করোনাভাইরাস: ভারতে হিন্দুদের কুম্ভমেলায় লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগম

প্রকাশ : ১৩ এপ্রিল ২০২১, ১৭:২৯

বিবিসি বাংলা

ভারতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাক্কা যখন প্রায় রোজই আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিচ্ছে, তখন হরিদ্বারের কুম্ভ মেলায় লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগমে কোনও ধরনের কোভিড প্রোটোকল মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

হিন্দুদের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় জমায়েতে হরিদ্বারে গঙ্গার তীরে চলতি মাসে প্রতিদিন অন্তত সাত থেকে আট লক্ষ পুণ্যার্থী জড়ো হচ্ছেন - কিন্তু সেখানে মাস্ক পরা, থার্মাল স্ক্রিনিং কিংবা কোভিড টেস্ট রিপোর্ট পরীক্ষার কোনও বালাই নেই বলেই নানা রিপোর্টে বলা হচ্ছে।

এপ্রিল মাসের পুরোটা জুড়েই হরিদ্বারে চলছে কুম্ভমেলার আয়োজন - তার মধ্যে ১২, ১৪ ও ২৭ তারিখ 'শাহী স্নান' বা সবচেয়ে পুণ্য দিন বলে গণ্য করা হয়।

সোমবার (১২ এপ্রিল) এই উপলক্ষে হরিদ্বারে ২৮ লক্ষেরও বেশি ভক্ত গঙ্গায় ডুব দিতে জড়ো হয়েছিলেন।

কিন্তু 'দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস' পত্রিকার একটি রিপোর্ট বলছে, এর মধ্যে রবিবার রাত থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত মাত্র ১৮ হাজার তীর্থযাত্রীর কোভিড পরীক্ষা করানো সম্ভব হয়েছে - যার মধ্যে ১০২ জন পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন।

এরই মধ্যে উত্তরাখন্ড রাজ্যের পুলিশ প্রধান অশোক কুমার দাবি করেছেন, হরিদ্বারের কুম্ভমেলাকে তারা কোনও 'সুপার স্প্রেডার ইভেন্ট' বলে মনে করছেন না।

ইন্ডিয়া টুডে পত্রিকাগোষ্ঠীকে তিনি বলেন, কুম্ভমেলায় ৫৩ হাজার লোকের কোভিড পরীক্ষা করা হলেও তার মধ্যে 'পজিটিভিটি রেট' বা শনাক্তের হার মাত্র ১.৫ শতাংশ।

তা ছাড়া সমাগত ভক্তদের ৯০ শতাংশই রাতে হরিদ্বারে থাকছেন না বলেও তিনি দাবি করেন।

প্রসঙ্গত, গত বছরের মার্চে দিল্লির নিজামুদ্দিনে তাবলীগ জামাতের যে মারকাজে দেশ-বিদেশের হাজার হাজার মুসুল্লী জড়ো হয়েছিলেন, সেটিকে করোনা সংক্রমণের একটি 'সুপার স্প্রেডার' ইভেন্ট হিসেবে সরকারি কর্মকর্তারাই চিহ্নিত করেছিলেন।

তাবলীগকে করোনাভাইরাস ছড়ানোর জন্য ঢালাওভাবে দায়ী করা হলেও এখন কীভাবে কুম্ভমেলাকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে, ভারতে এই প্রশ্নও তুলছেন অনেক পর্যবেক্ষক।

তবে উত্তরাখন্ডের বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী তীরথ সিং রাওয়াত সম্প্রতি দাবি করেছেন, দিল্লিতে তাবলীগের মারকাজ আর হরিদ্বারের কুম্ভমেলার মধ্যে কোনও তুলনাই চলে না।

দ্য হিন্দুস্তান টাইমস-কে তিনি বলেন, "দুটোর মধ্যে তুলনা হয় না, কারণ মানুষ এখন জানে নিয়মিত হাত স্যানিটাইজ করতে হবে এবং মাস্ক পরতে হবে। তখন কিন্তু এগুলো জানা ছিল না।"

কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, হরিদ্বারে জমায়েত হওয়া লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রীর প্রায় কেউই কিন্তু মাস্ক পরছেন না।

মেলায় প্রবেশ করার ক্ষেত্রে কোভিড আরটি-পিসিআর টেস্টের নেগেটিভ রিপোর্ট দেখানো বাধ্যতামূলক হলেও বাস্তবে সেই পরীক্ষার ব্যবস্থা একেবারেই ঢিলেঢালা বা অনুপস্থিত বলেও অভিযোগ উঠছে।

এই পটভূমিতেই কুম্ভমেলা নিয়ে কর্তৃপক্ষের 'উদাসীনতা'কে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করছেন অনেকেই।

'দ্য প্রিন্ট' পোর্টালে কলামনিস্ট জায়নাব সিকান্দার লিখেছেন, "কুম্ভমেলা নিয়ে এই নীরবতাই প্রমাণ করে দেয় ভারতীয়রা বিশ্বাস করে শুধু মুসলিমরাই কোভিড ছড়ায়!"

এই বিষয়টির সঙ্গে 'ভারতীয় সমাজের গভীরে প্রোথিত সাম্প্রদায়িকতা'র সম্পর্ক আছে বলেও মনে করছেন তিনি।

'দ্য ওয়্যারে' নিবন্ধকার জাহ্নবী সেন লিখেছেন, "মারকাজ ও কুম্ভমেলার মধ্যে তুলনা হয় না ঠিকই, তবে সেটা অন্য কারণে।''

''মারাকাজের আকার কুম্ভমেলার দশ ভাগের এক ভাগও ছিল না, আর নোভেল করোনাভাইরাসের বিপদ নিয়েও তখনও পর্যন্ত সেভাবে মানুষ জানত না।"

"অন্য দিকে কুম্ভমেলার আয়োজন কিন্তু হচ্ছে সরকারের জারি করা সব বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করেই, যেন হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের ক্ষেত্রে সেগুলো প্রযোজ্য নয়!"

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত