বেলারুশকে পরমাণুবাহী ক্ষেপণাস্ত্র দিচ্ছে রাশিয়া

প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২২, ১৩:০৯

সাহস ডেস্ক

মিত্র বেলারুশকে পরমাণু বহনে সক্ষম স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাতে যাচ্ছে রাশিয়া। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এই ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাবে বলে জানিয়েছেন ‍প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই ইস্কান্দার এম ব্যবস্থা প্রচলিত ও পরমাণুবাহী উভয় ধরনের ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে পারে। ইস্কান্দার এমের পাল্লা ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

এদিকে চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি পুতিন ইউক্রেন আক্রমণ করেন। এরপর থেকে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক চরম উত্তেজনাকর পর্যায়ে পৌঁছায়। গত চার মাসে তিনি একাধিকবার পারমাণবিক অস্ত্রের কথা মুখে এনেছেন। যার মাধ্যমে তিনি পশ্চিমা দেশগুলোকে ইউক্রেন ইস্যুতে হস্তক্ষেপ না করে সে বিষয়ে সাবধান করে দিতে চেয়েছেন।

সেইন্ট পিটার্সবার্গের বৈঠকে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো অনুরোধ করার পর পুতিন মিনস্কের এস-২৫কে পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম করতে বিমানগুলোর আধুনিকায়নে রাশিয়া সাহায্য করবে বলে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। একইদিন ইউক্রেন জানিয়েছে, কয়েক সপ্তাহের তুমুল লড়াইয়ের পর পূর্বাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত শহর সিয়েভিয়ারোদোনেৎস্ক এখন ‘পুরোপুরি রুশ বাহিনীর দখলে’। এতে করে রাশিয়া এবং তাদের সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এখন লুহানস্কের প্রায় সব অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক এই দুই প্রদেশ মিলিয়ে শিল্পসমৃদ্ধ দনবাস অঞ্চল। ইউক্রেনে রাশিয়া সেনা পাঠানোর পর এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়াই তাদের অন্যতম লক্ষ্য ছিল।

শনিবার এক ভিডিওবার্তায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে যাওয়া সব শহর ‘দখলমুক্ত’ করার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে যুদ্ধ যে এখন খুবই কঠিন পর্যায়ে আছে তা স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি।

এদিকে ইউক্রেনের উত্তর ও পশ্চিমে বিভিন্ন স্থাপনা শনিবার রাতেও রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার শিকার হয়েছে। কিয়েভের পশ্চিমের সারনি শহরে রুশ হামলায় অন্তত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। আরও অনেক মৃতদেহ ধ্বংসস্তূপের নিচে পাওয়া যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাদের স্থাপনায় উড়ে আসা কিছু ক্ষেপণাস্ত্র বেলারুশের ভূখণ্ড থেকে ছোড়া হয়েছে বলেও দাবি করেছে ইউক্রেন। রাশিয়া ইউক্রেনে তাদের ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরুর পর বেলারুশ তাদেরকে নানা ধরনের সহায়তা দিলেও আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সেনা এই সংঘাতে নামেনি।

ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থা বলছে, বেলারুশ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার মাধ্যমে রাশিয়া বেলারুশকেও যুদ্ধে টেনে আনতে চাইছে। রুশ বাহিনী ও তাদের মিত্রদের সিয়েভিয়ারোদোনেৎস্ক দখল চলতি সপ্তাহে হতে যাওয়া জি৭ ও নেটো সম্মেলনকেও প্রভাবিত করবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পশ্চিমা দেশগুলোকে ইউক্রেন নিয়ে ‘খানিকটা বিরক্ত ও ক্লান্ত’ দেখা গেলেও শনিবার যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, ‘ইউক্রেন এখনও রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জিততে পারে। ইউক্রেন নিয়ে হাল ছেড়ে দেওয়ার সময় নয় এখন।’

সেইন্ট পিটার্সবার্গে লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক বৈঠকে পুতিন বলেন, ‘আমরা একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বেলারুশকে আমরা কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ইস্কান্দার-এম দিতে যাচ্ছি।’ এই পরমাণু বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের পুরো ব্যাপার নিয়ে দুই দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ করছে।

মূল ভূখণ্ডের বাইরে বাল্টিকে রুশ ছিটমহল কালিনিনগ্রাদেও এই ইস্কান্দার-এম ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা আছে। কালিনিনগ্রাদ নেটো সদস্য পোল্যান্ড ও লিথুনিয়ার মাঝে অবস্থিত। সেইন্ট পিটার্সবার্গে দুই প্রেসিডেন্টের বৈঠকে কিছু রুশ পণ্য কালিনিনগ্রাদে নিয়ে যেতে বা সেখান থেকে আনতে লিথুনিয়ার বাধাদানের বিষয়টিও স্থান পেয়েছে। লিথুনিয়ার ওই পদক্ষেপ মস্কোকে ক্ষেপিয়ে দিয়েছে, এর প্রতিক্রিয়া ‘লিথুনায়াবাসীর জন্য সুখকর হবে না’ বলে সতর্কও করেছে তারা। বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো লিথুনিয়ার ওই পদক্ষেপকে ‘এক ধরনের যুদ্ধ ঘোষণা’ ও ‘অগ্রহণযোগ্য’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন।

ইউক্রেনে মস্কোর হামলার প্রেক্ষিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেওয়া নিষেধাজ্ঞায় ইস্পাত ও বেশকিছু রুশ পণ্য পড়েছে। লিথুনিয়া বলছে, তারা ইইউ’র নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করায় কালিনিনগ্রাদ রুটে রাশিয়ার পণ্য পরিবহনের কেবল ১ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। লিথুনিয়ার পদক্ষেপ কালিনিনগ্রাদকে ‘অবরুদ্ধ’ করার শামিল বলে মস্কো যে অভিযোগ করছে ভিনিয়ুস তা উড়িয়েও দিয়েছে।

সাহস২৪.কম/টিএ/এএম/এসকে.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত