মাঙ্কিপক্স সংক্রমণ ঠেকাতে দেশের সব বন্দরে সতর্কতা জারি

প্রকাশ : ২২ মে ২০২২, ১৮:১০

সাহস ডেস্ক

মহামারী করোনাভাইরাস সংক্রমণ শেষ না হতেই এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১১টি দেশে ছড়িয়ে পড়া মাঙ্কিপক্স ভাইরাস নিয়ে উদ্বিগ্ন পুরো বিশ্ব। তাই দেশে ভাইরাসটির সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরগুলোতে আক্রান্ত দেশ থেকে আসা যাত্রীদের ওপর সজাগ দৃষ্টি রাখা এবং হেলথ স্ক্রিনিং জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

শনিবার (২১ মে) রাতে গণমাধ্যমেকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম।

ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘এয়ারপোর্ট, ল্যান্ড পোর্টসহ পোর্ট আমরা সতর্কতা জারি করছি। এছাড়া এয়ারপোর্টে মেডিক্যাল অফিসারদের সতর্ক থাকতে বলেছি। সন্দেহভাজন কেউ এলে যেন তাকে চিহ্নিত করা যায় এবং দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘মাঙ্কিপক্স নিয়ে আমাদের এতো আতঙ্ক হওয়ার সুযোগ নেই। আমরা ভাইরাসটির সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা সারাবিশ্ব থেকেই তথ্য উপাত্ত নেব এবং প্রয়োজন অনুযায়ী যা ব্যবস্থা নেওয়ার সেটি আমরা করবো।’

মাঙ্কিপক্সের বিষয়ে সব জেলার সিভিল সার্জনদের সতর্ক করা হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নে ডা. নাজমুল বলেন, ‘আমরা যখন কোনো নির্দেশনা দিই, তখন সেটি জেলা সিভিল সার্জন থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য বিভাগের সব পর্যায়েই চলে যায়। সব জেলায় তো স্থলবন্দর নেই। যেসব জেলায় আছে সেগুলোতে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।’

জেলা পর্যায়ে সিভিল সার্জনদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে অধিদপ্তরের এই পরিচালক বলেন, ‘জেলা পর্যায়ে আমরা চিঠি দিয়েছি। তবে যেহেতু সব জায়গায় পোর্ট নেই সেজন্য সব জায়গায় এটা এখনো তেমন গুরুত্বপূর্ণ না। তবে এয়ারপোর্ট দিয়েই যেহেতু আসতে পারে তাই এ ক্ষেত্রেই আমরা সবচেয়ে বেশি সতর্কতা রয়েছে।’

অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সারা বিশ্বে আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে মাঙ্কিপক্সের রোগী শনাক্ত হয়েছে। মাঙ্কিপক্স নতুন রোগ নয়, তবে অতীতে এ ধরনের রোগী পশ্চিম আফ্রিকা বা মধ্য আফ্রিকান দেশগুরোতে এন্ড্রেমিক হিসেবে ধরা হয়। পূর্বে শুধুমাত্র পশ্চিম আফ্রিকা বা মধ্য আফ্রিকান দেশগুলোতে ভ্রমণকারীদের না বাসিন্দাদের মধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে। সম্প্রতি ওই দেশগুলোতে ভ্রমণের ইতিহাস নেই, ইউরোপ ও আমেরিকায় বসবাসকারী এমন ব্যক্তিদের মধ্যে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, যেসব রোগীদের মধ্যে ফুসকুড়ি দেখা যায় এবং সম্প্রতি মাঙ্কিপক্সের নিশ্চিত কেস আছে এমন দেশগুলোতে ভ্রমণ করেছেন, অথবা এমন কোনো ব্যক্তি বা লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন যাদের একই রকম ফুসকুড়ি দেখা গেছে বা নিশ্চিত বা সন্দেহজনক মাঙ্কিপক্স রোগী হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন এমন রোগীদেরকে মাঙ্কিপক্সের জন্য সন্দেহজনক রোগীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সন্দেহজনক ও লক্ষণযুক্ত রোগীকে নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে বা সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, ঢাকায় আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা ও আইইডিসিআর-এ তথ্য পাঠাতে হবে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে বেলজিয়াম, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল, স্পেন, সুইডেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ায় এই মাঙ্কিপক্স’ এর সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত শুক্রবার স্পেনে ২৪ জনের দেহে মাঙ্কিপক্স সংক্রমণ ধরা পড়েছে। ইসরাইলের এক হাসপাতালে ৩০ বছর বয়সী ব্যক্তিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। যার শরীরে মাঙ্কিপক্সের লক্ষণ দেখা গেছে। তিনি সম্প্রতি পশ্চিম ইউরোপ ভ্রমণ শেষে ইসরাইলে গেছেন। বিভিন্ন সূত্র বলছে, বর্তমানে মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাব শনাক্ত হওয়া লোকজনের মাঝে- এমন অনেক পুরুষ আছেন, যারা পুরুষদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করেছেন। স্পেনের মাদ্রিদ অঞ্চলের সাউনার কয়েকটি ঘটনায় এ ধরনের শারীরিক সম্পর্কের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।

শুক্রবার (২০ মে) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচ) জানিয়েছিল, এরই মধ্যে ইউরোপের ১১টি দেশে রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্তের সংখ্যাও ছাড়িয়েছে ১০০।

অবশ্য, বিজ্ঞানীরা করোনাভাইরাস মহামারির মতো সংক্রমণের আশঙ্কা করছেন না। সার্স-কভ-২ ভাইরাসের মতো সহজে মাঙ্কিপক্স ছড়ায় না বলে তারা মনে করছেন। মাঙ্কিপক্স সাধারণ একটি ভাইরাসজনিত মৃদু রোগ। এটি প্রাণীবাহিত। এর উপসর্গের মধ্যে রয়েছে জ্বর ও ফুসকুড়ি।

প্রসঙ্গত, গত ৭ মে প্রথম একজন ইউরোপীয় নাগরিকের দেহে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়। নাইজেরিয়া থেকে ওই ব্যক্তি ইংল্যান্ডে ফিরে এসেছিলেন। এরপর থেকে আফ্রিকার বাইরে ১০০ জনের সংক্রমণ নিশ্চিত করার কথা জানিয়েছে ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড একাডেমিক।

বানরে শনাক্ত হওয়া রোগটি ঘনিষ্ঠ স্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়। তবে আফ্রিকার বাইরে রোগটিতে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা এতদিন পর্যন্ত বিরল ছিল। ফলে ইউরোপসহ যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায় রোগটি ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

সাহস২৪.কম/এআর/এসকে.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত