৪৫ শতাংশ গ্যাস্ট্রিক আলসারের কারণ মাত্রাতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ
প্রকাশ : ২২ মে ২০২২, ১৬:১৩
![](https://mail.sahos24.com/templates/sahos-v2/images/sahosh.png)
![](/assets/news_photos/2022/05/22/image-76484.jpg)
‘প্রোটন-পাম্প ইনহিবিটর (পিপিআই) বা গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ মাত্রাতিরিক্ত খাবার ফলে ৪৫ শতাংশ গ্যাস্ট্রিক আলসার হয়। এর ফলে মাইক্রো নিউক্রিয়েন্ট যেগুলো লস হচ্ছে, এর ফলে দেহের ফ্রাকচার হয়। এমনকি এই পিপিআই ব্যবহারের ফলে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, বিটামিন -১২ ও আয়রন ডিফিসিয়েন্সি হচ্ছে,’ বলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
রবিবার (২২ মে) সকাল সাড়ে ৮ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ব্লকের মিলনায়তনে ‘ওভারইউজ অব পিপিআই: এ রিভিউ অব এমার্জিং কনসার্ন’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
‘তাই বলে এসব রোগের ভয়ে হঠাৎ করে পিপিআই বন্ধ করা যাবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পিপিআই ক্রমে দুই সপ্তাহ, এক সপ্তাহ করে কমিয়ে দিতে হয়ে। দিনে একটি, দুদিন পরে আরেকটি করে ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। আমরা যদি ডিসিপ্লিনড ভাবে চলাফেরা করি তাতেও অ্যাসিডিটি হবে না। অ্যাসিডিটি না হলে ওষুধ খাওয়া লাগবে না। ওষুধ খাওয়া হলে আরেকটি রোগ তৈরী করা। একটি রোগের জন্য ওষুধ খেলে আরেকটি রোগের সৃষ্টি হতে পারে। কারণ প্রোটন-পাম্প ইনহিবিটর হচ্ছে এমন ধরনের ওষুধ যার প্রধান কাজ হলো পাকস্থলীর প্যারাইটাল কোষ থেকে এসিড নিঃসরণ কমানো।’
বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, ‘আমরা দেখছি বাংলাদেশের মানুষ পণ্যের মত রাস্তাঘাটে ওষুধও কিনে থাকে। অনেকে আবার ফার্মাসিতে গিয়ে দামী ওষুধ কিনে থাকেন। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের ফলে আমরা যে অবস্থায় রয়েছি, তাতে দেশে ২০৫০ সালের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক এর অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে করোনাভাইরাসের চেয়ে বেশি লোক মারা যাবে। আমাদের অনেকে যখন-তখন স্টোরয়েড কিনে খাই, এগুলো খেয়ে মোটাতাজা হই; কিন্তু এর ভবিষ্যৎ খুব খারাপ।’
এসময় করোনাভাইরাসের প্রকোপের সময়ের মত এখনও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান বিএসএমএমইউ উপাচার্য। পাশাপাশি মাংকিপক্স নিয়ে সকলকে সতর্ক থাকতেও বলেন তিনি। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. রাজীবুল আলম বলেন, গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের বড় অংশ বিক্রি হচ্ছে ব্যবস্থাপনাপত্র ছাড়া। রোগীর একটু পাতলা পায়খানা, মাথাব্যথা, পিঠে ব্যথাসহ নানা জটিলতা দেখা দিলে ফার্মেসির দোকানীরা গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ দিচ্ছেন। এই ক্ষেত্রেই একটু পানি পান করালে বা হালকা কিছু ওষুধ ব্যবহার করলে এই সমস্যা সমাধান করা যেত। দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবস্থাপনাপত্র ও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবনের কারণে শরীরে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিচ্ছে। গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবনের কারণে গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার ও স্মৃতিভ্রম মতো ঘটনা ঘটতে পারে। এমনকি ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম কমে আসতে পারে।
তিনি বলেন, রোগীর প্রয়োজন পড়লে অবশ্যই এ ধরনের ওষুধ ব্যবস্থাপনা লিখতে হবে কিন্তু অপ্রয়োজনীয় অতিমাত্রায় এর ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। যত্রতত্র এবং অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ব্যবহার কমাতে নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানান এই বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ বিক্রি বন্ধ করতে হবে। আরও বলেন, ইউএস ও ইউকেতে যখন ইচ্ছা তখন ওষুধ বিক্রি এবং কেনা সম্ভব না। বছরে তিনবার গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ কিনতে পারবেন। এর বেশি কিনতে পারবেন না আপনি। কারণে ওখানে সবকিছুর রেকর্ড থাকে, আর এর বিল পে করে কোন বেসরকারি বীমা প্রতিষ্ঠান। যদি আমাদের দেশে স্বাস্থ্যবীমা থাকতো, তবে ওষুধ বিক্রি ও কেনা এবং তদারকি করা সম্ভব হতো; তাহলে এই অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ বিক্রি ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতো।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গ্যাস্ট্রোএন্টারলোজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. রাজিবুল আলম, ফার্মাকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শরবিন্দু কান্তি সিনহা। নিউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ সবুজের সঞ্চালনায় প্রবন্ধের উপর আলোচনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ- উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশাররাফ হোসেন, উপ উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান।
সাহস২৪/এসটি/এসকে.