আরও তিন দেশে মাঙ্কিপক্স
প্রকাশ : ২৫ মে ২০২২, ১৮:০৩
![](https://mail.sahos24.com/templates/sahos-v2/images/sahosh.png)
![](/assets/news_photos/2022/05/25/image-76561.jpg)
নতুন আরও তিন দেশে ছড়িয়ে পরেছে মাঙ্কিপক্স। এর মধ্যে উপসাগরীয় অঞ্চলে সংযুক্ত আরব আমিরাতে একজনের আক্রান্ত হওয়ার পাওয়া গেছে। ইউরোপের আরও দুই দেশে প্রথমবারের মত মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত রোগী ধরা পড়েছে। চেক রিপাবলিক এবং স্লোভেনিয়ায় এ ভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় এ পর্যন্ত আফ্রিকার বাইরে ২১টি দেশে মাঙ্কিপক্স ছড়ানোর খবর পাওয়া গেল।
এ ব্যাপারে বিবিসি জানায়, সাধারণত মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার দুর্গম এলাকার মানুষের মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা যায়। এখন ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকার পর এশিয়াতেও এ ভাইরাস প্রথমবারের মত পৌঁছাল। আক্রান্ত দেশের সংখ্যা আরও বাড়ার শঙ্কা থাকলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঙ্কিপক্স করোনাভাইরাসের মত ব্যাপক সংক্রমণ ঘটাবে বলে তারা মনে করেন না। ভাইরাসজনিত এ রোগে আক্রান্ত হলে সাধারণত জ্বর হয় এবং শরীরে ফুসকুড়ি ওঠে। তবে সংক্রমণের মাত্রা সাধারণত মৃদু হয়।
আরব আমিরাতের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, সম্প্রতি পশ্চিম আফ্রিকা ভ্রমণকারী একজনের শরীরে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় তারা ‘সম্পূর্ণ প্রস্তুত’। এ রোগ শনাক্তে তারা ইতোমধ্যে নজরদারি বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, আফ্রিকার বাইরে যেসব দেশে সাধারণত এ রোগ দেখা যায় না, সেসব দেশেও সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে এ ভাইরাসের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। মঙ্গলবার এক সম্মেলনে সংস্থার গ্লোবাল ইনফেকশাস হ্যাজার্ড প্রিপার্ডনেস ডিরেক্টর সিলভি ব্রায়ান্ড বলেন, ‘সংক্রমণের মাত্রা কোন পর্যায়ে এবং কোনদিকে যাচ্ছে তা বোঝার জন্য আমরা আপনাদের মাঙ্কিপক্সের উপর নজরদারি বাড়াতে বলব। এই প্রাদুর্ভাব স্বাভাবিক ঘটনা নয়, তবে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।’
আফ্রিকার বাইরে এখন পর্যন্ত মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত ও সন্দেহভাজন আক্রান্তদের তালিকায় রয়েছেন ২৩৭ জন। বিভিন্ন দেশ এ ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে নিজেদের পরিকল্পনা ঘোষণা করছে। জার্মানি বলেছে, জলবসন্ত বা গুটিবসন্তের টিকা মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধেও নিরাপত্তা দিতে পারে। সে কারণে তারা ৪০ হাজার ইমভেনেক্স ভ্যাকসিনের অর্ডার দিয়েছে, যাতে পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে সেটা ব্যবহার করা যায়।
দেশটির চিকিৎসকরা বলছেন, গুটিবসন্ত প্রতিরোধে বৈশ্বিক প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে যারা আগে টিকা নিয়েছেন, তাদের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা মাঙ্কিপক্সকেও ঠেকিয়ে দিতে পারে। তবে পুরনো ওই চিকিৎসা পদ্ধতির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক বেশি। তাই মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে এখন তা হয়ত খুব যুৎসই হবে না। ফ্রান্সে এখন পর্যন্ত তিনজনের শরীরের মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তাদের কাছাকাছি যাওয়ার ঝুঁকি যাদের রয়েছে, তাদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের টিকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যে আরও ১৪ জনের শরীরে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এ নিয়ে যুক্তরাজ্যে মোট ৭১ জন মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হলেন। আক্রান্ত ব্যক্তির পোশাক, বিছানা ও তোয়ালে স্পর্শ করলে, আক্রান্ত ব্যক্তির ত্বকের ফোসকা বা ফুসকুড়ি স্পর্শ করলে কিংবা আক্রান্ত ব্যক্তির কফ ও সর্দির মাধ্যমে মাঙ্কিপক্স ছড়াতে পারে।
আক্রান্ত হলে সাধারণত পাঁচ থেকে ২১ দিনের মধ্যে প্রথম উপসর্গ দেখা যায়। প্রাথমিক উপসর্গ হচ্ছে জ্বর, মাথাব্যথা, গাঁট ও মাংসপেশিতে ব্যথা এবং অবসাদ। জ্বর শুরু হওয়ার পর দেহে গুটি দেখা দেয়। এসব গুটি শুরুতে দেখা দেয় মুখে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে হাত এবং পায়ের পাতাসহ দেহের সব জায়গায়। এই গুটির জন্য রোগী দেহে খুব চুলকানি হয়। পরে গুটি থেকে ক্ষত দেখা দেয়। জল বসন্তের মতোই রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলেও দেহে এসব ক্ষত চিহ্ন রয়ে যায়। রোগ দেখা দেওয়ার ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন। ১৯৫৮ সালে বানরের দেহে এই ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হওয়ায় এর নামকরণ হয় মাঙ্কিপক্স। যদিও এখন ইঁদুরকেই বিস্তারের প্রধান পোষক হিসেবে সন্দেহ করা হচ্ছে।
সাহস২৪.কম/টিএ/এসটি/এসকে.