দু’টি ট্রফি নিয়ে ছলছল চোখের জলে যা বললেন প্রীতি

প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২২, ১৯:০১

সাহস ডেস্ক

ম্যাচের যখন শেষ মিনিট চলছে তখন নেপালের সঙ্গে ১-১ গোলে সমতায় ছিল বাংলাদেশ। এমন সময়ে জয়ের সুবর্ণ সুযোগ আসে বাংলাদেশের সামনে, পেয়ে যায় পেনাল্টি। পেনাল্টি কিকটি নিতে গেলেন ডিফেন্ডার জয়নব বিবি। সতীর্থরা কাছে এসে কয়েকবার সাহসও জোগাল জয়নবকে। কিন্তু আত্মবিশ্বাসের তলানিতে থাকা জয়নব বল তুলে দিল নেপালের গোলরক্ষক সুজাতা তামাঙের হাতে! তাতেই বাংলাদেশের জেতা হলো না অনূর্ধ্ব-১৫ নারী সাফের শিরোপা। শেষ পর্যন্ত অনূর্ধ্ব-১৫ নারী সাফের শিরোপা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নেপাল। তবে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন না হলেও তিন ম্যাচ ৯ গোল করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা ও সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন সুরভী আকন্দ প্রীতি। দু’টি ট্রফি হাতে নিয়ে ছলছল চোখের জলে বলেছেন প্রীতি, ‘চ্যাম্পিয়ন হলে খুশি লাগত। আমি ট্রফি না পেয়ে দল জিতলে ভালো হতো।’

৯০ মিনিটে বাংলাদেশের পেনাল্টি পাওয়া বলটি সর্বোচ্চ গোলদাতা প্রীতিকে না দিয়ে অভিজ্ঞ খলোয়াড় জয়নবের হাতে তুলে দেন কোচ গোলাম রব্বানি ছোটন। অভিজ্ঞতা থাকলেও পেনাল্টি নেয়ার সময় জয়নব বেশ চাপেই ছিলেন। তার শটেও সেটা স্পষ্ট। ডানে-বামে শট না নিয়ে সরাসরি গোলরক্ষকের হাতে শট নেন তিনি। নেপালের গোলরক্ষক অনায়াসেই পেনাল্টি ঠেকিয়ে দেন। তবে দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা প্রীতিকে না দিয়ে জয়নবকে কেন পেনাল্টি করতে দিলেন, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন, ‘এই দলে সবচেয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড় সে (জয়নব)। আন্তর্জাতিক ম্যাচ সেই খেলেছে। এজন্য তাকেই দেয়া হয়েছিল।’ তবে প্রীতিকে পেনাল্টি নিতে না দেয়ার ব্যাপারে কোচ বলেন, ‘প্রীতিও পেনাল্টি নিতে পারত। তবে সে নিলেও তো মিস হতে পারত। অভিজ্ঞতার বিচারে জয়নবকেই দেয়া হয়েছে।’

তবে পেনাল্টি নেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন প্রীতিও, ‘ভাবছিলাম হয়তো পেনাল্টি নেয়া লাগতে পারে। অধিনায়ক এসে সিদ্ধান্ত দিয়েছে পেনাল্টি কে নেবে।’ টুর্নামেন্টে ৯ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা ও সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেয়েছেন প্রীতি। পুরস্কার হাতে কান্নাভেজা চোখে প্রীতি বলেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হলে খুশি লাগত। আমি ট্রফি না পেয়ে দল জিতলে ভালো হতো।’ প্রীতির খেলা দেখতে ময়মনসিংহ থেকে আসা তার ভাই এবং আত্মীয়রাও কান্না করেছেন গ্যালারীতে। দুই ট্রফি নিয়ে প্রীতি গ্যালারীর সামনে যাওয়ার পরই শুরু হয় আবেগঘন পরিবেশ।

এই টুর্নামেন্টে শিরোপার চেয়ে ভবিষ্যত প্রজন্ম তৈরি করা জরুরি। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে এই আসরে বেশ সফল বাংলাদেশের মেয়েরা জানিয়ে বাংলাদেশ দলের কোচ বলেন, ‘এই দলে অনেক মেধাবী ফুটবলার রয়েছে। বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলে তারা আরো পরিনত হবে।’

অন্যদিকে ম্যাচের ৯০ মনিটের পেনাল্টি সহজেই ঠেকিয়ে দেন নেপালের গোলরক্ষক। দুই মাস আগে কাঠমান্ডুতে নেপালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ জাতীয় দলের মেয়েরা। নেপালের জুনিয়র মেয়েরা বাংলাদেশের মাটিতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেই প্রতিশোধই নিয়েছে, বলেছেন নেপালের কোচ ভাগ্যতী রানা মাগার, ‘হ্যা এটা প্রতিশোধই। আমাদের নারীদের সক্ষমতা ও সামর্থ্য রয়েছে। সেটা প্রমাণ হয়েছে। সামনে এরা আরো ভালো করবে।’ পেনাল্টি রুখে দেয়াই শিরোপা জেতার কারণ হিসেবে উল্লেখ করে নেপালী কোচ বলেন, ‘ডাগ আউট থেকে গোলরক্ষককে সেভ বলে উৎসাহ দিচ্ছিলাম। সে সাহসের সাথে সেভ করেছে।’

ভুটান, নেপাল, বাংলাদেশ-তিন দেশ নিয়ে হয়েছে এবারের অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ টুর্নামেন্ট। রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে হয়েছে খেলা। টুর্নামেন্টে প্রতিটি দল একে অপরের সঙ্গে খেলেছে দুটি করে ম্যাচ। ৫ নভেম্বর প্রথম ম্যাচে নেপালের কাছে হারা বাংলাদেশ অবশ্য ভুটানকে দুটি ম্যাচেই হারিয়েছিল। ৩ ম্যাচে ২ জয়ে বাংলাদেশের পয়েন্ট ছিল ৬। কিন্তু ৩ ম্যাচের সব কটিতেই জয়ী নেপালের পয়েন্ট ছিল ৯। আজকের ম্যাচটি তাই বাংলাদেশের জন্য হয়ে পড়ে অলিখিত ‘ফাইনাল’। জিতলেই চ্যাম্পিয়ন—এই সমীকরণ নিয়ে খেলতে নামে বাংলাদেশ। নেপালের প্রয়োজন ছিল শুধু একটি পয়েন্ট। লিগে ৪ ম্যাচে নেপালের পয়েন্ট ১০, বাংলাদেশের পয়েন্ট ৭।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত