কোয়ারেন্টাইন প্রত্যাহারের পর হুবেই ও জিয়াংজি প্রদেশের মধ্যে সংঘর্ষ

প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০২০, ২১:০০

সাহস ডেস্ক

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাণকেন্দ্র চীনের হুবেই প্রদেশের সীমান্ত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়ার পর সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে দেশটির সরকারের নেয়া নজিরবিহীন ব্যবস্থা প্রত্যাহার করে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরানোর উদ্যোগ নেয়ার সময় এই সংঘর্ষ হয়েছে।

স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, ২৭ মার্চ (শুক্রবার) সকালের দিকে হুবেইয়ের সঙ্গে জিয়াংজি প্রদেশের মধ্যে সংযোগকারী একটি সেতু চালু করার সময় স্থানীয়রা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। জিয়াংজিতে মানুষকে প্রবেশ করতে দেয়া হলে সেটি কিসের ভিত্তিতে দেয়া হবে; এ নিয়ে দুই প্রদেশের পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন স্থানীয়রা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডার এক পর্যায়ে হুবেইয়ের বাসিন্দারা সেখানে প্রথমে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় তারা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর ও গাড়ি উল্টে দেন। সীমান্তে তল্লাশি চৌকি বসানোর অভিযোগে জিয়াংজির পুলিশকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান হুবেইয়ের বাসিন্দারা।

উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করতে হ্যান্ড মাইক হাতে ঘটনাস্থলে দেখা যায় হুবেই প্রদেশের কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ কর্মকর্তা ম্যা ইয়ানঝুকে। বেইজিং নিউজ বলছে, সকালের দিকে সংঘর্ষ হওয়ার পর শুক্রবার বিকেল পাঁচটার দিকে সেতুটি পুনরায় চালু করার নির্দেশ দেন তিনি।

শনিবার উভয় প্রদেশের সরকার একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, দুই প্রদেশের মাঝে সংযোগস্থাপনকারী সেতুটির প্রবেশমুখের তল্লাশি চৌকি প্রত্যাহার করে নেয়া হবে। এমনকি উভয় প্রদেশে চলাচলের কোনও ধরনের নথিপত্রও দেখাতে হবে না।

দীর্ঘদিনের লকডউন দশা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর চলাচলে নতুন বিধি-নিষেধের কারণে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন হুবেইয়ের বাসিন্দারা। করোনার প্রাদুর্ভাব শেষ হয়ে যাওয়ার পর এখন হুবেইয়ের বাসিন্দারা সাম্প্রদায়িক বৈষম্যের শিকার হতে পারেন; এমন শঙ্কা থেকে জিয়াংজির প্রবেশমুখের তল্লাশি চৌকি প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন তারা।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হলে দেশটি থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয় হুবেই প্রদেশকে। দুই মাসের সময়ের বিচ্ছিন্নতা থেকে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে হুবেই। গত বুধবার হুবেইয়ের বাসিন্দাদের কোয়ারেন্টাইন প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। তবে অনেক বাসিন্দাই এখনও এই প্রদেশের বাইরে রয়েছেন; তারা ফেরা শুরু করলে আবারও করোনার প্রকোপ শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন দেশটির কর্মকর্তারা।

শনিবার চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন দৈনিক পিপলস ডেইলিতে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, হুবেইয়ের বাসিন্দাদের জন্য নতুন বিধি-নিষেধ এবং সংঘর্ষের ঘটনা সেখানকার স্থানীয়দের হৃদয়ে দাগ কেটেছে। হুবেইয়ের মানুষরা যখন কাজে ফিরছেন; তখন তাদের প্রতি আমাদের ভালো আচরণ দেখানো উচিত। কারণটি একেবারে সহজ- তারা আমাদের মতোই দেশপ্রেমিক।

গত ১৯ মার্চ প্রথমবারের মতো হুবেই প্রদেশে করোনা সংক্রমিত রোগী পাওয়া যায়নি। দেশটির ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট সরকারের নেয়া কঠোর ব্যবস্থার কারণে দুই মাস পর হুবেইয়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। কিন্তু তার আগে হুবেইয়ে উৎপত্তি হওয়া নতুন করোনাভাইরাস দেশটিতে প্রাণ কেড়েছে ৩ হাজার ২৯৫ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৮০ হাজারের বেশি মানুষ।

চীন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও এখন এই ভাইরাসের লাগাম টানতে নাকানি-চুবানি খাচ্ছে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোও। বিশ্বের ১৯৯টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৬ লাখ ১ হাজার ৫৩৬ এবং মারা গেছেন ২৭ হাজার ৪৪১ জন। করোনা সংক্রমণে চীনকে ছাড়িয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইতালি। যুক্তরাষ্ট্রে এক লাখ ৪ হাজার ২৫৬ জন আক্রান্ত এবং প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজার ৭০৪ জন। তবে প্রাণহানিতে বিশ্বের সব দেশকে ছাড়িয়ে গেছে ইতালি; দেশটিতে করোনায় মারা গেছেন ৯ হাজার ১৩৪ জন।

তথসূত্র: স্ট্রেইট টাইমস, এপি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত