তিন দশক পর নারী প্রধানমন্ত্রী পেল ফ্রান্স

প্রকাশ : ১৭ মে ২০২২, ১৯:২২

সাহস ডেস্ক

গত তিন দশক মধ্যে প্রথম ও আধুনিক ফ্রান্সের ইতিহাসে দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক শ্রমমন্ত্রী এলিজাবেথ বোর্ন। দ্য গার্ডিয়ান জানায়, সোমবার (১৬ মে) আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী জ্যঁ কাসটেকসের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন তিনি। “এ নিয়োগ ফ্রান্সের ছোট ছোট মেয়েদের উৎসর্গ করছি। তাদের বলতে চাই, নিজের স্বপ্নকে অনুসরণ করে যাও। কোন বাঁধাই আমাদের সমাজে নারীর অবস্থানের জন্য লড়াইকে থামাতে পারবে না,” দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত ভাষণে বলেন এলিজাবেথ বোর্ন। সূত্র দ্য গার্ডিয়ান।

একষট্টি বছর বয়েসী এলিজাবেথ পেশায় প্রকৌশলী। দীর্ঘদিন কাজ করেছেন ফ্রান্স সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে। এবার দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হোন ইমানুয়েল ম্যক্রোঁ। নতুন মন্ত্রিসভার জন্য এলিজাবেথকে বেছে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। সরকারের প্রতিশ্রুত নীতিমালার বাস্তবায়ন এবং ইউক্রেনে যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে উচ্চ মূল্যস্ফীতি সামলানোর চ্যালেঞ্জ এখন নতুন প্রধানমন্ত্রী বোর্নের হাতে। আগামী মাসেই হতে যাচ্ছে দেশটিতে পার্লামেন্ট ইলেকশন। এই মুহুর্তে এলিজাবেথ বোর্নের প্রথম কাজ হতে যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট ম্যক্রোঁর মধ্যপন্থি রাজনৈতিক দলের ভেতরের মতদ্বৈততাগুলো ঠিক করা। নির্বাচনে ম্যক্রোঁর দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য সেটা জরুরি বিষয়। এই গ্রীষ্মে পার্লামেন্ট নির্বাচনে জয় পেলে প্রধানমন্ত্রী বোর্নেকে লাগাম টানতে হবে জ্বালানি মূল্যের। জীবনযাপনের ব্যয় বৃদ্ধির হাত থেকেও রক্ষা করতে হবে বুদ্ধি খাটিয়ে। ম্যক্রোঁর অজনপ্রিয় পেনশন নীতিমালার বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জকেও হাতে নিতে হবে তাকে। বর্তমান পেনশন শুরুর বয়স ৬২ বছরের সীমা থেকে বাড়িয়ে ৬৪ বা ৬৫ বছরে উন্নীত করতে চাইছেন প্রেসিডেন্ট ম্যক্রোঁ। এই নীতির বিরুদ্ধে এরইমধ্যে রাজপথে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছে শ্রমিক ইউনিয়নগুলো। এছাড়া কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে ‘সবুজ পরিকল্পনা’ বাস্তবায়নের পরিবেশ নীতিমালা নিয়েও কাজ করতে হবে এলিজাবেথ বোর্নকে।

প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিতেরাঁর আমলে (১৯৯১ মে থেকে ১৯৯২ এপ্রিল) একমাত্র নারী হিসেবে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছিলেন ইদিথ ক্রেসোঁ। “অনেক আগেই এটা হওয়া উচিত ছিল।” দীর্ঘ বিরতির পর প্রধানমন্ত্রী পদে আরেকজন নারী আসার খবরে ফরাসি গণমাধ্যম বিএফএমটিভিকে বলেন ক্রেসোঁ। ফ্রান্সের রাজনীতি এখনও অনেক বেশি ‘পুরুষালী’- কিছুদিন আগেই মন্তব্য করেছিলেন ক্রেসোঁ। আর গত সপ্তাহে আইফপ পরিচালিত এক জরিপে ৭৪ শতাংশ নাগরিক বলেছিলেন, নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একজন নারীকে দেখতেই তারা পছন্দ করবেন।

ম্যক্রোঁর সরকারে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর সামলেছেন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে। পরিবহন, পরিবেশ ও শ্রম মন্ত্রণালয়ে কঠিন নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সুনাম রয়েছে তার। এলিজাবেথ বোর্ন মন্ত্রী থাকার সময়ই ফ্রান্সে রেল ব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কার আনা হয়। সে সময় কয়েক দশকের মধ্যে বড় ধরনের ধর্মঘটের ভেতর দিয়ে যেতে হয় ফ্রান্সকে। প্রেসিডেন্ট ম্যক্রোঁর মিত্র ক্রিস্তফ কাস্তানারের ভাষায়, এলিজাবেথ বোর্ন 'স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড' বলতে পছন্দ করা একজন নেতা। যিনি অসম্ভব কিছুকে সম্ভব করতে পারদর্শী।

সাহস২৪/এসটি/এসকে.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত