বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন সিঙ্গেলস প্লাস্টিক ব্যাবহার হয়

প্লাষ্টিক দূষন মোকাবেলায় বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষৎ অগ্রগতি বিষয়ক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বক্তারা

প্রকাশ : ০৪ জুন ২০২৩, ১১:০০

সাহস ডেস্ক
সিঙ্গল-ইউজ প্লাস্টিক বা এক বার ব্যবহার করা যাবে এমন প্লাস্টিক ব্যবহার করা যাবে না

বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৩ উদযাপন উপলক্ষে চেইঞ্জ ইনিশিয়েটিভ এবং এনভিকশন আয়োজিত প্লাষ্টিক দূষন মোকাবেলায় বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষৎ অগ্রগতি বিষয়ক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্টিত হয় গতকাল। 

উক্ত সভায় আন্তর্জাতিক আইনী বাধ্যতামূলক চুক্তি প্রণয়নে বাংলাদেশকে পূর্ণ সমর্থন এবং এককালীন ব্যাবহার্য প্লাষ্টিক ব্যাগের ব্যবহার ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০% কমানো সহ ৮ দফা দাবি পেশ করা হয়। 

উক্ত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি ( বেলা) এর প্রধান নির্বাহী পরিচালক এডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। চেইঞ্জ ইনিশিিয়েটিভ এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী জনাব এম জাকির হোসেন এর স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে আলোচনা সভা শুরু হয়।

জাকির হোসেন খান বলেন, আমরা প্রাণ প্রকৃতি রক্ষায় নতুন করে মহাসংকটে নিপতিত হচ্ছি। অনাকাংখিত এ উপসর্গ শুধূই বিলাসিতা আর অপচয়ের ফসল, প্রতিনিয়ত ক্ষতিকর চর্চা চালাচ্ছি। 

আগামী ২০৬০ সাল নাগাদ বৈশ্বিক প্লাষ্টিকের উতপাদন ৩ গুণ হবে। পলিথিপ্রান প্লাষ্টিক যদিও অনেক কারণে নিরাপদ মনে হলেও যুগ যুগ ধরে তা ক্ষতির কারণ হয়ে বিরাজ করছে।

স্বাগত আলোচনায় অংশ নেন আয়োজক সংগঠন এনভিকশন এর সিইও জুহায়ের আহমেদ কৌশিক। বর্তমান প্লাস্টিক সংক্রান্ত বৈশ্বিক আলোচনা তুলে ধরে কৌশিক বলেন, প্রতিটা প্লাস্টিকের পুর্ন জীবন সাইকেল আমাদের চিন্তা করতে হবে। কারণ আজকের উৎপাদিত প্লাস্টিক পণ্য পরবর্তী কত বছর পর্যন্ত এ পৃথিবীতে কার্যকর থাকবে এবং তার মাধ্যমে আমাদের জীবন ও প্রাকৃতির মাঝে তার ক্ষতির পরিমান কতদুর তা চিন্তা করতে হবে এবং তারই আলোকে আমাদের করনীয় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এর জন্য সকল স্তরের মানুষের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এর আগে প্লাষ্টিক দূষণ প্রতিরোধে আমাদের বর্তমান এবং আগামী সম্ভাব্য করণীয় বিষয়ে চেইঞ্জ ইনিশিয়েটিভ এর গবেষক সাবা সাবনাম এবং ব্রেমেন বিশ্ববিদ্যালয় এর ইকোলজিষ্ট আসিফ মঈনুর চৌধুরী দুটি  প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। 

উপস্থাপনায় উঠে আসে বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন সিঙ্গেলস প্লাস্টিক ব্যাবহার করে দেশের নাগরিকরা, যার ওজন প্রায় ২৭৩ মিলিয়ন কেজি, যা মাটি ও পানিতে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে।

মূল আলোচক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগি অধ্যাপক ড. মোস্তফিজুর রহমান বলেন নদীর মাছে প্লাষ্টিক পাওয়া যায়, মানুষের রক্তে প্লাষ্টিক মিশে যাচ্ছে। 

খাদ্য শৃঙ্খলে প্লাষ্টিক প্রবেশ করছে , এটি অশনি সংকেত। এখনই চিনাতা করতে হবে এর থেকেে রক্ষা পেতে।  

রিভার এ্যান্ড ডেলটা রিসার্স সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক জনাব মোহাম্মদ এজাজ বলেন দেশের কমপক্ষে ২৬টি নদী আছে যেগুলো প্লাষ্টিক দূষনে সংক্রমিত , এসকল নদীর প্লাষ্টিক মাত্র ২% সমুদ্রে চলে যতেে পারে, বাকি ৯৮% প্লাষ্টিক জলাভূমি এবং কৃষিজমিতে মিশে যায়। 

নিয়ন্ত্রণ না করলে যুগের পর যুগ এ দুষণ চলতেই থাকবে।

ইউএনডিপি‘র টাউন ম্যানেজার মারুফ হোসেন বলেন, আমাদের আচরণে পরিবর্তন আনতে হবে। নিজস্ব ব্যবহার্য জিনিষে প্লাষ্টিক ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে।  

প্রফেসর আদিল মোহাম্মদ খান বলেন প্লাষ্টিকের সামগ্রী ব্যবহারের প্রতি কেন আমরা এতো নির্ভরশীল হয়েছি? বিকল্প পথ তো ছিল, তা পরিহার করে নতুন ভাবে আমরা সুবিধার আড়ালে সারা জীবনের জন্য অসুবিধা তৈরী করছি। 

এ থেকে পরিত্রান অবশ্যই আছে। তা শুরু করতে হবে।

অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি হিসাবে আলোচনায় লুবনান ট্রেড কনসোটিয়াম ও ইনফিনিটি এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমডি নাজমুল হক খান বলেন আমাদের নিজেদেরকে  নিজের দায়িত্ব নিতে হবে, উৎপাদন যারা করছেন তারা দায় এড়াতে পারেন না, আবার ভোক্তা হিসাবে যারা এটি ব্যবহার করছেন তারাও  দায় এরাতে পারবেন না। 

সবাইকে প্লাষ্টিকের দুষনকারী হিসাবে দায় নিতে হবে, এ দুষণ থেকে মুক্তি পেতে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।  

বাংলাদেশ প্লাষ্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকসার এ্যান্ড এক্সপোর্ট এ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএমইএ)এর সভাপতি শামিম আহমেদ বলেন আমরা সবাই প্লাষ্টিক উৎপাদনকারীদের কে দোষারোপ করি, যে উনাদের কারণেই এ প্লাষ্টিক দূষণ এক মাত্র কারণ। 

২০০২ সনে যখন প্লাষ্টিক উৎপাদন বন্ধের নির্দেশনা আসে তখন প্লাষ্টিক উৎপাদনকারী প্রায় ১৫০টি প্রতিষ্ঠান উৎপাদন বন্ধ করে দেয়, কিন্তু তাতে প্লাষ্টি উৎপাদন কমে যায়নি বরং অলিতে গলিতে প্লাষ্টিক কারখানা গড়ে উঠে যা আইন শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠানের সামনেই হয়েছে। 

সেগুলা নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করা হয়নি। আমাদের দেশে যে কারণে বেশি বেশি বা ঘরে ঘরে প্লাষ্টিক বা পলিথিন ব্যবহার হচ্ছে সেই প্লাষ্টিক পন্যের বিকল্প  উদভাবন করতে হবে।  বিকল্প না দেয়া পর্যন্ত এ পরিস্তিতির উন্নতি আশা করা যাবে না।

প্রধান অতিথি বেলার প্রধান নির্বাহী এডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, অন্য দেশের সাথে বাংলাদেশকে তুলনা করে প্লাষ্টিক দূষন মাত্রা নিরুপন বা প্লাষ্টিক উৎপাদন আলোচনা করার সুযোগ কম। 

আমরা কি করছি? কি করতে পারি? কি করা উচিত?  প্লাষ্টিক উৎপাদন কখন থেকে বন্ধ করতে পারবো? ব্যাবহার কখন থেকে কমাতে  শুরু করবো তা পরিস্কার করতে আলোচনায় বসতে হবে সবাইকে। 

সরকার যদি চায় একবার ব্যাবহার যোগ্য প্লাষ্টিক এক বছরের মধ্যে বন্ধ করা সম্ভব। তা করতে পারলে আমাদের জন্য নতুন মাত্রা তৈরী হবে। ইমপোর্টের মাধ্যমে অন্য দেশের দূষণকারী প্লাস্টিক আমাদের দেশে প্রবেশ করছে নানা পণ্যেও মোড়কের মাধ্যমে। 

এ ক্ষতির দায়ভার কে নিবে? প্লাষ্টিক উৎপাদন কমাতে হবে, প্লাষ্টিক উৎপাদনকারীদের করের আওতায় আনতে হবে।

অনুষ্টান সঞ্চালনা করেন এনভিএকশন এর আরমান পরাগ, অনুষ্টানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও আলোচনা সংক্ষেপ উপ্সথাপন করে চেইঞ্জ ইনিশিয়েটিভ এর উপদেষ্টা ইবনুল সাঈদ রানা।

ওয়েবিনারে ৮ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয় -

১। প্লাষ্টিক দূষণ রোধ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইনী বাধ্যতামূলক চুক্তিতে বাংলাদেশকে পূর্ণ সমর্থন দিতে হবে।

২। এককালীন ব্যাবহার্য প্লাষ্টিক ব্যাগের ব্যবহার ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০% এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০% কমাতে হবে।

৩। পলিথিন উৎপাদন বন্ধের প্রজ্ঞাপন পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে।

৪। প্লাষ্টিক দূষন কমাতে পরিবেশ অধিদপতরসহ সরকারী সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে দায়বদ্ধ ও কার্যকর করতে হবে।

৫। প্লাষ্টিক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে প্লাষ্টিক দূষনের জন্য দূষন করের আওতায় আনতে হবে।

৬। পলিথিন বা প্লাষ্টিক সামগ্রীর বিকল্প সামগ্রী উৎপাদনে শিল্প কারখানাকে সরকারি প্রনোদনা প্রদান করতে হবে।

৭। বহুজাতিক ও দেশীয় কোম্পানির প্লাষ্টিক জাতীয় পণ্যের নিরাপদ প্রক্রিয়াজাতকরণ নিশ্চিত করতে হবে।

৮। প্লাষ্টিক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাচামাল আমদানীতে উচ্চ করারোপ হবে।  

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত