তথ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ, বিক্ষোভে বৈরুত পুলিশ নিহত

প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২০, ১৭:৩০

সাহস ডেস্ক

লেবাননে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত আছে। রবিবার বৈরুতের রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করে। একপর্যায়ে তারা বিভিন্ন সরকারি অফিস এবং স্থাপনায় ঢুকে পড়ে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ৭ শতাধিক বিক্ষোভকারী আহত হন। বিক্ষোভকারীদের আঘাতে একজন পুলিশ নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

আগের দিন শনিবার মধ্য বৈরুতে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে পুলিশ টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এতে অন্তত ৭২৮ জন বিক্ষোভকারী আহত হন।

একপর্যায়ে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বেশ কয়েকটি সরকারি অফিসে ঢুকে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। পরে নিরাপত্তারক্ষীরা টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে তাদের হটিয়ে দেয়। ব্যারিকেড ভেঙে পার্লামেন্ট ভবনেও প্রবেশের চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব আগাম নির্বাচনের কথা বলছেন।

কিন্তু বিক্ষোভকারীরা তাতে রাজি নন। সরকারের প্রতি তারা এতটাই ক্ষুব্ধ যে, দেশের কর্তৃত্বই তারা পুরানো ঔপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্সের হাতে তুলে দিতে চান। এ ব্যাপারে তারা একটি পিটিশনও খুলেছেন; যাতে ইতোমধ্যে ৬০ হাজারের মতো মানুষ স্বাক্ষর করেছেন।

এদিকে চলমান সরকারবিরোধী বিক্ষোভের মধ্যেই পদত্যাগ করেছেন দেশটির তথ্যমন্ত্রী মানাল আবদেল সামাদ। এর আগে জর্ডানে নিযুক্ত লেবাননের রাষ্ট্রদূত সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়ে পদত্যাগ করেন। পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করেছেন একজন এমপি।

তথ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ: জনদাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে দেশটির তথ্যমন্ত্রী মানাল আবদেল সামাদ পদত্যাগ করেছেন। রোববার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার কথা জানান। আবদেল সামাদ বলেন, জনগণের পরিবর্তনের ডাকে সাড়া দিয়ে আমি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। আমি লেবাননের জনগণের কাছে ক্ষমা চাই। কারণ, আমরা তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি।

লেবাননের কর্তৃত্ব ফ্রান্সের হাতে তুলে দিতে পিটিশন: আগামী ১০ বছরের জন্য লেবাননের কর্তৃত্ব ফ্রান্সের হাতে তুলে দেয়ার দাবিতে একটি পিটিশন খোলা হয়েছে। এতে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ স্বাক্ষর করেছেন। পিটিশনে লেবাননের বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের জন্য দেশটির শাসকগোষ্ঠীকে দায়ী করে সংকট উত্তরণে ফ্রান্সের হাতে কর্তৃত্ব তুলে দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

পিটিশনে বলা হয়েছে, লেবাননের কর্মকর্তারা স্পষ্টতই রাষ্ট্রের সুরক্ষা নিশ্চিত করা ও দেশ পরিচালনায় তাদের অক্ষমতা দেখিয়েছে। একটি ব্যর্থ ব্যবস্থা, দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদ এবং মিলিশিয়া বাহিনী দেশকে শেষ করে দিচ্ছে। রাষ্ট্র ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। এক সময় ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল লেবানন।

পিটিশনের উদ্যোক্তাদের বিশ্বাস, একটি পরিচ্ছন্ন ও টেকসই প্রশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য লেবাননকে ফের ফ্রান্সের অধীন ফিরে যেতে হবে।

আগাম নির্বাচনের ডাক: উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শনিবার আগাম নির্বাচনের কথা বলছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব। টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে হাসান দিয়াব জানান, আগাম নির্বাচন ছাড়া এই সংকট থেকে উত্তরণের সুযোগ নেই। সোমবার (আজ) মন্ত্রিসভার বৈঠকে পার্লামেন্ট নির্বাচনের একটি বিলের খসড়া উপস্থাপন করা হবে।

বৈরুত বন্দরে গুদামে রাখা মারাত্মক দাহ্য পদার্থ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট থেকে ৪ আগস্ট ভয়াবহ দুটি বিস্ফোরণ ঘটে। এতে বৈরুত শহর অর্ধেকটাই ধ্বংস হয়ে গেছে। মারা গেছে প্রায় দু’শ মানুষ। আহত হয়েছে ৫ সহাস্রাধিক।

ঝুঁকি জেনেও গত ৬ বছর ধরে ২৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট গুদামে ফেলা রাখা হয়েছিল। কাস্টম কর্তৃপক্ষের তাগাদা সত্ত্বেও প্রশাসন এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এ কারণে সরকারকে দায়ী করে রাস্তায় নেমেছে মানুষ।

সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা ও লেবাননের ডেইলি স্টার

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত