আফ্রিকা ছাড়িয়ে ইউরোপ আমেরিকা ঘুরছে মাংকিপক্স

প্রকাশ : ২০ মে ২০২২, ১৬:১৪

সাহস ডেস্ক

পুরোপুরি সারেনি করোনাভাইরাসের ভয়। এসব ছাপিয়ে পুরোনো ভয়ঙ্কর রোগ বিশ্বকে ফেলে দিয়েছে নতুন দুশ্চিন্তায়। মাংকিপক্স। ইতোমধ্যে ব্রিটেন, স্পেন, পর্তুগাল ও যুক্তরাষ্ট্রে শনাক্ত হয়েছে ছোঁয়াচে এ রোগ। বিরল এই রোগ ছড়িয়ে পড়ায় সতর্কতা জারি করেছে ইউরোপের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রে শনাক্ত হয়েছে মাংকিপক্স। এই অসুখটির কোনো সন্ধান ছিল না অনেকদিন। কিন্তু অতীত থেকে নতুন রূপে ফিরে এল ভাইরাসটি। আর তাতেই নানা ধরনের আশঙ্কায় রয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

ক্যানাডায় মাংকিপক্সের ১৩টি কেসের ঘটনা পাওয়া গেছে যা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তদন্তাধীন রয়েছে। এছাড়াও পর্তুগালে এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ জন। স্পেনে আরো সাতজন সংক্রমিত হয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে। ব্রিটেনে আক্রান্ত হয়েছেন মোট নয় জন।

মানবদেহে স্মলপক্সের মতোই প্রতিক্রিয়া তৈরি করে মাংকিপক্স। যা পেশীতে ব্যথা, গলা ফোলা উপসর্গ দিয়ে শুরু হয়ে সাধারণ ফ্লুজনিত জ্বর দেখা দেয়। পরে মুখ ও শরীরে চিকেনপক্সের মতো র‌্যাশ দেখা যায় বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র। সাধারণত পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার বিভিন্ন অংশে এই বিরল রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। তবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ায় এটি মারাত্মক রূপ নিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বানর, ইঁদুর, কাঠবিড়ালি এমনকি মাংকিপক্সে আক্রান্ত রোগীর ব্যবহৃত বিছানাপত্র থেকেও এই ভাইরাস অন্যকে সংক্রমিত করতে পারে। শ্বাস-প্রশ্বাস, ত্বকের ক্ষত থেকে, নাক-মুখ-চোখের ভেতর দিয়ে এই ভাইরাস মানবদেহে প্রবেশ করে।

এই রোগ প্রথম ছড়িয়েছিল একটি বানর থেকে। এরপর ১৯৭০ সাল থেকে আফ্রিকার ১০টি দেশে মাংকিপক্সের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। মাংকিপক্স দু'ধরনের হয়ে থাকে- মধ্য আফ্রিকান এবং পশ্চিম আফ্রিকান।

ব্রিটেনে এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন যে দু'ব্যক্তি এরা সম্প্রতি নাইজেরিয়া সফর করেছেন। এরা সম্ভবত পশ্চিম আফ্রিকা ধরনের মাংকিপক্সে আক্রান্ত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তৃতীয় যে ব্যক্তি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি একজন স্বাস্থ্যকর্মী। তিনি রোগীদের কাছ থেকে এই ভাইরাস পেয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

এই রোগের প্রাথমিক উপসর্গ হচ্ছে জ্বর, মাথাব্যথা, হাড়ের জয়েন্ট ও মাংসপেশিতে ব্যথা এবং দেহে অবসাদ। জ্বর শুরু হওয়ার পর দেহে গুটি দেখা দেয়। এসব গুটি শুরুতে দেখা দেয় মুখে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে হাত এবং পায়ের পাতাসহ দেহের সব জায়গায়। এই গুটির জন্য রোগী দেহে খুব চুলকানি হয়। পরে গুটি থেকে ক্ষত দেখা দেয়। গুটি বসন্তের মতোই রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলেও দেহে এসব ক্ষত চিহ্ন রয়ে যায়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই ভাইরাসের প্রভাব বেশ মৃদু। এর বৈশিষ্ট্য জল বসন্তের মতোই, এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম এই ভাইরাসে রোগী শনাক্ত হয় ২০০৩ সালে। সেটাই ছিল এই ভাইরাস আফ্রিকার বাইরে ছড়িয়ে পড়ার প্রথম কেস। যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত ৮১টি কেস ধরা পড়েছে। মাংকিপক্সের সবচেয়ে বড় প্রকোপ দেখা দেয় নাইজেরিয়াতে, ২০১৭ সালে। সে দেশে মাংকিপক্সের প্রথম কেস ধরা পড়ার ৪০ বছর পর। এতে ১৭২ জন আক্রান্ত হন।

এই ভাইরাসের কোনো চিকিৎসা নেই। তবে যে কোনো প্রাদুর্ভাবের মতোই উপযুক্ত পদক্ষেপ নিয়ে এর প্রকোপ রোধ করা যায়। গুটি বসন্তের টিকা ৮৫% কার্যকর বলে দেখা গেছে। মাংকিপক্সের জন্য এখন এই টিকাই ব্যবহার করা হচ্ছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাপক হারে ছড়িয়ে না পড়লে এই ভাইরাস নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। ইংল্যান্ডের পাবলিক হেলথ বিভাগের কর্মকর্তা ড. নিক ফিন বলছেন, এটা বুঝতে হবে যে মাংকিপক্সের ভাইরাস খুব সহজে মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারে না। সে কারণেই এখন পর্যন্ত মাংকিপক্স নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সাহস২৪/এআর/এসটি/এএম/এসকে.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত