মিষ্টি কুমড়ার পুষ্টিগুণ
প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২১, ১৭:৩০
সাহস ডেস্ক
সবজি হিসেবে মিষ্টি কুমড়ার অবদান কম নয়। মিষ্টি কুমড়া খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর। হালকা মিষ্টি স্বাদের এই সবজিটি পাওয়া যায় সারা বছর জুড়ে। মিষ্টি কুমড়া আমাদের সকলের অতি পরিচিত বারোমাসি সবজি । মিষ্টি কুমড়ায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ (বিটা ক্যারোটিন), ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স,এবং ভিটামিন ই, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক, কপার, ফসফরাস,ক্যারটিনয়েড এবং বিভিন্ ধরণের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস। নিয়মিত মিষ্টি কুমড়া খেলে আমাদের বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। খাদ্যতালিকায় নিয়মিত মিষ্টি কুমড়ার উপস্থিতি আপনাকে রাখতে পারে অনেক অসুখ-বিসুখ থেকে দূরে।
জেনে নিন কুমড়োর অবিশ্বাস্য স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে-
মিষ্টি কুমড়ার পুষ্টিগুণ
মিষ্টি কুমড়া খেতে সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে ভরপুর হওয়ায় এর চাহিদা প্রচুর। এই সবজিটি আমাদের দেহের প্রয়োজনীয় ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে। শরীর সুস্থ রাখতে নিয়মিত মিষ্টি কুমড়া খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
প্রতি ১০০ গ্রাম মিষ্টি কুমড়ায় রয়েছে –
উপাদান | পরিমাণ |
খাদ্যশক্তি
|
২৬ কিলোক্যালরি |
শর্করা- | ৫ গ্রাম |
আমিষ- | ১ গ্রাম |
ফাইবার- | ০.৫ গ্রাম |
চর্বি- | ০.১ গ্রাম |
ভিটামিন সি- | ৯ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন এ-
|
৭২০০ মাইক্রোগ্রাম |
পটাশিয়াম- | ৩৪০ মিলিগ্রাম |
সোডিয়াম- | ১ মিলিগ্রাম |
ক্যালসিয়াম- | ২৪ মিলিগ্রাম |
কোলেস্টেরল- | ০ মিলিগ্রাম |
জিংক | ০.৩ মিলিগ্রাম |
লৌহ- | ০.৮ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস- | ৪৪ মিলিগ্রাম |
রোগ প্রতিরোধে মিষ্টি কুমড়া :
আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে মিষ্টি কুমড়া একটি অত্যন্ত উপকারি সবজি। প্রতিদিন মিষ্টি কুমড়া খেলে রোগ ব্যাধির সংক্রমণ কমে যায়। মিষ্টি কুমড়ায় বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন ই মানবদেহকে ক্যান্সার ও আলঝেইমার রোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। এবং মিষ্টি কুমড়ার ভিটামিন সি থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি সর্দি-কাশি, ঠাণ্ডা লাগা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
হাই প্রেসার কমাতে :
যারা হাই প্রেসার জনিত সমস্যায় ভোগেন তারা নিয়মিত মিষ্টি কুমড়া খেতে পারেন।কারন মিষ্টি কুমড়াতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম আছে। আর পটাসিয়াম আমাদের শরীরে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।তাছাড়া মিষ্টি কুমড়াতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে যা হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে থাকে।
চোখ ভালো রাখতে মিষ্টি কুমড়া :
মিষ্টি কুমড়াতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ বা বিটাক্যারোটিন রয়েছে তাই এই সবজিটি চোখের জন্য খুবই ভালো। আমাদের চোখের রেটিনার বিভিন্ন অসুখ প্রতিরোধে মিষ্টি কুমড়া খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।চোখের ছানি পড়া রোধ সহ চোখের রেটিনা কোষ রক্ষা করা বিটা-ক্যারোটিন ও আলফা-ক্যারোটিন মত ক্যারটিনয়েড সমূহের কাজ । এটি শুধু চোখের অসুখ নয়, ভিটামিন এ এর অভাবজনিত অন্যান্য রোগেও মিষ্টি কুমড়া উপকারী।তাই চোখকে সুস্থ ও সচল রাখতে আপনার খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন মিষ্টি কুমড়া যোগ করুন।
ত্বক উজ্বল করে :
মিষ্টি কুমড়া ত্বক উজ্বল করতেও সাহায্য করে। মিষ্টি কুমড়ায় বিদ্যমান ভিটামিন এ ও সি চুল ও ত্বক ভালো রাখে। নিয়মিত মিষ্টি কুমড়া খেলে উজ্জ্বল চুল ও চকচকে ত্বকের জন্য উপকার। তাছাড়া বয়সের ছাপ প্রতিরোধ করতেও মিষ্টি কুমড়া সাহায্য করে। মিষ্টি কুমড়াতে প্রচুর পরিমাণে জিংক রয়েছে। যা ইমিউনিটি সিস্টেম ভালো রাখে ও অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
খাদ্য হজমে সাহায্য করে :
মিষ্টি কুমড়ায় প্রচুর পরিমাণে আঁশ বা ফাইবার আছো যা সহজেই হজম হয়। মিষ্টি কুমড়া হজমশক্তি বৃদ্ধি ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণ ও পরিপাক নালীর খাদ্য সঠিক উপায়ে সরবরাহে এই সবজির তুলনা হয়না।
জ্বালাপোড়ার অনুভূতি কমায় :
পেশির জ্বালাপোড়ার অনুভূতি কমানোর ক্ষমতা আছে কুমড়োর বিচির। এ ছাড়া বাতের ব্যথাও কমায় এটি। অস্থিসন্ধির ব্যথা কমাতে এর তেলও ভালো কাজে দেয়।
ভালো রাখে প্রোস্টে :
কুমড়োর বিচিতে আছে জিংক। যা পুরুষের উর্বরতা বাড়ায় ও প্রোস্টেটের সমস্যা প্রতিরোধ করে। এতে আছে ডিএইচইএ (ডাই-হাইড্রো এপি-অ্যান্ড্রোস্টেনেডিয়ন), যা প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।
ডায়াবেটিসেও উপকারী :
শরীরে নিয়মিত ইনসুলিন সরবরাহ করে এবং ক্ষতিকর অক্সিডেটিভ চাপ কমায়। এ ছাড়া হজমে সাহায্য করে এমন প্রোটিনও সরবরাহ করে কুমড়োর বিচি, ফলে রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
বয়সের ছাপ কমায় :
মিষ্টি কুমড়াতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জিংক ও আলফা হাইড্রোক্সাইড। জিংক ইমিউনিটি সিস্টেম ভালো রাখে ও অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়া বয়সের ছাপ প্রতিরোধ করতেও মিষ্টি কুমড়া সাহায্য করে
দীর্ঘ চুলের নিশ্চয়তা :
এতে আছে কিউকুরবিটিন, এমন এক অ্যামিনো অ্যাসিড যা চুলের বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া ভিটামিন সিও আছে কুমড়োর বিচিতে, যা চুলের বৃদ্ধি বাড়ায়।
দাঁত ও হাড় গঠন :
হার্ট ভালোভাবে রক্ত পাম্প করতে সমর্থ হয়। এছাড়াও মিষ্টি কুমড়া দাঁত ও হাড় গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ।
ভালো ঘুম :
কুমড়োর বীজে ট্রিপটোফ্যান নামে অ্যামাইনো এসিড থাকে যা রাতে আপনাকে ভালো ঘুম এনে দেবে। তাই একে প্রকৃতিপ্রদত্ত স্লিপিং পিল বলা হয়ে থাকে।
এছাড়া মিষ্টি কুমড়ার নানা উপাদান দেহের লিভার,কিডনি, হার্টকে সুস্থ রাখে, বাতের ব্যথাসহ দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার প্রশমন ঘটায়। মিষ্টি কুমড়ায় বিদ্যমান ফাইবার দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রেখে স্ট্রোক এর ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে।মিষ্টি কুমড়া ও কুমড়ার বীজ গর্ভবতী মায়েদের রক্তস্বল্পতা রোধ করে। অকাল প্রসবের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। তাই গর্ভবতী মায়েরা তাদের অনাগত সন্তানের সুস্বাস্থ্যর জন্য নির্দ্বিধায় মিষ্টি কুমড়া খেতে পারেন।এতে বুঝা যায় মিষ্টি কুমড়ার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা অনেক ।