তামাক পোড়াতে বন উজাড়, বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস আজ

'তামাক নয়, খাদ্য ফলান'

প্রকাশ : ৩১ মে ২০২৩, ১০:০৫

সম্পাদনা : এস এম মুকুল
তামাকের কারণে বছরে প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ মারা যায়

আজ ৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। এ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, দেশে তামাক পোড়াতে উজাড় হচ্ছে ৩০ শতাংশ বন। অপরদিকে তামাক চাষের কারণে কমছে খাদ্য উৎপাদন। তাই বিকল্প খাদ্য ফসল উৎপাদন ও বিপণনের সুযোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং টেকসই ও পুষ্টিকর ফসল চাষে তামাক চাষিদের উৎসাহিত করার লক্ষে এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘গ্রো ফুড, নট টোব্যাকো’। অর্থাৎ 'তামাক নয়, খাদ্য ফলান'।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘তামাক নয়, খাদ্য ফলান’। 

দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তামাকমুক্ত দিবস উদযাপন উপলক্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের আওতাধীন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল (এনটিসিসি) প্রতি বছরের মতো এবারও যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে দিবসটি উদযাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

তামাক- ফসল, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি

তামাক ব্যবহারে দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে বাংলাদেশ। সমীক্ষা বলছে, ধূমপায়ীর মধ্যে ২ কোটি ২০ লাখই গুল-জর্দাসহ ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারী। বিভিন্নভাবে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন আরও ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। 

তামাকের কারণে বছরে প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ মারা যান। মৃত্যুর নেপথ্যে তামাক পাতা পোড়ানো নিকোটিন বিষের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ৮ হাজার রাসায়নিক পদার্থের সঙ্গে ৭০টি ক্যান্সার সৃষ্টিকারী জীবাণু। দিবসটি উপলক্ষে ৩০ মে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ‘মানস’। 

মানসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, তামাক চাষিদের মধ্যে প্রতি চারজনের একজন ‘গ্রিন টোব্যাকো সিকনেস’ বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। একজন তামাকসেবী ৫০টি সিগারেট সেবন করলে যে পরিমাণ নিকোটিন গ্রহণ করেন, ঠিক সেই পরিমাণ নিকোটিন একজন তামাক চাষি এক দিনেই শোষণ করেন, যা রীতিমতো ভয়ানক। 

এ ছাড়া তামাক চাষের এলাকায় গর্ভবতী নারীর নানাবিধ স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেয়। বাংলাদেশে তামাকজনিত অসুস্থতায় প্রতি বছর ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। দেশে মৃত্যু এবং পঙ্গুত্বের প্রধান চারটি কারণের একটি তামাক। 

 তামাকজনিত রোগের চিকিৎসা ব্যয় ও কর্মক্ষমতা হ্রাসের আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা।  তামাকের এসব ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করেই তামাক নিয়ন্ত্রণকে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের অন্তর্ভুক্ত (টার্গেট ৩এ) করা হয়েছে।  

কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে তামাকের সরবরাহ এবং চাহিদা কমিয়ে আনাই হতে পারে তামাকের নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে ওঠার সঠিক উপায়।

খাদ্য উৎপাদনে বড় বাধা - 'তামাক নয়, খাদ্য ফলান'

পরিসংখ্যান বলছে, দেশে প্রতিবছর প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়। তামাক উৎপাদনে বিশ্বের ১২তম অবস্থানে বাংলাদেশ। তামাক বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তায়ও ঝুঁকি তৈরি করছে। সে কারণেই এ বছর বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের প্রতিপাদ্য– তামাক নয়, খাদ্য ফলান।

বর্তমানে, পৃথিবীর ১২৫টিরও বেশি দেশের প্রায় ৪ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয় এবং শীর্ষ তামাক উৎপাদনকারী দেশগুলোর অধিকাংশই নিম্ন ও মধ্যম আয়ভুক্ত দেশ। অন্যদিকে পৃথিবীব্যাপী উৎকৃষ্ট মানের জমি ক্রমবর্ধমানহারে তামাকচাষে ব্যবহৃত হওয়ায় খাদ্য ফসলের জমি ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। 

এসব জমি খাদ্যফসল ফলানোর কাজে ব্যবহার করা গেলে লক্ষ লক্ষ মানুষের খাদ্য চাহিদা পুরণের পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তার সংকট মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সম্ভব।

তামাক পোড়াতে দেশে ৩০ শতাংশ বন উজাড়

এক একর জমিতে যে পরিমাণ তামাক উৎপাদন হয়, তা শুকানোর জন্য প্রয়োজন প্রায় ৫ টন কাঠ। তামাক চাষ ও প্রক্রিয়াজাত করতে বনভূমি দেদার উজাড় হচ্ছে। 

দেশে ৩০ শতাংশ বন উজাড় হয় শুধু তামাক পোড়াতে। তামাক চুল্লিতে প্রতিবছর ২৯ লাখ ৩২ হাজার গাছ পোড়ানো হয়। তামাক চাষে ব্যবহৃত কীটনাশক ও রাসায়নিক জীববৈচিত্র্য, প্রাণীচক্রের অপূরণীয় ক্ষতি করছে।

তামাক নিয়ন্ত্রণে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি :

- চাষিদের তামাক চাষের কুফল সম্পর্কে সচেতন করা।
- তামাক চাষকে নিরুৎসাহিত করার ক্ষেত্রে তামাক চাষিদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।
- তামাকে বিকল্প শস্য উৎপাদন এবং তা উৎপাদনের ক্ষেত্রে কৃষককে সুবিধা প্রদান করা।
- জনপরিসর এবং গণপরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ করা এমনকি তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা।
- ধূমপান নিরোধ আইন আরও শক্তিশালী করা গুরুত্বপূর্ণ।
- প্যাকেটের গায়ের সতর্কতার মোড়ক কমপক্ষে ৮০ শতাংশে বৃদ্ধি করা।
- ৩০০ টাকা জরিমানার বিধান রেখে বাংলাদেশ সরকার ২০০৫ সালে সর্বপ্রথম ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন করেছে। কিন্তু যত্রতত্র ধুমপান চলছেই। পাবলিক প্লেসে ধুমপান বন্ধে কোনো তৎপরতা নেই। তাই এই আইনকে কঠোরভাবে বাস্তবায়নে আরও তৎপর ভুমিকা নিতে হতে হবে এখনই। 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত