লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশিকে হত্যার ‘মূল হোতা’ ড্রোন হামলায় নিহত

প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২০, ১৩:২৭

সাহস ডেস্ক

লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশিসহ ৩০ জন অবৈধ অভিবাসীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ‘মূল হোতা’ বলে অভিযুক্ত মিলিশিয়া নেতা খালেদ আল-মিশাই দেশটির বিমান বাহিনীর ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন। লিবিয়ার সংবাদমাধ্যম এ খবর দিয়েছে।

মঙ্গলবার (২ জুন) রাজধানী ত্রিপোলির ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে গারিয়ান শহরের কাছে ওই হামলায় তার মৃত্যু হয়।

সংবাদমাধ্যম বলছে, খালেদ আল-মিশাই ছিলেন লিবিয়ার একাংশের নিয়ন্ত্রক বিদ্রোহী জেনারেল খলিফা হাফতারের অনুসারী। রাজধানী ত্রিপোলিসহ অনেক এলাকা জাতিসংঘ-স্বীকৃত জাতীয় ঐকমত্যের সরকারের (জিএনএ) নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বেনগাজীসহ অনেক তেলসমৃদ্ধ এলাকা খলিফা হাফতারের বাহিনীর দখলে রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ভূমধ্যসাগরীয় দেশ লিবিয়ায় মানবপাচারকারী চক্রের এক সদস্যের সহযোগী ও স্বজনদের বর্বরোচিত আক্রমণে ২৬ বাংলাদেশিসহ ৩০ অভিবাসী শ্রমিক নিহত হয়েছেন। লিবিয়ার জাতিসংঘ সমর্থিত সরকার জানিয়েছে, লিবিয়ার এক মানবপাচারকারীকে হত্যার প্রতিশোধ নিতে ২৬ জন বাংলাদেশিসহ ৩০ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে হত্যা করেছে ওই পাচারকারীর পরিবারের সদস্যরা। বাংলাদেশি বাদে মারা যাওয়া অন্য ৪জন আফ্রিকান বংশোদ্ভূত।

হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া একজন আহত বাংলাদেশি নাগরিকের বয়ানের ভিত্তিতে লিবিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রমবিষয়ক কাউন্সিলর আশরাফুল ইসলাম জানান, মারা যাওয়া ২৬ জনসহ মোট ৩৮ বাংলাদেশি ও কয়েকজন সুদানি নাগরিক প্রায় ১৫ দিন ধরে ওই অপহরণকারী চক্রের হাতে আটক ছিলেন। লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলি থেকে ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণের শহর মিজদায় আটক করে রাখা হয়েছিল তাদের। সেখানেই ২৮ মে সকালে বন্দিদের ওপর গুলি চালায় অপহরণকারীরা।

যেভাবে অপহরণকারীদের কবলে পড়লেন তারা

মূলত ইতালিতে অভিবাসনের উদ্দেশ্যে ওই ৩৮জন বাংলাদেশি লিবিয়ায় গিয়েছিলেন বলে জানান আশরাফুল ইসলাম। করোনাভাইরাস সংক্রান্ত জটিলতা শুরু হওয়ার আগে ডিসেম্বর মাসে তারা ভারত ও দুবাই হয়ে বেনগাজি বিমানবন্দরে পৌঁছান। এরপর গত কয়েকমাস তাদেরকে লিবিয়ার ভেতরে গোপনে রাখা হয়েছিলো। উপকূলীয় অঞ্চল যুওয়ারা হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অভিবাসীদের নিয়ে ইতালির দিকে যাত্রা করার পরিকল্পনা ছিল পাচারকারীদের।

আশরাফুল ইসলাম বলেন, বছরের এই সময়টায় সাগর অপেক্ষাকৃত শান্ত থাকায় এটিকেই সাগর পাড়ি দেওয়ার আদর্শ সময় বলে মনে করা হয়। তবে প্রচলিত পথে না গিয়ে মরুভূমির মধ্যে দিয়ে বেশ বিপদসংকুল একটি পথে তাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো।

তিনি জানান, যুদ্ধকবলিত লিবিয়ায় একাধিক সরকার থাকায় ত্রিপলি হয়ে যুওয়ারা যাওয়ার প্রচলিত পথে নানা রকম তল্লাশি হয়। সেই পথ এড়িয়ে কম ব্যবহৃত মরুভূমির মধ্যকার রাস্তা দিয়ে অভিবাসীদের নিয়ে যুওয়ারা যাচ্ছিলেন পাচারকারীরা। কিন্তু ওই মরুভূমির পথ সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণাধীন, যারা সরকারহীনতার সুযোগ নিয়ে অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে অনেকদিন ধরে। সন্ত্রাসী ও অপহরণকারীদের একাধিক গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্বের ঘটনাও ঘটে থাকে। বেনগাজি থেকে মরুভূমির রাস্তায় যুওয়ারা যাওয়ার পথে তারা অপহরণকারীদের কবলে পড়েন।

কেন হত্যা করা হলো অভিবাসনপ্রত্যাশীদের?

আশরাফুল ইসলাম জানান, অপহরণের পর মিজদাতেই প্রায় ১৫ দিন অপহরণকারীদের জিম্মায় ছিলেন অভিবাসনপ্রত্যাশী বাংলাদেশি ও সুদানি নাগরিকরা। অপহরণকারীদের সাথে আটক হওয়া ব্যক্তিদের মুক্তিপণ নিয়ে দর কষাকষি চলছিল। আটককৃতদের অনেকেই পরিবারের সাথে যোগাযোগ করলেও কাঙ্ক্ষিত মুক্তিপণ দিতে ব্যর্থ হয় তারা। মুক্তিপণ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় আাটককৃতদের ওপর নির্যাতন চালাতে থাকে অপহরণকারীরা। একপর্যায়ে বাংলাদেশিদের সাথে থাকা সুদানি নাগরিকরা অপহরণকারী চক্রের এক সদস্যকে মেরে ফেলেন। এরপর অপহরণকারীরা ক্ষুদ্ধ হয়ে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালালে ৩৮ বাংলাদেশির সবাই গুলিবিদ্ধ হন। মারা যায় ২৬জন।

গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত অবস্থায় কয়েকজন ভেতরেই পড়ে ছিল, দুই-একজন আহত অবস্থায় বের হয়ে আসে। তাদের দেখে স্থানীয় লোকজন সেনাবাহিনীকে খবর দেয় এবং সেনাবাহিনী তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত