কান্নাভেজা চোখে ফেদেরারের বিদায়

প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৮:০৭

‘সবাইকে বলেছিলাম আমি সুখী। খারাপ লাগছে না। এ কান্না সুখের কান্না’ কান্নাভেজা চোখে এমনটা বোঝাতে হল রজার ফেদেরারকে। কিন্তু যারা তার অনুরাগী তারা কি বোঝেননি প্রিয় কোর্টকে ছেড়ে যাওয়া কতটা কষ্টের? বুঝেছেনতো বটেই! তা না হলে কিংবদন্তির সঙ্গে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রাফায়েল নাদালসহ সব অনুরাগীরা কাঁদবেন কেন? হাপুস নয়নে কাঁদছিলেন নাদাল। ‘জোকার’ ডাকনামে পরিচিত যে নোভাক জকোভিচ, সেই তিনিও চোখ মুছলেন একটু আড়ালে! শুধু তারাই নন অ্যারেনায় লেভার কাপের ম্যাচ খেলতে বা দেখতে আসা খেলোয়াড়-দর্শকরাও চোখ মুছেছেন। টেনিস কোর্টকে বিদায় জানানো রজার ফেদেরারের আবেগ ছুঁয়ে গিয়েছিল প্রায় সবাইকে।

আজ টেনিস কোর্টকে বিদায় জানালেন সুইস কিংবদন্তি রজার ফেদেরার। অবশ্য বিদায়ের ঘোষাণ গত সপ্তাহেই দিয়েছিলেন ফেদেরার। টুইটারে এক খোলা চিঠিতে জানিয়েছিলেন, লেভার কাপই হবে তার শেষ টুর্নামেন্ট। বহুদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী রাফায়েল নাদালকে সঙ্গে নিয়ে নামবেন কোর্টে, তারপর র‌্যাকেটটা তুলে রাখবেন-এ ঘোষণা দিয়েছিলেন ২০টি গ্র্যান্ড স্লামজয়ী সুইস তারকা। তাই টেনিস-বিশ্বও প্রস্তুত ছিল। তবে এতগুলো বছর যে নাদালের সঙ্গে কোর্টে আগুনে লড়াই করেছেন, তাকে সঙ্গে নিয়ে শেষ লড়াইটা জিতে মধুর সমাপ্তি ঘটাবেন ফেদেরার, এমনটাই ভেবেছিলেন সবাই। দুঃখজনকভাবে তা হয়নি। টিম ইউরোপের হয়ে দ্বৈত জুটি হিসেবে নামা ফেদেরার ও নাদাল হেরেছেন টিম ওয়ার্ল্ডের জুটি ফ্রান্সিস তিয়াফো ও জ্যাক সকের কাছে। হেরে যাওয়ায় শেষটা রাঙাতে পারেননি ফেদেরার। তাতে টেনিসভক্তদের অতৃপ্তি থাকার কথা নয়। যদি অতৃপ্তি বলে কিছু থাকে সেটা হবে এই কিংবদন্তিকে কোর্টে আর না পাওয়া।

হারের পর বিদায়ী ভাষণে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি ফেদেরার। কেঁদেছেন শিশুর মতো। পাশে বসে থাকা রাফায়েল নাদালের চোখও ভিজে এসেছে। পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা নোভাক জোকোভিচের মুখেও তাকানো যাচ্ছিল না। টেনিসের ‘বিগ ফোর’-এর আরেকজন অ্যান্ডি মারেও উপস্থিত ছিলেন সেখানে। এরপর নিজেকে একটু সামলে নিলেন কিংবদন্তি। পুরো কোর্ট ঘুরলেন। হাত নেড়ে দর্শকদের ধন্যবাদ জানালেন। শেষে নাদাল, জোকোভিচদের কাঁধে চড়ে নিলেন বিদায়। বিদায়বেলায় যখন ফেদেরার কাঁদলেন সবান্ধবে, তখন সেটা বেদনার কান্না বলে মনে হওয়াটা অসম্ভব কিছু নয়।

বিদায়ী ভাষণে আবেগ সামাল দিতে পারেননি ফেদেরার। কান্নাভেজা চোখে জানালেন, ‘এই অশ্রু আসলে আনন্দের। আমি সুস্থ আছি, সুখে আছি, দিনটা দারুণ। শেষবারের মতো নিজের জুতার ফিতা বাঁধা উপভোগ করেছি। সবকিছুই ছিল শেষবারের মতো। তবে এ সময়টা (দুঃখের সময়) কাটিয়ে উঠব।’

পরে সংবাদ সম্মেলনে সমর্থকদের জন্য খুশির খবর দিয়েছেন ৪১ বছর বয়সী কিংবদন্তি, ‘এখানেই সবকিছুর শেষ নয়; জীবন জীবনের মতোই এগিয়ে চলবে। আমি সুস্থ আছি, ভালো আছি। একটি বার্তা দিতে চাই, খেলাটির প্রতি আমার ভালোবাসা থাকবে। ভক্তদের জানাতে চাই, আবারও দেখা হবে, বিশ্বের অন্য কোথাও, আলাদা কোনো টেনিস কোর্টে। তবে কবে, কোথায়, কীভাবে হবে, তা নিয়ে এখনো কোনো পরিকল্পনা করিনি। এমন সব জায়গায় গিয়ে খেলতে চাই, যেখানে আগে কখনো খেলিনি। সামনের বছরগুলোয় শুধু ধন্যবাদ জানিয়ে যেতে চাই সবাইকে, যাঁরা এত দিন ধরে আমাকে সমর্থন দিয়েছেন।’

২০২১ উইম্বলডন কোয়ার্টার ফাইনালের পর চোটের কারণে আর কোর্টে নামতে না পারা ফেদেরার গত সপ্তাহে অবসরের ঘোষণা দেন। তখন তিনি জানান, লেভার কাপ খেলেই তিনি অবসরে নিবেন। এর পর থেকেই তার এই বিদায়ী ম্যাচের অপেক্ষায় ছিলেন সবাই। শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ভোরে লন্ডনের ও২ অ্যারেনায় লেভার কাপে দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী রাফায়েল নাদালকে সঙ্গে নিয়ে শেষবারের মতো কোর্টে নামেন ফেদেরার। এই ম্যাচে টিম ইউরোপের হয়ে দ্বৈত জুটি ফেদেরার ও নাদাল ৪-৬, ৭-৬ (৭ /২), ১১-৯ গেমে হেরেছেন টিম ওয়ার্ল্ডের জুটি ফ্রান্সিস তিয়াফো ও জ্যাক সকের কাছে। কোনো চাপ ছাড়া ম্যাচটি কেবল উপভোগ করার জন্যই খেলেছেন ফেদেরার, ‘আমি এতটা চাপ অনুভব করিনি যদিও আমি ভেবেছিলাম কিছু হতে চলেছে, তবে ম্যাচটি দুর্দান্ত ছিল। এখানে সমস্ত গ্রেটদের ও সমস্ত কিংবদন্তিদের সামনে রাফার সঙ্গে খেলা, ধন্যবাদ।’

তবে পেশাদার ক্যারিয়ারে নিজের শেষ ম্যাচটা ফেদেরার খেলে ফেলার পর নাদালও টের পাচ্ছেন, তার জীবন থেকে কী মুছে গেল! ২০০৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত টেনিসের কোর্টে ৪০ বার মুখোমুখি হয়েছেন রজার ফেদেরা ও রাফায়েল নাদাল। তাদের যেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা, তেমনি একে অপরের প্রতি সম্মানও কম নয়। ২০১৭ সালে প্রাগের পর এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো একসঙ্গে খেললেন দুই কিংবদন্তি। এবারই শেষ, আর এই শেষের ব্যথা বাজছে নাদালের বুকেও। ফেদেরারের শেষ ম্যাচকে টেনিস ইতিহাসেরই অনন্য এক মুহূর্ত মনে করে নাদাল, ‘আমাদের এই খেলার ইতিহাসে অনন্য এ মুহূর্তের সঙ্গী হতে পারাটা আমার জন্য বিশেষ সম্মানের। দুজনে একসঙ্গে কত বছর ধরে কত কিছু ভাগ করে নিয়েছি। ফেদেরারের চলে যাওয়া মানে আমার জীবন থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়েরও অবসান ঘটা।’

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত