কলকাতা সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়

নারী অধিকার: সাঁতারের পোশাক পরা ছবি পোস্ট করে বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যঙ্গ

প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২২, ১৮:০৯

সাহস ডেস্ক

কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রাক্তন শিক্ষিকা সাঁতারের পোশাক পড়ে সামাজিক মাধ্যমে ছবি পোস্ট করায় চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। ঘটনাটি বেশ কিছুদিন আড়ালে থাকলেও সম্প্রতি তা সামনে এসেছে একটি দৈনিক সংবাদমধ্যমে। সংবাদটি ছড়িয়ে পরলে সামাজিক মাধ্যমে জোরেসোরে প্রতিবাদ হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যঙ্গ করে অনেক নারী সাঁতারের পোশাক পরে ছবি পোস্ট করছেন। আবার ‘পোশাক আমার স্বাধীনতা’ এ জাতীয় পোস্টও করছেন অনেকে।

একটি দৈনিককে ওই অপসারিত শিক্ষিকা জানিয়েছেন, ব্যক্তিগত ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে তিনি সাঁতারের পোশাক পরা একটি ছবি দিয়েছিলেন। সেটি কোনোভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র দেখতে পায়। ওই ছাত্রের অভিভাবকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযোগ জানান ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। পরে তাকে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা হয়। ওই শিক্ষিকা আরও জানিয়েছেন, ওই অ্যাকাউন্টটি তার ‘প্রাইভেট’ করা আছে, তাই সেখানে যে কেউ তার ছবি দেখতে পারে না। তার দাবী যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার অনুমতি না নিয়ে ওই ছবির প্রিন্ট আউট নেয় এবং তার সামনেই শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সদস্যদের দেখানো হয় সেটি।

মাত্র একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন ওই শিক্ষিকা। বিষয়টি আদালতে আছে বিধায় তিনি আর কারও সঙ্গে কথা বলতে চাইছেন না। আর সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয় কোনও মন্তব্যই করেনি এখনও পর্যন্ত।

তাই বলে কেউ চুপ করে থাকেনি। প্রতিবাদ হিসেবে অনেক নারী সাঁতারের পোশাক পরে ছবি পোস্ট করছেন। আবার ‘পোশাক আমার স্বাধীনতা’ এ জাতীয় পোস্টও করছেন। ফেসবুকে মেয়েকে নিয়ে সাঁতারের পোশাক পরা ছবি পোস্ট করেছেন এক ব্যবসায়ী নারী সুজাতা ঘোষ। তিনি বলেছেন, “সেন্ট জেভিয়ার্সে যা ঘটেছে, তা একটা ঘৃণ্য ঘটনা। একজন শিক্ষিকা তার ব্যক্তিগত জীবনে কী করছেন, সেটা তো তার ব্যক্তিগত পরিসর। সেখানে ঢুকে পরে কোনও ছাত্র যদি শিক্ষিকার ছবি দেখে উত্তেজিত হয়, তাহলে দোষটা তো সেই ছাত্রের। এইসব ছাত্ররা বড় হয়ে তার বান্ধবী বা স্ত্রীকে নির্দেশ দিতে থাকবে যে কী পরতে হবে।” তিনি মন্তব্য করেছেন, “ছোট পোশাক পরা মেয়েদের দেখলে এধরনের ছেলেদের মনেই ধর্ষণের ইচ্ছা জাগে।” তিনি আরও বলেন, “আমি মা, সংসার করি, আবার ব্যবসাও করি। সম্পূর্ণ স্বাধীন আমি। তাই আমাকে কেউ ডিক্টেট কেন করবে যে আমার কোনটা করা উচিত আর কোনটা অনুচিত! আমি যেমন কোনও নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে সুইম স্যুট পরে যাব না, আবার তেমনই সাঁতার কাটতে গিয়ে আপাদমস্তক মুড়িয়ে স্নান করতে নামব না।”

সাঁতারের পোশাক পরে ছবি দেয়ার পাশাপাশি অনেকে অনলাইনে চিঠি লিখেও প্রতিবাদ করছেন। ‘টেক দ্যাট জেভিয়ার্স’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে অনুরাধা রায়চৌধুরী লিখিত প্রতিবাদ জানিয়েছেন, “আমরা আসলে ছেলেদের সংবেদনশীল হওয়ার শিক্ষাটা দিই না। যতি শিক্ষা আমরা মেয়েদের দিই যে তুমি এটা করবে, এটা করবে না। অথচ ছেলেদের এটা বোঝাই না তুমি কোনটা করবে না। ওই ছাত্রের বাবা মায়ের এটা তাকে বোঝানো উচিত ছিল যে পড়াশোনার বিষয়ের বাইরে গোপনে কোনও শিক্ষিকার ছবি দেখাটা অনুচিত। আর তার ভিত্তিতে শিক্ষিকাকে জাজ করো না এটা বলা উচিত ছিল তাদের।” তিনি প্রশ্ন রেখেছেন, “পড়ানোর বাইরে কোন শিক্ষিকা কী করছেন, সেটা দেখার দায়িত্ব ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কে দিল?” তার মতো আরও অনেকেই এমন প্রতিবাদ করছেন।

শুধু যে নারীরাই প্রতিবাদ করছেন, তা নয়। অনেক পুরুষকেও দেখা যাচ্ছে ঘটনাটি নিয়ে ফেসবুক, টুইটারে লিখতে। আবার প্রতিবাদ আসছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রাক্তনীদের কাছ থেকেও। অর্য্যানী ব্যানার্জী নামের একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী বলেছেন, “সেন্ট জেভিয়ার্সের প্রাক্তনী হয়ে আমরা ভাবতেই পারি না যে এরকম একটা ঘটনা হবে। অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। নীতিপুলিশগিরি করা সমাজের কোনও স্তরে, কোনও সময়েই মেনে নেওয়া যায় না। একজন শিক্ষিকার ব্যক্তিগত জীবনের কোনও একটা ছবি দেখে তা নিয়ে অভিযোগ জমা পরছে, এটা ভাবাই যায় না। অন্তত আমাদের সময়ে এরকম তো ছিল না কলেজটা।”

সূত্র: বিবিসি

সাহস২৪.কম/এসকে.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত