রাজধানীতে ঈদে মিলাদুন্নবীর জশনে জুলুস অনুষ্ঠিত

প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০২২, ১৪:১৪

নিজস্ব প্রতিবেদক
ছবি: ঈদে মিলাদুন্নবীর জশনে জুলুস

মাইজভান্ডার দরবার শরীফের বর্তমান ইমাম হযরত শাহ্সূফী সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানীর (মা.জি.আ.) নেতৃত্বে লাখো নবীপ্রেমী জনতার উচ্ছ্বাসমুখর অংশগ্রহণে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও রাজধানীতে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) উপলক্ষে জশনে জুলুস বের হয়েছে। 

রবিবার (৯ অক্টোবর) সকালে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হতে জশনে জুলুস (ধর্মীয় শোভাযাত্রা) শুরু হয়ে রাজধানীর শাহবাগ, মৎস ভবন, দোয়েল চত্বর হয়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনের সড়ক প্রদক্ষিণ করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসে আন্তর্জাতিক শান্তি মহাসমাবেশে মিলিত হয়।

শোভাযাত্রার অগ্রভাগেই দৃষ্টিনন্দন বড় বড় হরফে লেখা ছিল ‘ইয়া নবী ছালামু আলাইকা’, ‘ইয়া রাসূল ছালামু আলাইকা’। আন্জুমানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভা-ারীয়ার ব্যবস্থাপনায় জশনে জুলুসে অংশগ্রহণকারীরা কলেমা খচিত পতাকা, প্লেকার্ড, ফেস্টুন ছাড়াও, বহন করে বাংলাদেশের বিশাল জাতীয় পতাকা। জুলুসে অংশগ্রহণকারীরা নারায়ে তকবির, নারায়ে রেসালতের স্লোগানে স্লোগানে রাজধানীর রাজপথ মুখরিত করে তোলে। দেশ বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে জুলুসে আসা সূফিবাদী জনতা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরিহিত ছিল। তাদের আনন্দ উচ্ছ্বাস ঈদের আনন্দকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। জুলুস শেষে মুসলিম জনতা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আন্তর্জাতিক শান্তি মহাসমাবেশে মিলিত হয়।

শান্তি সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে মাইজভান্ডার দরবারের বর্তমান ইমাম ও ঈদে মিলাদুন্নবী অনুষ্ঠানের সভাপতি সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী বলেন, মহানবীর (দ.) দুনিয়ায় শুভাগমন জগৎবাসীর জন্য আল্লাহ পাকের বিশেষ রহমত ও অনুগ্রহ। প্রিয়নবীর (দ.) শুভাগমন না হলে সৃষ্টি জগৎ অস্তিত্বই লাভ করতো না। রাসূল (সা.) দুনিয়ায় শুভাগমনের মূল উদ্দেশ্যই হলো একটি শান্তি ও সহাবস্থানপূর্ণ মানবিক বিশ্ব সমাজ গড়ে তোলা। আজ সিরিয়া, ফিলিস্তিন, মিয়ানমারসহ তাবৎ দুনিয়ায় যুদ্ধ সংঘাত ও রক্তপাতে জর্জরিত। শক্তিধর দেশগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান না করে অস্ত্রের ভাষায় কথা বলছে। নিষেধাজ্ঞা পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে সমগ্র পৃথিবীর মানুষ খাদ্য জ্বালানি সংকটসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। এই দুঃসহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে মহানবীর (দ.) আদর্শ অনুসরণের বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, মদিনার সনদের আলোকে কীভাবে সমতাভিত্তিক, বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক আধুনিক কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠন করা যায় সাড়ে চৌদ্দশত বৎসর আগে রাসূলই আমাদেরকে দেখিয়েছেন। শাহসূফী সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভা-ারী বলেন, প্রিয়নবী (দ.) ছিলেন পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্র নায়ক।

আন্তর্জাতিক শান্তি মহাসমাবেশে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ভিডিও কনফারেন্সে বলেন, ইসলাম প্রচার ও প্রসারে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বহু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। সমগ্র বাংলাদেশে প্রায় এক লাখ মসজিদ ভিত্তিক মক্তব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রতিটি মসজিদ ভিত্তিক একজন আলেম সেখানে ৫২০০ টাকা করে ভাতা পাচ্ছে। এটি আজ থেকে ১২, ১৩ বছর বা ১৪ বছর আগে কল্পনাও করা যায়নি। এটি আমাদের সরকার বাস্তবায়ন করছে। বাংলাদেশে এক যোগে ৬০০ মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে ইতোমধ্যে কয়েক শ নির্মিত হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা যার পূর্ব পুরুষ ইসলাম প্রচারের জন্য এই ভূখ-ে এসেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক  মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক বলেছেন, ধর্মীয় শিক্ষাকে বাদ দেয়া হচ্ছে বলা হচ্ছে, এটা গত বছরের ঘটনা করোনা পরিস্থিতির জন্য। আমাদের পাঠ্যসূচি পড়ুন, ধর্মকে বাদ দেয়ার প্রশ্নই উঠে না। রবিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) উপলক্ষ্যে আন্জুমানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভা-ারীয়ার উদ্যোগে শান্তি মহা সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল আলম খান বলেন, মহানবীর ক্ষমা ও উদারতা নারী জাতির প্রতি সম্মান শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জনে উজ্জল দৃষ্টান্ত। আমরা যদি মক্কা বিজয়ের চেতনা থেকে আমাদের কর্মপন্থা নির্ধারণ করি তবে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি হয়ে উঠবে উন্নত সমৃদ্ধ শান্তি ও কল্যাণময়। হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের দেশে রয়েছে এটি আরও সুসংহত ও সুদৃঢ় হবে।

মুফতী মাওলানা বাকী বিল্লাহ আল আযহারী, মুফতী মাওলানা এইচএম মাকসুদুর রহমানের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ১৪ দলীয় সমন্বয়ক ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু (এম.পি)। উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হক (এম.পি), তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ (এম.পি) ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মোঃ ফরিদুল হক খান (এম.পি), অ্যাড. নূরুল আমিন রুহুল (এম.পি), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিসবাহুর রহমান চৌধুরী, মইনীয়া যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহজাদা সাইয়্যিদ মেহবুব-এ-মইনুদ্দীন আল্-হাসানী, কার্যকরী সভাপতি শাহজাদা সাইয়্যিদ মাশুক-এ-মইনুদ্দীন আল্-হাসানী, অ্যামারিকা হতে আগত আন্তর্জাতিক ইসলামিক স্কলার ড. শেখ আহমদ তিজানি বিন ওমর, মরক্কো থেকে মো: লাকদার জারফুফি, তুরস্ক থেকে সাইয়্যিদি মোহাম্মদ ইএল হোসাইনী, পীরে ত্বরীক্বত হযরত আল্লামা আবুল কাশেম নূরী, অধ্যাপক ড. রফিকুল আলম প্রমুখ।

আজ সকালে রাজধানীতে ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) জশনে জুলুস করেছে আন্জুমানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভান্ডারীয়া। রবিবার সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে জশনে জুলুস শুরু হয়। জুলুস শেষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুরু হয় শান্তি মহাসমাবেশ। মাইজভান্ডার দরবার শরীফের সাজ্জাদানশীন মাওলানা সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানীর সভাপতিত্বে শান্তি মহাসমাবেশে দেশ বিদেশের খ্যাতিমান আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদ, গবেষক বক্তব্য রাখেন।

 

সাহস২৪.কম/এসএস

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত