বাফুফের অবহেলায় চলছে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্যাম্প

সময়মতো খাবার দিচ্ছে না, নিম্ন মানের হওয়ায় বাইরে খেতে হচ্ছে, প্রোটিন খাবার দেয়া হয় না

প্রকাশ | ৩১ আগস্ট ২০২৩, ১৯:১১ | আপডেট: ৩১ আগস্ট ২০২৩, ১৯:১৩

এম. এ. বাকী

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) শুধু গলাফাটিয়ে শুধু সাফল্য নিতেই জানে। যারা সাফল্য বয়ে আনেন, তাদের দিকে কোন দৃষ্টি দেয়ার সময়ই নেই বাফুফের কর্তা ব্যক্তিদের।  সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের আগের চার আসরে তিনবারই ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ বয়সভিত্তিক পুরুষ ফুটবল দল। এখন পঞ্চম আসরে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আগামী ২১-৩০ সেপ্টেম্বর নেপালে অনুষ্ঠিত হবে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপ। টুর্নামেন্টে অংশ নিতে ১৯ সেপ্টেম্বর নেপালের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বে বাংলাদেশের যুবারা। 

টুর্নামেন্ট সামনে রেখে কোচ রাশেদ আহমেদ পাপ্পুর অধীনে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ঢাকার কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে অনুশীলন ক্যাম্প করছেন লাল-সবুজরা। মূলত সকাল-বিকাল কঠোর অনুশীলনই করছেন ফুটবলাররা। আদতে তাদের জন্য কোনো ধরনের সুখ-সুবিধাই বরাদ্দ করেনি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। 

একটা বয়সভিত্তিক জাতীয় দল দেশের বাইরে খেলতে যাবে। যে দলটি পূর্বে দেশকে তিনটা রানার্স আপ ট্রফি এনে দিয়েছে। অথচ সেই দলটির প্রতি করা হচ্ছে চরম অবহেলা। চরম অব্যবস্থাপনায় দিন পার করছেন ফুটবলাররা। অথচ তারাই কিন্তু দেশের ভবিষ্যৎ জাতীয় খেলোয়াড়। জাতীয় দলের পাইপলাইনে থাকা ফুটবলার। আর তাদেরই সুবিধা-অসুবিধা, ভালো-মন্দ দেখার কেউ নেই। এক মাসেরও বেশি সময় হয়ে গেছে কমলাপুর স্টেডিয়ামে ক্যাম্প চলছে দলটির। অথচ তাদের জন্য একজন ম্যানেজারও এখনো বরাদ্দ করা হয়নি। ক্যাম্পে সর্বেসর্বা কোচ রাশেদ আহমেদ পাপ্পু। কিন্তু তার পক্ষে কি অনুশীলন চালিয়ে এত কিছু দেখা সম্ভব? 

সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কমলাপুর স্টেডিয়ামে থাকার ব্যবস্থা যেমন-তেমন। কিন্তু খাবারের মান একেবারেই নিম্নমুখী। ভোর ৫টায় অনুশীলন শুরু হয় দলটির। কখনো সকাল ৭টায়ও অনুশীলন শুরু করেন ফুটবলাররা। অথচ অনুশীলন শেষে তাদের খেতে দেয়া হয় ভাত, সবজি, ডাল। সকালে কখনো একটা ডিম কপালে জুটে তো, অন্যদিন মেলে না। দুপুরের খাবারের মেন্যু ভাত, মুরগির মাংস নইলে সবজি/ গরু। রান্নার অবস্থা যাচ্ছে-তাই মুখে দেয়া কষ্ট। আর রাতের খাবার হাতে তৈরি আটার রুটি আর সবজি। অনেক ফুটবলার রাতের খাবার না খেয়ে গোপনে বাইরে গিয়ে পকেটের পয়সা খরচ করে খেয়ে আসেন। ক্যাম্পে খাবারের দুরাবস্থা তারপরও মুখ বুঝে সহ্য করে যাচ্ছেন জাতীয় বয়সভিত্তিক দলের ফুটবলাররা। 

বুধবার (৩০ আগস্ট) কমলাপুর স্টেডিয়ামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দুপুরের খাবার দেয়ার কথা ১টায় অথচ খেলোয়াড়দের কপালে খাবার জুটেছে বিকেল ৩টায়। সময় মতো খাবার না খাওয়ায় অনেকে ঠিক মতো খেতে পারেননি। একই অবস্থা বৃহস্পতিবারও। বিকেল ৩টায় আর্মি স্টেডিয়ামে প্রীতি ম্যাচ ছিল অনূর্ধ্ব-১৯ দলের। দুপুর ১টায় সময় তৈরি করা এই রিপোর্ট পর্যন্ত খেলোয়াড়দের কাছে খাবার পৌঁছায়নি। এখন দুপুর ২টায় খেয়ে বাস জার্নি করে ৩টা/ সাড়ে ৩টায় ম্যাচ খেলা কতটা যুক্তিযুক্ত। এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচ রাশেদ আহমেদ পাপ্পুর সঙ্গে। 

তিনি বলেন, ‘খাবারের সমস্যা হচ্ছে এটা ঠিক। ডেল্টা কোম্পানী ক্যাটারিংয়ের দায়িত্বে ছিল। তাদের না করে দেয়া হয়েছে। নতুন ভেন্ডার যুক্ত হচ্ছে। আশাকরি এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’ 

পাপ্পুর নিকট আরো প্রশ্ন ছিল যে ক্যাম্পের ম্যানেজার কে? জবাবে কোচ বলেন, ‘এখনো কাউকে নির্বাচন করা হয়নি। শিগগিরই ঘোষিত হবে।’ 

ক্যাম্পের দুরাবস্থা নিয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় বাফুফের সহ-সভাপতি এবং ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘খাবারের সমস্যা নিয়ে আমরাও ভীষণ সমস্যায় আছি। পুরনো যারা দায়িত্বে ছিল তাদের বাদ দিয়ে নতুন ক্যাটারিং যুক্ত হচ্ছে। আশাকরি দু/একদিনের মধ্যেই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’ 

এখন বাফুফে যে দল চালাচ্ছে তাতে একাডেমি না জাতীয় বয়সভিত্তিক দলের ফুটবলারদের ক্যাম্প করছেন সেটা বুঝার উপায় নেই!