আজ পবিত্র হজ

‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত আরাফাতের ময়দান'

প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৩, ০৯:৪৪

সাহস ডেস্ক
ফাইল ছবি

আজ ৯ জিলহজ ২৭ জুন মঙ্গলবার. পবিত্র আরাফাত দিবস বা হজের দিন।  মুসলমানদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত পবিত্র হজ । বিশ্বের নানা প্রান্তের লাখ লাখ মুসলমান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে হাজির হয়েছেন মক্কায়। ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত হচ্ছে পবিত্র আরাফাতের ময়দান।

গতকাল সোমবার মক্কা থেকে পাঁচ কিলোমিটার পূর্বে মিনায় তাঁবুতে অবস্থান করেন হজযাত্রীরা। সেখানে ইবাদত বন্দেগিতে দিন ও রাত পার করেছেন তারা। সেখান থেকে আজ ভোরে তাঁরা আল্লাহকে কাছে পাওয়ার এক তীব্র আকাঙ্ক্ষায় ছুটে যাচ্ছেন আরাফাতের ময়দানে। মুখে মুহুর্মুহু উচ্চারণ করছেন—‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্‌দা, ওয়ান্‌নি’মাতা লাকা ওয়াল্‌মুল্‌ক্‌, লা শারিকা লাকা’। এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য।

এ বছর বিশ্বের ২০ লাখের বেশি হজযাত্রী সমবেত হচ্ছেন ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে। কণ্ঠে তাঁদের সমস্বরে উচ্চারণ করা হচ্ছে—‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্‌দা, ওয়ান্‌নি’মাতা লাকা ওয়াল্‌মুল্‌ক্‌, লা শারিকা লাকা’। এর বাংলা অর্থ ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার।

সাদা দুই টুকরা কাপড়ে শরীর ঢেকে হজযাত্রীরা আজ মঙ্গলবার মিনায় ফজরের নামাজ আদায়ের পর থেকেই পবিত্র আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। এই আরাফাতের ময়দানেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। সেই স্মৃতি বুকে ধারণ করে মুসলিমরা সমবেত হচ্ছেন এই পবিত্র প্রান্তরে।

আজ ৯ জিলহজ (মঙ্গলবার) হাজিরা আরাফাতের ময়দানে একত্রিত হবেন। এই পবিত্র স্থানে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও রহমত চেয়ে দুআ (প্রার্থনা) করবেন তারা। এছাড়া আরাফাতের ময়দানে অবস্থানকালে হজযাত্রীরা নামিরাহ মসজিদে জোহরের নামাজ আদায় করবেন তারা। বিশ্বের লাখ লাখ হজযাত্রী সম্মিলিতভাবে আল্লাহর উপাসনায় নিজেদের নিমগ্ন রাখবেন।

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হজযাত্রীরা মুজদালিফায় যাত্রা শুরু করবেন। এটি আরাফাত ও মিনার মধ্যে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। হজযাত্রীরা মুজদালিফায় রাত কাটাবেন এবং ছোট পাথর সংগ্রহ করবেন। মিনায় জামারাত স্তম্ভে শয়তানকে লক্ষ্য করে এসব পাথর নিক্ষেপ করবেন তারা।

জামারাত আল-আকাবায় পাথর নিক্ষেপ করার পর হজযাত্রীরা পশু কোরবানি করবেন। এরপর তাওয়াফ আল-ইফাদাহ বা ফরজ তাওয়াফ করার জন্য মসজিদুল হারামে যাবেন। এই তাওয়াফ অবশ্য ১০ থেকে ১২ জিলহজের মধ্যে যেকোনো সময় করতে পারবেন তারা। এ সময় তারা কাবা শরিফ তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়া সাঈ করবেন এবং মাথা মুণ্ডন করবেন। একবার এই পবিত্র কাজটি সম্পন্ন করার পর হজযাত্রীদের আর ইহরামের নিয়মের মধ্যে আবদ্দ থাকতে হবে না। তারা সব হালাল (অনুমতিযোগ্য) কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত হতে পারবেন।

হজের অবশিষ্ট আচারগুলো সম্পন্ন করতে হজযাত্রীদের অবশ্যই আবার মিনায় ফিরে যেতে হবে। তাশরীকের দিনগুলোতে ১১, ১২ ও ১৩ জিলহজ হজযাত্রীদের মিনায় আরও দুটি কাজ করতে হবে। ১১ জিলহজ বিকেলে হজযাত্রীরা ২১টি ছোট পাথর সংগ্রহ করে তিন জামারাতে নিক্ষেপ করবেন। পাথর নিক্ষেপ শুরু হয় জামারাত আল-উলা, তারপর জামারাত আল-উস্তা এবং পরে জামারাত আল-আকাবা দিয়ে শেষ হয়।

মক্কা থেকে যাত্রা করার আগে হজযাত্রীদের তাওয়াফ আল-বিদা করতে হবে, যা বিদায়ী তাওয়াফ নামেও পরিচিত। এটি হজ সম্পন্ন করায় অত্যন্ত তাৎপর্য বহন করে এবং সব হজযাত্রীদের জন্য বাধ্যতামূলক। 

আরব নিউজ অনলাইন বলছে,  গতকাল সোমবার (২৬ জুন) বিকেলে সৌদি আরবের কর্মকর্তারা মক্কা ও মিনায় হজযাত্রীদের আগমনের আপডেট দিয়েছেন এবং হজ করতে আসা সবার স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তালাল আল-শালহুব নিশ্চিত করেন, মক্কা থেকে মিনায় হজযাত্রীদের পরিবহণ সম্পন্ন হয়েছে এবং মঙ্গলবার সেখান থেকে তাদের আরাফাতের ময়দানে যাওয়ার জন্য রাতের মধ্যেই ব্যবস্থা থাকবে।

হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি আয়েদ আল-গুয়েনেম বলেন, ৬৫ শতাংশ হজযাত্রী মিনায় যাত্রা সম্পন্ন করেছেন এবং বাকিদের সরাসরি আরাফাত ময়দানে নিয়ে যাওয়া হবে।

সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ আল-আব্দুলালী বলেন, ছয় হাজার শয্যা ধারণক্ষমতার ৩২টির বেশি হাসপাতাল হজযাত্রীদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।

কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ২০১৯ সালের পর এবারের হজে সবচেয়ে বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করছে। ২০১৯ সালে আনুমানিক ২৫ লাখ মানুষ হজে অংশ নিয়েছিলেন। বিশ্বব্যাপী করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে ২০২০ সালে মাত্র ১০ হাজার ব্যক্তিকে হজে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ২০২১ সালে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল প্রায় ৫৯ হাজার। সৌদি কর্তৃপক্ষের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২২ সালে মোট আট লাখ ৯৯ হাজার ৩৫৩ জন হজ করতে পেরেছিলেন। সৌদির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় জানায়, এ বছর ২০ লাখ হজযাত্রীকে স্বাগত জানানো হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত