জবা ফুলের ঔষধি গুণ ও টবে চারা রোপন পদ্ধতি
প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২১, ২০:৫২
সাহস ডেস্ক
জবা বা জবা ফুল ইংরেজি: Hibiscus rosa-sinensis হল মালভেসি গোত্রের অন্তর্গত একটি চিরসবুজ পুষ্পধারী গুল্ম, যার উৎপত্তি পূর্ব এশিয়াতে। আমাদের দেশের জন্য খুবই কমন একটা ফুল জবা। সারা বছর ফুল দেয় আর অনকদিন বেঁচে থাকার কারণে অনেকেই বাড়ির ছাদে টবে এই জবা ফুল গাছ লাগায়। পুজোর ফুল হিসাবে জবা ফুলের গুরুত্ব অনেক। বিভিন্ন পুজোতে এই ফুলের বিশেষ চাহিদা থাকে। শুধু তাই নয়। জবা ফুলের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা অনেক। এই ফুলের নির্যাশ থেকে বেশ কিছু আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরী হয়। জবার অন্য নাম হল রোজমেলো বা চিনা গোলাপ।
জবা ফুলের রং
জবা ফুলের পাপড়ি সাধারণত পাঁচটি হয় ও এছাড়াও একাধিক পাপড়ি বিশিষ্ট হয়। জবা ফুল বিভিন্ন আকারের ও রংয়ের হয়। যেমন লাল, সাদা, হলুদ,কমলা,বেগুনি, হাল্কা হলুদ,গোলাপি, রক্ত রং,হলুদের মধ্যে খয়েরী ছোপ ইত্যাদী।
জবা ফুলের ঔষধি গুণ
- জবা গাছের নানান ঔষধি গুন রয়েছে। তাই তো আয়ুর্বেদে জবার অনেক ব্যবহার লক্ষ করা যায়।
- চোখ ওঠা।
- মাথায় টাক পোকা।
- হাতের তালুতে চামড়া ওঠা।
- বমির আধিক্য থাকলে।
- চুল রুক্ষ হলে।
- স্থূলতা বৃদ্ধি পেলে।
- ক্ষত নিরাময়ে সহয়তা করে।
- অনিয়মিত মাসিকের স্রাব।
জবা ফুলের চারা রোপন পদ্ধতি:
মাটি প্রস্তুতকরণ
টবে জবা রোপনের দ্বিতীয় ধাপ হল মাটি প্রস্তুতকরণ। এর জন্য ২ ভাগ মাটি, ১ ভাগ কোকোপিট বা ধানের তুষ বা গাছের গুড়ো এবং ১ ভাগ জৈব সার একসাথে মিশিয়ে নিন। এভাবে মাটি প্রস্তুত করে গাছটি সুন্দর ভাবে লাগিয়ে দিন এবং টবে ভরপুর পানি দিয়ে দিন এবং ৫ দিনের জন্য ছায়যুক্ত স্থানে রাখুন।
চারা সংগ্রহ
টবে জবা রোপনের জন্য প্রথমে নার্সারি থেকে ছোট আকারের মোটা কান্ডের সুস্থ সবল চারা এবং সর্বনিম্ন ১২ ইঞ্চি আকারের টব সংগ্রহ করুন। জবা গাছের চাষের জন্য আর্দ্র মাটি প্রয়োজন। তবে মাটি যাতে বেশী ভিজে কাদা কাদা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর কোনো কারণে মাটি স্যাঁতসেঁতে থাকলে সেই কয়দিন জল দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এছাড়া প্রতিদিন নিয়ম করে জল দেওয়া উচিৎ।
সার প্রয়োগ পদ্ধতি
গোবর সার, চাপান সার ও রাসায়নিক সার এই গাছের জন্য ভাল। নিমের গুড়ো খোল, কাঠের ভষ্ম, গুঁড়ো হাড়, ও গোবড় সার মিশিয়ে তৈরী করুণ চাপান সার।
জবা গাছের পরিচর্যা
আপনাকে প্রথমে প্লাস্টিকের পাইপ, পাট কাঠি,কঞ্চি,শক্ত লাঠি জোগাড় করতে হবে। এরপর এগলি দিয়ে গাছগুলিকে ঠেকনা দিয়ে রাখা যায়। এরপর সার হিসেবে চাপান সার বা তরল সার দিতে হবে। জবা গাছে জল দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে গোড়ায় জল না জমে। মাসে দুবার মাটি খুঁচিয়ে দিতে হবে। মাটি যদি কোনো কারণে স্যাঁতস্যাঁতে হয়, তাহলে কলি ঝরে যাবে, পাতা ঝরে যাবে
ডাল ছাঁটাই
একটি সতেজ গাছ তৈরির প্রক্রিয়াটি হল গাছটি বড় হলে ডগাটি ছেটে দিতে হবে। এরপর কয়েকদিন পর কান্ডের পাশ থেকে শাখা বের হবে, তাদের মধ্যে কয়েকটি শাখা রেখে বাকীগুলি ছিড়ে ফেলুন। এরপর গাছের গোড়ায় মাটি দিন। সতেজ গাছ রাখতে হলে একটি সোজা শাখা ও ৪-৫ টি পার্শ্ব শাখা রাখতে হবে। গাছের পার্শ্ব কুঁড়িগুলি ছাটলে, অনেক ফুল হবে।
জবা ফুলের পোকামাকড় ও প্রতিকার
জবাগাছের ক্ষেত্রে ছত্রাকের আক্রমনের সম্মুখীন হতে হয়। গাছে ছত্রাক/মিলিবাগ আক্রান্ত হলে, ফুলের বোটা নরম হয়ে যায়। এক্ষেত্রে প্রতিমাসে একবার নিয়মিত কীটনাশক স্প্রে করলে ভাল হয়। তবে বড়িতে তৈরী কীটনাশক ব্যবহার করতে পারলে ভাল হয়। পেঁয়াজ,রসুন,আদা,গোল মরিচের পেস্ট সহ ট্রিকস লিকুইড জলে মিশিয়ে স্প্রে করলে কীটনাশকের কাজ হয়। থ্রিপস ভাইরাস আবার জবার কুঁড়ি ঝড়িয়ে দেয়। এতে পাতা কুঁকড়িয়ে যায়। মনোফিল,নিকোটিন সালফেট,রোগার প্রয়োগ করুন।
গাছে প্রচুর ফুল পেতে করণীয়
জবা গাছে প্রচুর ফুল পেতে হলে প্রতি মাসে ১ মুটো সরিষার খৈল গুড়ো, ২ চামচ হাড় গুড়ো বা ১ চামচ ফসফেট এবং ১ চামচ পটাশ একসাথে মিশিয়ে গাছে দিয়ে দিতে হবে এতে জবা গাছে সুন্দর ফুল আসবে।
তথ্যসূত্র: কৃষি বাংলা, (https://a2qban.ask2q.com/2019/09/21/%E0%)