বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে আয়ারল্যান্ডের চমক

প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২২, ১৯:২০

সাহস ডেস্ক

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আজ ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল আয়ারল্যান্ড। কিন্তু ম্যাচের সমাপ্তি এভাবে হবে তা হয়তো ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি ইংলিশরা। বেরসিক বৃষ্টির জন্যই রান তাড়ায় সুবিধাজনক স্থানে থেকেও ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরেই গেল ইংল্যান্ড। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে প্রথমবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জিতল আইরিশরা। আগে একবারই ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল আয়ারল্যান্ড। সেটি ২০১০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। সে ম্যাচে ইংল্যান্ডকে কাঁপিয়ে ১২০ রানে বেঁধে দিয়েছিলেন আইরিশ বোলাররা। তবে বৃষ্টির বাধায় ম্যাচটি বাতিল হয়, যে কারণে সহজ লক্ষ্য পেয়েও জেতা হয়নি আয়ারল্যান্ডের। তবে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপেও একবার মুখোমুখি হয়েছিল এ দুই দল। সে ম্যাচেও ইংল্যান্ডে হারিয়ে জিতেছিল আয়ারল্যান্ড।

বুধবার (২৬ অক্টোবর) মেলবোর্নে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূলপর্বের ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ৫ রানে হারিয়ে জয় তুলে নিয়েছে আয়ারল্যান্ড। এদিন টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ১৯.২ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ১৫৭ রান করে আইরিশরা। জবাবে ১৪.৩ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে তোলে ১০৫ রান। ডিএল নিয়মে ইংল্যান্ডের তখন প্রয়োজন ছিল ১১০ রান। যেহেতু দুই দলই অন্তত ৫ ওভার করে ব্যাট করেছে, তাই নিয়ম অনুযায়ী ম্যাচে ফল হবে। খেলা এরপর আর শুরু করতে না পারায় ডিএলএস নিয়মে ৫ রানের জয় পায় আইরিশরা।

আইরিশদের দেয়া লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই কট বিহাইন্ডের ফাঁদে পরেন জশ বাটলার। জশ লিটলের করা বলে কাভার ড্রাইভ খেলতে গিয়ে কিপারের হাতে ক্যাচ দিয়ে শূণ্য রানে ফিরে যান ইংলিশ অধিনায়ক। স্কোরবোর্ডে কোনো রান যোগ না করেই প্রথম উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। এতে ব্যাটিং ইনিংসের মতো বল হাতেও দারুণ শুরু করে আয়ারল্যান্ড।

এরপর দলীয় ১৪ রানে ফেরেন অ্যালেক্স হেলস। তাকেও ফেরান জশ লিটল। শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়ে ৭ রান করে ফেরেন আরেক ওপেনার। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিজেকে হারিয়ে খোঁজা বেন স্টোকসও দলকে উদ্ধার করতে পারেননি। ব্যক্তিগত ৬ রানে ফিওনা হ্যান্ডের বলে বোল্ড হয়ে দলকে আরও বিপদে ফেলেন। পাওয়ার প্লে-তে মাত্র ২৯ রানেই তিন উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় বাটলারের দল। সেখান থেকে ইংল্যান্ডকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন হ্যারি ব্রুক ও ডেভিড ম্যালান। প্রথম ১০ ওভারে ইংল্যান্ড তোলে ৩ উইকেটে ৬৩ রান। শেষ ১০ ওভারে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ৯৫ রান। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে শেষ ১০ ওভারে ৯৫ রান, ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপের জন্য খুব কঠিন কিছু ছিল না। তবে দিনটাই ছিল আয়ারল্যান্ডের।

এমন সময়ে ডকরেলের টানা ২ বলে হ্যারি ব্রুক ও ডেভিড মালানের ক্যাচ ফেলে দেয় আয়ারল্যান্ড। ডকরেলের করা ১১তম ওভারের প্রথম বলে লং অনে  ব্রুকের ক্যাচ ফেলেন অ্যাডায়ার। পরের বলে মালানের ক্যাচ ফেলেন গ্যারেথ ডিলানি। এতে নিজেকে দুর্ভাগা দাবি করতেই পারেন ডকরেল। তবে দিনটাই ছিল আয়ারল্যান্ডের। তাই ক্যাচ মিসের মাশুল গুনতে হয়নি তাদের। ওই ওভারের পঞ্চম বলেই হ্যারি ব্রুককে ফেরান ডকরেল। মিড উইকেটে গ্যারেথ ডেলানির হাতে ধরা পড়েন ব্রুক। ২১ বলে ১৮ রান করে ফেরেন এ ইংলিশ তারকা। এরপর ইনিংসের ১৪তম ওভারে ফেরেন মালানও। ওভারের প্রথম বলে ব্যারি ম্যাকার্থিকে পুল করতে গিয়ে ডিপ থার্ড ম্যানে ক্যাচ দিয়ে ৩৭ বলে ৩৫ রান করে ফেরেন ডেভিড মালান।

ইংল্যান্ডের শেষ ৬ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৬৫ রান। ক্রিজে ছিলেন মঈন আলী ও লিয়াম লিভিংস্টোন। এমন সমীকরণে দাঁড়িয়ে ম্যাচ জেতাতে ইংল্যান্ডের মিডল অর্ডার ভালোভাবেই জানে। মঈন ১৫তম ওভারের শুরুটাও করেছিলেন এমন। প্রথম ৩ বলেই তুলে নেন ১২ রান। তখনই বাদ সাধে বৃষ্টি। ১৪.৩ ওভারে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১০৫ রান। কিন্তু ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১১০ রান। তাই অনেকটা এগিয়ে থাকার পরও ৫ রানে হারতে হয় ইংল্যান্ডকে। আইরিশদের হয়ে জশ লিটল ৩ ওভার করে ১৬ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। ব্যারি ম্যাককার্থি, ফিওন হ্যান্ড ও ডকরেল ১টি করে উইকেট নেন।

ম্যাচে আইরিশদের স্মরণীয় জয়ে মুখ্য ভূমিকা রাখেন অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বলবার্নি। ৬২ রানের ম্যাচসেরা ইনিংস খেলেন তিনি। বৃষ্টিতে ম্যাচ ভেসে যাওয়ার ঝুঁকি নিয়ে মাঠে নামে দুই দল। টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে দুর্দান্ত শুরু করেছিল আয়ারল্যান্ড। দলীয় ২১ রানে পল স্টার্লিং ফিরে গেলেও চাপে পড়েনি দলটি। ৮ বলে ১ চার ১ ছক্কায় ১৪ রান করে মার্ক উডের বলে বোল্ড হন স্টার্লিং। ১৫০ কি.মি গতিতে বলটি করেছিলেন মার্ক উড। তবে অ্যান্ড্রু বলবার্নি ও লোরকান টাকারের ৫৭ বলে ৮২ রানের জুটিতে উল্টো চাপ পড়ে ইংল্যান্ড। পাওয়ারপ্লেতে আইরিশদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫৯ রান। অ্যান্ড্রু বলবার্নির দল ১০০ রানে পৌঁছায় ১১.২ ওভারে। তখনো হাতে ছিল ৯ উইকেট। এরপর ১২তম ওভারের শেষ বলে রানআউট হন টাকার। ২৭ বলে ৩ চার ১ ছক্কায় ৩৪ রান করে ফেরেন টাকার। এতে ৮২ রানের জুটি ভাঙে আইরিশদের।

জুটি ভাঙার পর আইরিশদের আরও চাপে ফেলতে মিডল ওভারেই অধিনায়ক বাটলার বল তুলে দেন দলের সেরা বোলার মার্ক উডের হাতে। দারুণ ছন্দে থাকা উড হতাশ করেননি। ০ রানেই ফেরান হ্যারি টেক্টরকে। পরপর ২ উইকেট হারানোর পরও দলকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন অধিনায়ক বলবার্নি। তবে এখানেও অধিনায়ক বাটলারের করা ‘গ্যাম্বল’ কাজে লেগে যায়। অনিয়মিত স্পিনার লিয়াম লিভিংস্টোনের হাতে বল তুলে দিলে তিনি ফেরান ক্রিজে থিতু থাকা বলবার্নিকে। ফেরার আগে ৪৭ বলে ৫ চার ২ ছক্কায় ৬২ রান করেন বলবার্নি। পরের বলেই জর্জ ডকরেলকে বোল্ড করেন লিভিংস্টোন। শেষ দিকে আয়ারল্যান্ডের কেউই ক্রিজে এসে থিতু হতে পারেননি। অবশেষে ১৯.২ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ১৫৭ রানে থামে আয়ারল্যান্ডের ইনিংস।

ইংল্যান্ডের হয়ে মার্ক উড ৪ ওভার করে ৩৪ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট আর লিয়াম লিভিংস্টোনও নিয়েছেন ৩ উইকেট, দিয়েছেন ৩ ওভারে ১৭ রান। স্যাম কুরান নিয়েছে ২টি উইকেট এবং বেন স্টোকস নিয়েছেন ১টি উইকেট। ম্যাচ সেরা হয়েছেন অ্যান্ড্রু বলবার্নি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত