সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অচল লিফটগুলো

সরকারি হাসপাতালের লিফট হয়ে উঠছে মৃত্যুকূপ

প্রকাশ : ২২ মে ২০২৪, ১২:৩৩

Desk Report

 

হাসপাতালে লিফট থাকা কোনো বিলাসিতা নয়, বরং রোগীদের জন্য অত্যাবশ্যক। কিন্তু সরকারি হাসপাতালে লিফট হয়ে উঠছে মৃত্যুকূপ। দেশের অধিকাংশ হাসপাতালের লিফটগুলো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অচল অথবা বিপজ্জনক হয়ে আছে।

এক বছর ধরে জীবনের ভয় নিয়ে রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের একটি ভবনে লিফটম্যান হিসেবে কাজ করেন রিপন মিয়া (ছদ্মনাম)। জরাজীর্ণ লিফটটি কত বছর আগে বসানো হয়েছিল তা জানেন না রিপন। এমনকি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও এ বিষয়ে কিছু বলতে পারেনি।

'এই লিফটে আটকে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু আমি ভয় পাই লিফট কখন বিদ্যুতায়িত হয়ে যায় তা নিয়ে। লিফট যদি বিদ্যুতায়িত হয় আর সেসময় কেউ যদি লিফট স্পর্শ করে তাহলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারাত্মক কিছু ঘটতে পারে। কোনো কোনো সময় হঠাৎ করে লিফট বন্ধ হয়ে যায়, চালু হতে কমপক্ষে ১০ মিনিট লাগে', বলেন তিনি।

এই লিফটটির ভেতরে ও বাইরে নোটিশে লেখা আছে, লিফটটি অনেক পুরাতন। অপারেটর ছাড়া কেউ যেন লিফট ব্যবহার না করেন এবং লিফটম্যানসহ একসঙ্গে মোট তিনজনের বেশি লিফটটি ব্যবহার করতে পারবেন না।

রিপন বলেন,'আমি যেকোনো সময় মারা যেতে পারি সারাক্ষণ এমন ভয় নিয়েই কাজ করতে হয়।'

সম্প্রতি রাজধানীর ১৩টি বড় সরকারি হাসপাতাল সরেজমিনে পরিদর্শন করেছে দ্য ডেইলি স্টার। দেখা গেছে, অধিকাংশ হাসপাতালেই সাধারণ অভিযোগ হলো লিফট খারাপ হয়ে যাওয়া। কোনো কোনো লিফট মাঝে মাঝে জোরে শব্দ করে, কোনো কোনো লিফট আটকে যায় বা দরজায় ত্রুটি দেখা দেয়। কোনোটির আবার সবসময় দরজা খোলা থাকে কিংবা দরজা একবার বন্ধ হয়ে গেলে আর সহজে খোলা যায় না।

লিফট সচল না থাকায় সিজারিয়ান, হৃদরোগ, অস্ত্রোপচারের রোগীদের স্ট্রেচারে সিঁড়ি দিয়ে টেনে তুলতে হয়, যা জীবনের ঝুঁকি বাড়ায়। আর অন্য রোগীদের সিঁড়ি বেয়ে বহুতল ভবনে উঠতে হয় লিফট নষ্ট থাকায়। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে প্রসূতি, শিশু, বৃদ্ধ ও শারীরিকভাবে দুর্বল রোগীদের। এ ছাড়া জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের জীবন পড়ছে ঝুঁকিতে।

গত ১২ মে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লিফটে দীর্ঘ সময় আটকে থাকায় এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে এ রকম করুণ মৃত্যু দেশজুড়ে বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। এ রকম ট্র্যাজেডি নতুন নয়। মহাখালীর জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ৯ তলা থেকে লিফটে উঠতে গিয়ে নিচে পড়ে এক রোগীর মৃত্যু হয়।

সরকারি হাসপাতালগুলোকে অকার্যকর করে একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী রোগীদের অনেক টাকা খরচ করে প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে বাধ্য করেন।

হাসপাতালে লিফট রক্ষণাবেক্ষণের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়েও অনীহা দুর্নীতি ও জবাবদিহিহীনতার ফলাফল। সরকারি হাসপাতালে দুর্নীতি দূরীকরণ ও কঠোর জবাবদিহি প্রচলন না করতে পারলে, করুণ ও নিদারুণ মৃত্যু ঘটতেই থাকবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

লেখকদের নামঃ