নড়াইলে ধানের ন্যায্য দাম না থাকায় কৃষকের মুখে নেই হাসি

প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২৩, ১৩:৪০

নড়াইল প্রতিনিধি
ছবি : দৈনিক সাহস

নড়াইলের কৃষকের সোনালী স্বপ্ন দোল খাচ্ছে মাঠে মাঠে। সোনালী আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। ফলন মোটামুটি ভালো হলেও উৎপাদন ব্যয় উঠবে কি না তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন তারা। এদিকে ফলন ভালো হয়েছে বলে দাবি করে কৃষি বিভাগ বলছে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা গেলে এবং কৃষক ন্যায্য মূল্য পেলে আগামীতে আমান চাষ আরো বাড়বে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪২ হাজার ২৬২ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ৪২ হাজার ৬৮৫ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪২৩ হেক্টর বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৪৮ শতাংশ জমির ধান কর্তন হয়েছে।

সরেজমিন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, দিগন্ত বিস্তৃত মাঠজুড়ে আমন ধানের খেত সবুজ থেকে সোনালী বর্ণ ধারণ করেছে। কৃষকরাও ফসল ঘরে তুলতে দিন-রাত এক করে কাজ করছে। কেউ ধান কাটছে, কেউ আঁটি বাঁধছে। কেউ কেউ সেই ধান মাথায় নিয়ে খেত থেকে বাড়ি যাচ্ছে। আবার কেউ করছে মাড়াইয়ের কাজ। সকাল থেকে দিনভর এভাবেই ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কৃষাণীরা। 

তবে কৃষকের মুখে নেই হাসি। ফলন মোটামুটি ভালো হলেও সার, কীটনাশক, ধান কাটা শ্রমিকসহ অন্যান্য খাতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হয়েছে। খরচের তুলনায় ধানের দাম কম। ফলে ধানের দাম না বাড়লে লাভ তো দূরে থাক এই দামে উৎপাদন খরচ উঠবে কি না তা নিয়ে এখন শঙ্কায় কৃষক।  

নড়াইলের চাচঁড়া এলাকার আমন চাষি কাইদুল বিশ্বাস বলেন, ধানের ফলন একেবারে খারাপ না। ফলন ভালোই। কিন্তু সার, ওষুধ দিয়ে যে খরচ পড়ে তাতে তাদের মোটেই লাভ থাকে না। খরচের তুলনায় ধানের দাম কম। দাম বাড়ানো উচিত। দাম না বাড়ালি কৃষক বাঁচবে না।

বাহিরডাঙ্গা গ্রামের অসিম বিশ্বাস জানান, তারা যে দাম পাচ্ছে সে দামের তুলনায় যে খরচ হয় সে খরচের পয়সা তাদের বাঁচে না। এ বছর পোকার (কারেন্ট পোকা) কারণে বিঘা প্রতি ধানের ফলনো কম হয়ছে। তারপর সার-মাটিতে যে খরচ তা চালান একটুও মেলে না। চাষি মানুষ, চাষ করতে হয়, তাই করে যাচ্ছেন।

সিতারামপুর গ্রামের সবুজ সরদার বলেন, সব কিছুর যে দাম তাতে ধানের দাম ১৫শ টাকার নিচে হলে কৃষকের লস। যেভাবে খরচ হয়, তাতে কৃষকের বেঁচে থাকা সম্ভব না। তারপরো নিজেদের জমি, চাষ না করে কি করবেন। না খেয়ে তো আর মরা যায় না। তাই বাধ্য হয়ে  লস হলেও চাষ করা লাগে।

নড়াইল সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. রোকনুজ্জামান বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকরা আগ্রহের সাথে রোপা আমন চাষ করেছে। তুলনামূলক রোগবালাই এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ কম থাকায় এ বছর ফলন ভালো হয়েছে। তবে কৃষকদের একটি আশঙ্কার জায়গা হচ্ছে ধানের দাম। প্রতিটা স্তরে যে উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং কৃষক যদি যথাযথ মূল্য পায় তাহলে নড়াইলসহ সারাদেশে রোপা আমনের আবাদ বাড়বে। একইসঙ্গে উচ্চ ফলনশীল ধান চাষে কৃষক আরো আগ্রহী হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা।

ধানের দাম কম হওয়ার বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দীপক কুমার রায় বলেন, আমন ধানের দাম নিয়ে আমরা হতাশ না। সরকার ভর্তুকি দিয়ে কৃষকদের ধানের বীজ,সার ওষুধ দিয়েছে। এ ছাড়াও কৃষকরা যাতে ধানের ন্যায্য দাম পায় সেক্ষেত্রে আমন ধান ও চাল সংগ্রহ করবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত