লিসিচ্যাংস্কেও রুশ বাহিনী, ওদেসা-চেরকাসিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

পূর্ব ইউক্রেনের লুহানস্ক প্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ শহর লিসিচ্যাংস্কের নিয়ন্ত্রণ নিতে রাশিয়া ও তাদের মদতপুষ্ট বাহিনীগুলো তুমুল আক্রমণ চালাচ্ছে। মস্কো সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা লিসিচ্যাংস্কের একাধিক অংশে তাদের অগ্রগতির খবরও দিয়েছে। সোমবার (২৭ জুন) এ তথ্য জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

রবিবার (২৬ জুন) রুশ বাহিনী ইউক্রেইনের রাজধানী কিইভেও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ হামলাকে ‘বর্বরতা’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন। রুশ ক্ষেপণাস্ত্র মধ্যাঞ্চলীয় শহর চেরকাসিতে ও দক্ষিণের ওদেসায়ও আঘাত হেনেছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেন। এর আগে শনিবার লিসিচ্যাংস্কের জমজ শহর সিয়েভিয়ারোদোনেৎস্কের পতন ঘটেছিল। এই দুই শহরের দখল পেলে লুহানস্ক পুরোপুরি রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে চলে যাবে। এটি ক্রেমলিনের জন্যও বড় ধরনের বিজয় বলে বিবেচিত হবে। ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযানে’ মস্কো যেসব লক্ষ্য স্থির করেছিল, তার অন্যতম ছিল দনবাসের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই প্রদেশ লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক মিলেই দনবাস।

মস্কো সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা তাসকে জানান, তারা পাঁচ দিক থেকে লিসিচ্যাংস্কে ঢুকে পড়েছেন এবং ইউক্রেনের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের কোণঠাসা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এর সত্যতা যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স। ইউক্রেইনর সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ জানায়, রুশ বাহিনী কামান ব্যবহার করে লিসিচ্যাংস্ককে দক্ষিণ দিক থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার চেষ্টা করছে। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা শহরটিতে প্রবেশ করেছে কিনা, সে বিষয়ে কিছু বলেনি তারা। সোমবার তাদের নতুন তথ্য বিবরণীতে রাশিয়ার বিমান লিসিচ্যাংস্কের কাছে হামলা চালাচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।

বার্তা সংস্থা আরআই এ জানায়, সিয়েভিয়ারোদোনেৎস্কের আজোত রাসায়নিক কারখানা থেকে শিশুসহ আড়াইশর বেশি বেসামরিককে উদ্ধার করা হয়েছে। শহরটি ছেড়ে যাওয়ার আগে সর্বশেষ যে স্থাপনাটি কিইভবাহিনীর হাতে ছিল, তা হচ্ছে ওই আজোত কারখানা। ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ওলেক্সি আরেস্তোভিচ রয়টার্সকে জানান, রবিবার রুশ ক্ষেপণাস্ত্র মধ্যাঞ্চলীয় শহর চেরকাসির একটি কৌশলগত সেতুতে আঘাত হেনেছে যা ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে পূর্বাঞ্চলের সংযোগে ব্যবহৃত হতো। তিনি বলেন, ‘তারা (রাশিয়া) পূর্বাঞ্চলে পশ্চিমা অস্ত্রশস্ত্র ও আমাদের রিজার্ভ পাঠানো আটকাতে চেষ্টা করছে।’ ওদেসা আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র সেরহি ব্রাতচুক জানান, ওদেসায় পড়া রুশ ক্ষেপণাস্ত্রটি কয়েকটি বেসামরিক ভবনের ক্ষতি করেছে এবং এক শিশুসহ ছয়জন আহত হয়েছে।

এদিকে রাশিয়া তাদের অভিযানের শুরু থেকেই বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালানো হচ্ছে না বলে দাবি করে আসছে। কিইভে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় এক ভিডিও বার্তায় ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানান, রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে ইউক্রেনের এখনই অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনা দরকার। তিনি বলেন, ‘অংশীদারদের দ্রুত অস্ত্রশস্ত্র পাঠানো দরকার। যদি তারা সত্যিই অংশীদার হয়, দর্শক নয়। এই অবস্থায় অস্ত্রশস্ত্র পাঠাতে দেরি বা কোনো বিধিনিষেধ থাকলে, তা হবে কার্যত রাশিয়াকে আমাদের শহরগুলোতে বারবার আঘাত হানার আমন্ত্রণ জানানো।’

যুক্তরাষ্ট্র আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ইউক্রেনের জন্য অত্যাধুনিক মাঝারি থেকে দূরপাল্লার ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার ঘোষণা দিতে যাচ্ছে বলে বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে। জি-৭ সম্মেলনের পর চলতি সপ্তাহে ইউরোপে নেটোরও শীর্ষ সম্মেলন হওয়ার কথা। সেখান থেকেও ইউক্রেনে আরও অস্ত্রশস্ত্র পাঠানোর ঘোষণা আসতে পারে।

সাহস২৪.কম/টিএ/এসকে.