লক্ষ্মীপুরে ডাকাত আতঙ্কিত এলাকা পরির্দশন এসপি’র

প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৬:৩৮

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে হঠাৎ বেড়েছে চোর ও ডাকাতের উপদ্রব। আজ এ বাড়িতে ডাকাতি হয়, তো কাল ওই বাড়িতে। এমন চোর-ডাকাত আতঙ্কে ঘুম হারাম হয়ে গেছে উপজেলার কেরোয়া ও চরপাতা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে। চোর-ডাকাত চক্রকে শনাক্ত করতে মসজিদে মাইকিং করাসহ পাহারায় রাত কাটাচ্ছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।

চুরি, ডাকাতি ও মাদক প্রতিরোধে বুধবার (৩১ আগস্ট) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রায়পুর থানায় সকল শ্রেণিপেশার মানুষ এবং বিকাল থেকে-রাত ৮টা পর্যন্ত কেরোয়া ইউনিয়নবাসির সাথে মতবিনিময় করেন নবাগত পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ। এছাড়াও পুলিশ সুপার (এসপি) ডাকাত আতঙ্কিত এলাকায় ছুটে যান এবং চুরি ও ডাকাতি হওয়া বাড়িগুলো পরিদর্শন করে গৃহকর্তাদের সাহস ও শন্তনা দিয়েছেন। এসময় সঙ্গে ছিলেন সহকারি পুলিশ সুপার, ওসি, কমিউনিটি পুলিশিং সভাপতি, ইউপি চেয়ারম্যান, সাংবাদিক ও সুশিল সমাজের প্রতিনিধি।

গত সোমবার রাতে কেরোয়া ইউপির সাত বাড়ি একই সময়ে চুরি হয়। বাড়িগুলো হলো-বহরমুল্লা পাটওয়ারি বাড়ি, হাছান আালী মুন্সি বাড়ি, তোরাফ পাটওয়ারীর ২ ঘরে, মন্ডল বাড়িতে, জাহাবক্স ভুঁইয়া বাড়ির ২ ঘরে, তফদার বাড়িতে। আর লামছরি গ্রামের মাদরাসার পাশে প্রবাসির ঘরে ডাকাতি হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত এক মাস যাবৎ চরপাতা ইউপির গাছিরহাট, গাজিনগর, বোয়াডার বাজার, সিঙ্গেরপুলসহ রায়পুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের লেংড়াবাজার থেকে বোয়াডারবাজার পর্যন্ত সড়ক এবং কেরোয়া ইউপির জোড়পুল, খলিফার মসজিদ, লামছড়ি, মোল্লারহাট, মীরগঞ্জ, দেনায়েতপুর, পীরবাড়ি সংলগ্ন এলাকা, মালিবাড়ি এলাকা, সুনামগঞ্জ এলাকা ও তার পাশে মাসুমপুরসহ কয়েকটি গ্রামে চুরি এবং ডাকাতি হয়। ধারাবাহিকভাবে চুরি ও ডাকাতি করে মালামাল লুটের পাশাপাশি গৃহকর্তাদের ছুরিকাঘাতে মারাত্মকভাবে আহত করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ হাসপাতালে এখনো মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।

চরপাতা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সুলতান মামুন রশিদ বলেন, ২-৩ দিন পর পর চোর ও ডাকাত দল ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে গ্রামের মানুষের টাকা-পয়সা স্বর্ণালংকার লুটে নেয়। থানায় অভিযোগ করলেও কোন লাভ হয় না।

কেরোয়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান সামছুল ইসলাম সামু জানান, রায়পুর উপজেলার ১০টির মধ্যে গুরুত্বপুর্ণ ইউনিয়ন হলো কেরোয়া ইউপি। এই ইউপির পাশে বোয়াডারে ফরিদগঞ্জ, রামগঞ্জ, সদর উপজেলা। গত এক মাসে ওইসব এলাকায় অন্তত ৭ সিঁধেল চুরি ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতি রোধে দুই-তিনদিন গ্রামের মানুষ মসজিদে মাইকিং করে ডাকাত পাহারা দেন।

রায়পুর কমিউনিটি পুলিশিং এর সভাপতি কাজি জামশেদ কবির বাকি বিল্লাহ বলেন, কেরোয়া ইউপিতে ডাকাতি ও চুরি সংগঠিত করছেন জামায়াতের নেতা ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউনুস বাহিনী। ইউনুস বাহিনী রাতে পাহারা দেয় লাঠি, রামদা, চাইনিজ কুড়াল ও সাপাল নিয়ে এবং সিএনজি চেকিং করে। গ্রামে ডাকাত পড়েছে বলে সেই মাইকে ঘোষণা দিয়ে গ্রামবাসিকে বিরক্ত করে। যারা রাতে পাহারা দেয় তারাই সামাজিক অন্যায় ও অত্যাচারের ইতিহাসে জড়িত।

তবে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা ইউনুস বলেন, পুলিশ সুপারের মতবিনিময়সভায় আওয়ামী লীগ নেতা বাকি বিল্লাহের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
পরির্দশন শেষে পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর থানাধীন ০৬ নম্বর কেরোয়া ইউনিয়নের ০৬ নম্বর ওয়ার্ডস্থ একাধিক বসতঘরে সিঁধেল চুরি হয়। যা ডাকাতি বলে প্রচার করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, গত বুধবার এ জেলায় যোগদান করেই শুনছি রায়পুরে আইনশৃংখলা অবনতি। তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম দ্রুত সকল শ্রেণিপেশার মানুষের সাথে মতবিনিময় করে তার উন্নতি ঘটাতে হবে। শুধু একটাই বলবো, অপরাধীরা মানুষকে কষ্ট দিবেন আমরাও তাদের শান্তিতে থাকতে দিবো না। আপনি ভালো তো আমরাও আপনাদের সাথে ভালো। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি দূর করতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। উক্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে তিনি তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত