বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সময় নিয়ন্ত্রণের প্রতিবাদে উদীচীর সমাবেশ ঘোষণা
প্রকাশ : ১১ এপ্রিল ২০১৮, ১৭:০৭
পহেলা বৈশাখ বাংলা ও বাঙালির প্রাণের উৎসব বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সময় নিয়ন্ত্রণ এবং মুখোশ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিবাদে আগামী ১৩ এপ্রিল শুক্রবার দেশব্যাপী প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
১১ এপ্রিল বুধবার সকাল ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির গোলটেবিল মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক ড. সফিউদ্দিন আহমদ-এর সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করবেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক পাকিস্তান এ দেশে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিষিদ্ধ করতে চেয়েছিল, সর্বত্র তথাকথিত ‘মুসলমানীকরণের’ কর্মসূচি নিয়ে তারা রুদ্ধ করতে চেয়েছিল সহস্র বছরের বাঙালির আচার, ঐতিহ্য ও গৌরবের সংস্কৃতিকে। এ মাটি থেকে উৎসারিত, মাটিবর্তী মানুষের শ্রম ও ঘামের অতুল নিদর্শন বাঙলা নববর্ষ এবং চৈত্র সংক্রান্তিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা পহেলা বৈশাখের উৎসবকে তারা নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করেছিল। ধর্মের দোহাই দিয়ে ‘পহেলা বৈশাখ’সহ নানা সাংস্কৃতিক উৎসব-আচারকে তারা ‘হিন্দুয়ানী’ আখ্যা দিয়েছিল। তারা ভেবেছিল- সাম্প্রদায়িকতার ধুয়া তুলে ব্যাপক মুসলমান জনগোষ্ঠীর সমর্থন পাবে। কিন্তু এ দেশের উদার মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান বা অন্য ধর্ম ও আচার অবলম্বী মানুষ ধর্মীয় পরিচয়কে নয় জাতি পরিচয়কেই উর্ধ্বে তুলে ধরেছিল বারবার। ইতিহাস আমাদের এই শিক্ষাই দেয় যে এই বাংলা নামে ব-দ্বীপটিতে বসবাসকারী মানুষগুলো ধর্মে বর্ণে বিভেদকে কখনোই পাত্তা দেয়নি। পরস্পরের পাশে থেকে সুখ দুঃখকে ভাগ করে নিয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে জামসেদ আনোয়ার তপন বলেন, প্রতিবছর পহেলা বৈশাখ বাংলা বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে কোটি মানুষ উৎসবে মিলিত হয়। রাজপথ থেকে অলিগলি মেতে উঠে নব আনন্দে। ফলে পহেলা বৈশাখের আয়োজনকে যেকোনোভাবে কালিমালিপ্ত করতে উদ্যত অপশক্তি। সম্প্রতি এ শক্তিটি আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা হামলার ভয় দেখিয়ে আবারো বর্ষবরণ অনুষ্ঠানকে রদ করতে চায়। নিরাপত্তার অজুহাতে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও পহেলা বৈশাখের উৎসবের সময় সঙ্কোচনের নীতি গ্রহণ করেছে। যেখানে মৌলবাদী গোষ্ঠীর হামলার হুমকিকে চ্যালেঞ্জ করে উৎসবকে অবারিত করার উদ্যোগ নেওয়া দরকার ছিল সেখানে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপশক্তির হুমকিতে জড়োসড়ো। তারা বিকেল ৫টা পর্যন্ত পহেলা বৈশাখের উৎসবের সময় বেঁধে দিয়ে প্রকারান্তরে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। যা মোটেই কাম্য নয়। সাধারণ মানুষ যেখানে এ উৎসবে স্বতঃস্ফূর্ত ও নির্ভিক সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অত্যুৎসাহী ভূমিকা এবং সরকারের ‘ভয়’ আমাদের ক্ষুব্ধ করে তোলে। তাই সরকারের এই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া যায় না।
উদীচী’র সাধারণ সম্পাদক অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান। পহেলা বৈশাখ ও বাঙালি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে হুমকি দাতাদের বিচারের আওতায় আনার জোর দাবী জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে উদীচী’র সাবেক সভাপতি কামাল লোহানী অভিযোগ করেন, হেফাজতে ইসলামের প্রেসক্রিপশন মেনে সময় সঙ্কোচনের এ সিদ্ধান্ত ঘোষণার মাধ্যমে সরকার সাম্পদায়িক অপশক্তির হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছে।
উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য শংকর সাওজাল বলেন, কোন উৎসবই নিরাপত্তা প্রহরীর ঘেরাটোপে হয় না। নিরাপত্তা দিয়ে শৃঙ্খলিত করা হলে তা মানা হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, যে সংস্কৃতির জন্য আমাদের যুদ্ধ তাকে অবরুদ্ধ করে ফেলার ষড়যন্ত্র চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান, সহ-সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে, ইকবালুল হক খানসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সাহস২৪.কম/রিয়াজ