‘লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতায় এগিয়ে বাংলাদেশ’

প্রকাশ : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১১:২১

সাহস ডেস্ক

দেশে নতুন ছয়টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে। যার ফলে জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডে যোগ হয়েছে আরো এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন প্রায় ২১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। চাহিদা যদিও ১২ হাজার মেগাওয়াটের মতো। অর্থাৎ চাহিদার চেয়ে নয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বেশি সরবরাহের ক্ষমতা এখন বাংলাদেশের রয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব আহমদ কাইকাউস বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন বিদ্যুৎ ঘাটতির দেশ থেকে বিদ্যুৎ উদ্বৃত্তের দেশে রূপান্তরিত হয়েছে।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন আর বিদ্যুতের ঘাটতি নেই। আমাদের বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়তো আছে, কিন্তু চাহিদা থাকলেও সরবরাহ করতে পারছি না, সেই অবস্থা আর নেই। লোডশেডিং করতে হচ্ছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘জনসংখ্যার ৯২ শতাংশ এখন বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতায় রয়েছে এবং তাদের জন্য যথেষ্ট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়েছে।’

কাইকাউস বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতায় এগিয়ে। ২০২৩ সালের মধ্যে ২৮,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও, ঐ সময়ের মধ্যে ৩৩,০০০ মেগাওয়াট উৎপাদনের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা হাতে রয়েছে।’ বাংলাদেশে ২০৪১ পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। 

তবে বিদ্যুতের সরবরাহ নিয়ে অনুযোগ কমলেও, ক্রমবর্ধমান দাম নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা সৈয়দা নিলুফার। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ ছাড়া যেহেতু জীবন চলে না, তাই জীবনের এই একটি দরকারি সেবার জন্য সাংসারিক বাজেটের অন্য কোনও দিকে হয়ত তাকে কাটছাঁট করতে হয়।’

গৃহস্থালি পর্যায়ে এখন ৫০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যাবহার করলে ইউনিট প্রতি দাম সাড়ে তিন টাকার মতো। যে যত বেশি ব্যবহার করবে তার খরচও তত বাড়বে। সেই হিসেবে ৬০০ ইউনিট থেকে তার উপরে যারা ব্যবহার করবেন তাদের খরচ ইউনিট প্রতি দশ টাকার বেশি।

বাংলাদেশে এখন ৫৬ শতাংশ বিদ্যুৎই আসছে বেসরকারি পাওয়ার প্লান্টগুলো থেকে, এবং বাংলাদেশে বিদ্যুতের উচ্চ মূল্য নিয়ে বেসরকারি খাতের কেন্দ্রগুলোকেই দায়ী করা হয়।

বিদ্যুৎ সরবরাহে যে সাফল্য তার অন্যতম কারণ বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। দ্রুত সংকট মোকাবেলায় এসব বেসরকারি কেন্দ্রের উপরে অনেকটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে সরকার।

জ্বালানী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তামিম বলেন, ‘সরকারি বা বেসরকারি খাত বলে কথা নেই, তরল জ্বালানি নির্ভর হওয়াটাই বিদ্যুতের দাম কমাতে না পারার মূল কারণ।’

তিনি বলেন, ‘গত বছরগুলোতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সফলতার জন্য সরকারকে নির্ভর করতে হয়েছে আমদানিকৃত তরল জ্বালানি নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থার ওপর, যার খরচ অনেক বেশি।’

তবে সরকারের পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন মনে করেন না যে বাংলাদেশে বিদ্যুতের দাম অতিরিক্ত।

তিনি বলেন, ‘আমাদের এই উপমহাদেশ তথা বিশ্বের নিম্ন পর্যায়ের যে ট্যারিফ যেসব দেশে আছে তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, শ্রীলংকা, পাকিস্তানে দাম বেশি।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘জ্বালানি হিসেবে কয়লা ও পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির যেসব মেগা প্রকল্পগুলো রয়েছে সেগুলো চালু হলে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় অনেক কমে আসবে।’

সূত্র : বিবিসি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত