একজন ফিদেল কাস্ট্রো আর কিউবার খাদ্য

প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২০, ১৫:২০

ফিদেল কাস্ট্রো মারা যান ৯০ বছর বয়সে। কিউবায় তিনি যা কিছু করেছেন সবটা একবারে বলা যায় না। তবুও জেনে নেয়া ভালো কিউবায় তিনটা জিনিস অলমোস্ট ফ্রি- খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা।

শিক্ষা খাতকে গণহারে প্রাইভেটাইজেশন করার আগে আমাদের শিক্ষাও অলমোস্ট ফ্রি-ই ছিল। আমাদের প্রাইমারি স্কুল, সেকেন্ডারি স্কুল, সরকারী কলেজ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কলেজগুলোর ফি আর সমমানের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ফি তুলনা করলে সেটা একশ ভাগের এক ভাগ হবে কি না সন্দেহ। যাই হোক, সবার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষা আর লাখ লাখ চিকিৎসক তৈরি করে গলিতে গলিতে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার গল্প নাহয় অন্যদিন হবে । আজ আসুন একটু জেনে নেই কিউবায় "খাদ্য" বিষয়টিকে কিভাবে নিশ্চিত করা হয়ে থাকে-

সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের অল্প কিছুদিন পর থেকেই কিউবায় রেশনিং সিস্টেম শুরু করা হয় (১৯৬২ সাল থেকে)। প্রতিটি কিউবান পরিবারকে একটি লোকাল সাপ্লাই স্টোরে নিবন্ধন করে নিতে হয়, সংসারের প্রতি সদস্যকে দেয়া হয় একটি করে রেশনিং বই।

২০১৬ সালে প্রতিটি নাগরিকের এক মাসের রেশন-
১০ কেজি চাল
৬ কেজি সাদা চিনি
২ কেজি লাল চিনি
২৫০ মিলি রান্নার তেল
১২-টি ডিম
১-প্যাকেট কফি
৬-কেজি মাংস
 
এছাড়া-
প্রতিদিন একটি করে বড় রুটি
প্রতি তিন মাসে এক ব্যাগ লবণ

এর বাইরে-
গর্ভবতী মহিলা এবং ৭ বছর বয়সের নিচের শিশুদের জন্য প্রতিদিন এক বোতল দুধ। অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পুষ্টিকর খাদ্য বরাদ্দ করা হয়।

এটা দেশের প্রতিটা নাগরিককে প্রদান করা হয়। ধনী-গরীব, বড়লোক- ছোটলোক, নেতা-চামচা সবাইকে। এর বাইরে আমাদের মত নরমাল বাজারঘাট তো আছেই। যে যার মত জিনিষপত্র কিনছে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী।
 
তবে এই রেশন সবার জন্য। গোটা মাসের রেশনের জন্য নাগরিককে দিতে হয় কত টাকা জানেন? বিশ্বাস করতে পারবেন না শুনলে- মাসে সর্বনিম্ন দুই থেকে সর্বোচ্চ ষোল ডলারের কছু কম।!!! অর্থাৎ যদি আপনি কিউবার নাগরিক হন তাহলে- প্রতি মাসে খেয়ে-পরে থাকার জন্য আপনাকে কিউবায় খরচ করতে হয় মাত্র এই কয়টা টাকা। হ্যা... এটা এক মাসের খরচ।

কিউবায় মানুষ না খেয়ে মারা যায় না বিপ্লবের পর থেকে...
কিউবার মানুষ চিকিৎসার অভাবে মারা যায় না বিপ্লবের পর থেকে...
একজন মানুষ হিসেবে ফিদেলের আর কি কিছু পাওয়ার বাকি আছে?

আমাদের দেশের স্বাধীনতার সময়েও তেমন একটা স্বপ্ন ছিলো, আমাদের দেশের সংবিধানেরও এসব কথাই লেখা ছিলো (এখনো আছে)। এরপর আমাদের একদল রাজনীতিবিদ সমাজতন্ত্রকে হাসি-তামাশার বিষয়ে পরিণত করে ছাড়লেন। প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত সমাজবাদীদের চিহ্নিত করা হল শত্রু রূপে। অথচ আজকের এই সবার জন্য শিক্ষা, সবার জন্য চিকিৎসা, পাঁচটি মৌলিক অধিকারের ধারণা সমাজতন্ত্র থেকে ধার করা।

আজ সংবিধানে যখন আছে তখন স্বপ্ন দেখতে থাকি, কে জানে হয়তো সত্যিই একদিন এদেশের মানুষ সারা মাসের রেশন কাঁধে নিয়ে হাসিমুখে ঘরে ফিরবে। রাস্তার ধারে কেউ ঘুমোবে না, টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় আর কেউ মারা যাবে না।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত