টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে নিউজিল্যান্ডের রেকর্ড জয়

প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২২, ১৮:৪৯

সাহস ডেস্ক

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ২০০ রান তাড়া করে কখনোই জেতেনি অস্ট্রেলিয়া। আজও পারলো না। এবারের বিশ্বকাপের মূল পর্বে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিততে হলে রানতাড়ার রেকর্ড গড়তে হতো অজিদের। কিন্তু রেকর্ড গড়বে কি, নিউজিল্যান্ডের দেয়া বড় লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ১১১ রানে অল আউট হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। এতে ৮৯ রানের বিশাল হার দিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অষ্টম আসর শুরু হলো বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের।

গত আসরের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার আছে হেরে বিশ্বকাপের ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখা হলো না কেন উইলিয়ামসনদের। তার শোধটাই নিলো এবারের আসরের শুরুর ম্যাচে। এতে ১১ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথম জয় পেল নিউজিল্যান্ড। সর্বশেষ ২০১১ সালে হোবার্ট টেস্টে জয়ের পর প্রতিবেশী দেশটির বিপক্ষে টানা ১৫ ম্যাচ জয়হীন ছিল কিউইরা। এ জয়ে একটি রেকর্ডও গড়েছে নিউজিল্যান্ড। টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ব্যবধানের জয়ে কিউইরা এখন দ্বিতীয়। এর আগে ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের ৯০ রানের জয়ই সর্বোচ্চ।

শনিবার (২২ অক্টোবর) টি-টোয়েন্টি বিশ্বাকাপে সুপার টুয়েলভের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৮৯ রানের বিশাল ব্যবধানে জিতে মিশন শুরু করেছে নিউজিল্যান্ড। এদিন টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন অজি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে নিউজিল্যান্ড নির্ধারিত ২০ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ২০০ রানের লক্ষ্য দেয় অস্ট্রেলিয়াকে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ১৭.১ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ১১১ রান তুলতে সক্ষম হয় অজিরা।

কিউইদের দেয়া ২০০ রানতাড়ায় অস্ট্রেলিয়া কক্ষপথে ছিল না কখনোই। দ্বিতীয় ওভারেই আসে ধাক্কা। টিম সাউদির বলে ডেভিড ওয়ার্নারের দুর্ভাগ্যজনক বোল্ড দিয়ে যার শুরু। ওয়ার্নার বল ব্যাটে লাগিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু বল তার শরীরে লেগে আবারও ব্যাট ছুঁয়ে অদ্ভুত কায়দায় আঘাত হানে স্টাম্পে। দলীয় ৫ রানে হতাশাজনক বিদায় নেন তিনি। ওই ৫ রানই ছিল ওয়ার্নারের। এরপর স্পিন হোক কি পেস, মেরে খেলতে গিয়ে সব ধরনের বোলারের কাছেই উইকেট হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। বিপর্যয় সামাল দিতে গেলে স্লথ হয়েছে রান-তোলার গতিও। তবে ১০ ওভারে ৪ উইকেটে ৬২ রানের পরও কিছুটা ভরসা হয়ে টিকেছিলেন টিম ডেভিড আর ম্যাথু ওয়েড। কিন্তু স্টিভেন স্মিথকে সরিয়ে ঝড়ো ব্যাটিংয়ের জন্য একাদশে জায়গা পাওয়া ডেভিড বা ফিনিশার হয়ে ওঠা ওয়েড এ যাত্রায় আর ত্রাতা হতে পারেননি। ১ ছয় মারার পরই মিচেল স্যান্টনারের বলে নিশামকে ক্যাচ দেন ডেভিড। আর লকি ফার্গুসনের বলে ওয়েড ক্যাচ দেন কনওয়েকে। ১২.২ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় অস্ট্রেলিয়া। এরপর ১৭.১ ওভার পর্যন্ত টিকতে পারে স্বাগতিকরা, তাতে শুধু ব্যবধানই কমেছে।

কিউইদের হয়ে টিম সাউদি ২.১ ওভার করে মাত্র ৬ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। মিচেল স্যান্টনারও নিয়েছেন ৩ উইকেট, দিয়েছেন ৪ ওভারে ৩১ রান। ট্রেন্ট বোল্ড নিয়েছেন ২ উইকেট এবং লকি ফার্গুসন ও ইশ শোধি নিয়েছেন ১টি করে।

আগে ব্যাটিং করা নিউজিল্যান্ডের ইনিংসের ‘হাইলাইটস’ ছিল প্রথম আর শেষের চার ওভার। ওই আট ওভারে ১০৪ রান তোলেন কনওয়ে-ফিন অ্যালেন-জিমি নিশামরা। শুরুটা করেন ২৩ বছর বয়সী ডানহাতি ব্যাটসম্যান অ্যালেন। স্টার্কের করা প্রথম ওভার থেকেই দুই চার এক ছয়ে তুলে নেন ১৪ রান। পরের ওভারে জস হ্যাজলউডের ওপর চড়াও হন ডেভন কনওয়েও। প্রথম চার বলেই হাঁকান দুই চার। শেষ বলে সুযোগ পেয়ে অ্যালেন মারেন আরেকটি। তিন চারসহ এই ওভার থেকে আসে ১৫ রান। তৃতীয় ওভারে বল হাতে নিয়ে একই পরিণতি প্যাট কামিন্সেরও। দুই চার এক ছয়সহ তাঁর ওভার থেকে ১৭ রান তোলেন অ্যালেন। মাত্র ৩ ওভারেই নিউজিল্যান্ডের স্কোরবোর্ডে জমা হয় ৪৬ রান।এরপরও খেলা যে ১৭.১ বল পর্যন্ত ওভার ম্যাচ চলেছে, তাতে শুধু ব্যবধানই কমেছে।

আগে ব্যাটিং করা নিউজিল্যান্ডের ইনিংসের ‘হাইলাইটস’ ছিল প্রথম আর শেষের চার ওভার। ওই আট ওভারে ১০৪ রান তোলেন কনওয়ে-ফিন অ্যালেন-জিমি নিশামরা। শুরুটা করেন ২৩ বছর বয়সী ডানহাতি ব্যাটসম্যান অ্যালেন। স্টার্কের করা প্রথম ওভার থেকেই ২ চার ১ ছক্কায় তুলে নেন ১৪ রান। পরের ওভারে জস হ্যাজলউডের ওপর চড়াও হন ডেভন কনওয়েও। প্রথম চার বলেই হাঁকান দুই চার। শেষ বলে সুযোগ পেয়ে অ্যালেন মারেন আরেকটি। তিন চারসহ এই ওভার থেকে আসে ১৫ রান। তৃতীয় ওভারে বল হাতে নিয়ে একই পরিণতি প্যাট কামিন্সেরও। দুই চার এক ছয়সহ তার ওভার থেকে ১৭ রান তোলেন অ্যালেন। মাত্র ৩ ওভারেই নিউজিল্যান্ডের স্কোরবোর্ডে জমা হয় ৪৬ রান। তবে স্টয়নিস এসে রানের গতিতে কিছুটা বাঁধ সাধেন। তাও পঞ্চম বলে অ্যালেন স্ট্রাইকে এসেই আবারও মারেন ছক্কা। এতে চার ওভার শেষে দলীয় সংগ্রহ ৫০ রান পার করে কিউইরা।

চার পেসারের সবাইকে ব্যবহার করে ফেলায় অধিনায়ক ফিঞ্চ প্রান্ত বদল করে আবারও হ্যাজলউডের হাতে পঞ্চম ওভারের বল তুলে দেন। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি উইকেট এই পেসারের। দরকারের সময় দলের ত্রাতা হলেন এবারও। প্রথম বলটিই দিলেন ইয়র্কার, এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে মিস করে বোল্ড হলেন অ্যালেন। অস্ট্রেলিয়ার জন্য ম্যাচের প্রথম উইকেট, কিন্তু ফিঞ্চ-হ্যাজলউডদের উদযাপনে মনে হচ্ছিল জয় নিশ্চিতের উইকেট। অ্যালেন-ঝড়ে নীরব হয়ে পড়া এসসিজির গ্যালারিও প্রাণ ফিরে পায় এই উইকেটে। মাত্র ১৬ বলে ৫ চার ৩ ছক্কায় ৪২ রান করে ফেরেন ফিন-অ্যালেন।

অ্যালেন আউট হলে নিউজিল্যান্ডের রান তোলার গতি চুপসে যায়। প্রথম ৪ ওভারে ৫৬ রান তোলা নিউজিল্যান্ড উইকেট হারানোর পরের ৩৫ বলে তোলে মাত্র ৪১ রান। এরমধ্যে ১৯ বলে ২৮ রানই কনওয়ের, অধিনায়ক উইলিয়ামসনের খেলা ১৬ বল থেকে আসে মাত্র ১২। কিউই অধিনায়ক রান তুলতে পারেননি থিতু হওয়ার পরেও। শেষপর্যন্ত ২৩ বলে ২৩ রানের ইনিংস থামে অ্যাডাম জাম্পার বলে এলবি হয়ে। নিউজিল্যান্ড রান পায়নি চারে নামা গ্লেন ফিলিপস থেকেও। হ্যাজলউডের দ্বিতীয় শিকার হওয়ার আগে ১০ বলে ১২ রান করে যান তিনি। তবে উইলিয়ামসন-ফিলিপস ডানা মেলতে না পারলেও নিউজিল্যান্ড রান পেয়েছে প্রতি ওভারেই। ৩৬ বলে ফিফটি ছোঁয়া কনওয়ের ব্যাটে চড়ে ১৬ ওভারে দেড় শ পেরিয়ে যায় কিউইরা।

শেষ চার ওভারে কনওয়েকে দারুণ সঙ্গ দেন জিমি নিশাম। এই চব্বিশ বলে ৪৮ রান পেয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। ১৩ বল খেলে দুই ছয়সহ ২৬ রান তোলেন নিশাম, যার মধ্যে ইনিংসের শেষ বলের ছয়ে দুইশ স্পর্শ করে কিউইরা। তবে কনওয়ে মাঠ ছাড়েন সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে। ৫৮ বলে ৭ চার ২ ছক্কায় ৯২ রান করে অপরাজিত থাকেন ডেভন কনওয়ে। ২৯টি টি-টোয়েন্টির ক্যারিয়ারে এ নিয়ে তৃতীয়বার নব্বইয়ের ঘরে আটকা পরল কনওয়ে। তিনটিই অপরাজিত। সেঞ্চুরি না হলেও তার ইনিংসে ভর করে ১১ বছর পর অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে হ্যাজলউড ৪ ওভার করে ৪১ রান দিয়ে নিয়েছেন ২টি উইকেট। আর ৪ ওভারে ৩৯ রান দিয়ে ১টি উইকেট নিয়েছেন অ্যাডাম জাম্পা। ম্যাচ সেরা হয়েছেন ডেভন কনওয়ে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত