিহ্য। 

ইতিহাস ঐতিহ্যের পাতায় চোখ রাখলে দেখা যায় একসময়ের মৃৎশিল্পের কথা। আগে এখানকার মাটির তৈরী পণ্য দিয়ে বিভিন্ন জেলার তৈজসপণ্যের চাহিদা পূরণ হতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে কমে গেছে চাহিদা ও দিন দিন পেশা বদলিয়ে অন্য পেশায় যোগ দিচ্ছে কারিগড়রা। প্রতিদ্বন্দ্বী পণ্যের চেয়ে পরিবেশ বান্ধব হওয়ায় এ ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে সহজ শর্তে ব্যাংক ঋন ও পরবর্তী প্রজন্মকে নিয়ে দূ-চিন্তায় তারা। তবে সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বংশ পরম্পরায় বয়ে আসা হারানো প্রাচীন ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে পারবে বলে ধারনা মৃৎশিল্পিদের।

বাবা দাদার কাছ থেকে শেখা ৭০বছরের সিন্ধুবালা রাণী পাল বলেন, এক সময়ে আমাদের তৈরী জিনিস খুব বিক্রি হতো। এখন আর আগের মতো হয় না। মাটির ও খড়ির দাম বেড়ে যাওয়া দিনের মজুরি তুলতে পারি না। এখন এই শেষ বয়সে পেটের দায়ে ক্ষতি হলেও এসব কাজ করতে হচ্ছে। কিন্তু ছেলে-মেয়েদের নিয়ে চিন্তা হয়। আমাদের না হয় এভাবে দিন যাচ্ছে তার কি করে খাবে।

৮০ বছর বয়সের লক্ষী চন্দ্র পাল বলেন, প্লাটিক, মেলামাইন, সিলভারের ও সিরামিক্সের তৈরী জিনিস পত্র বের হয়ে আমাদের মাটির তৈরী জিনিসের চাহিদা কমে গেছে। দিন মজুরি না হলেও পেট কোন রকমে চলে। করোনাকাল থেকে একদম ব্যবসা বন্ধ হয়ে আছে। কোন পাইকার আসে না আমাদের কাছে এমনকি আমরাও বাহিরে বিক্রির জন্য নিতে পারি নাই। দিনগুলো অনেক কষ্টে পার করতে হয়। আর খরচ বাড়ায় সুদের উপর টাকা নিয়ে কাজ করতে হয়। এতে আবার বেশী ক্ষতি। সরকার বা কোন সংস্থা যদি সাহায্য করতো আমাদের জন্য এ শিল্পটাকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হতো।    

এ ব্যাপারে জেলা সমবায় অফিসার আব্দুস সবুর বলেন, বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষকে নিয়ে কাজ করে জেলা সমবায় অফিস। তেমনি মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে বিভিন্ন প্রশিক্ষনের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পুঁজির সম্বন্নয়ে একটা বড় ধরনের সমিতি গঠন করে দেয়ার চিন্তা ভাবনা চলছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত