এশিয়া কাপ ফাইনাল

পাকিস্তানকে হারিয়ে এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা

প্রকাশ | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৩:২৫ | আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৩:৩৭

অনলাইন ডেস্ক
এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন ট্রফি হাতে লঙ্কা বাহিনীর উল্লাস।

এবারের এশিয়া কাপের আয়োজক শ্রীলঙ্কা। কিন্তু দেশে অর্থনৈতিক সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সব দলকে আতিথেয়তা দেয়ার সমার্থ ছিল না তাদের। যার কারণে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ভেন্যু হিসেবে ব্যবহার করে তারা। তবে টুর্নামেন্টের শুরুটা ছিল তাদের দুঃস্বপ্নের মতো। উদ্বোধনি ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে আগে ব্যাট করে মাত্র ১০৫ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল লঙ্কানরা, যা মাত্র ১০.১ ওভারের মধ্যেই উতরে যায় প্রতিপক্ষ। এরপর বাংলাদেশের বিপক্ষে রোমাঞ্চকর জয়ে বদলে গেল সব। টানা চার জয়ে ফাইনালে পৌঁছায় দলটি। দুবাইয়ে যখন টস জিতলেই ম্যাচ জয় অনেকটাই নিশ্চিত, টানা চার ম্যাচ জেতার পর ফাইনালে সেই টস হারলেন লঙ্কান অধিনায়ক। তবে টস হারলেও হারেনি দল। পাকিস্তানকে হারিয়ে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুটটা পরল শ্রীলঙ্কা।

রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ১৫তম এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানকে ২৩ রানে হারিয়ে ষষ্ঠবারের মতো শিরোপা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে শ্রীলঙ্কা।

ফাইনালের আগে টস নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছিল। আরব আমিরাতের মাটিতে টস জিতলেই ম্যাচ জেতা হয়ে যায় অনেকটাই! কিন্তু ফাইনালে সেই টস জিতলেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম, নিলেন ফিল্ডিং। টুর্নামেন্টে টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়ে রান তাড়া করে ম্যাচ জেতার যে ধারা চলে আসছিল, তাতে পাকিস্তানের জয়টাকেই মনে হচ্ছিল সম্ভাব্য নিয়তি। যা দেখা গেল লঙ্কানদের ব্যাটিংয়ে শুরুর দিকে। পাকিস্তান পেসারদের সামনে এলোমেলো হয়ে পড়ল তাদের ব্যাটিং। ৪ ওভারে মাত্র ২৩ রানের মধ্যে ফিরে গেলেন দুই ওপেনার, এরপর ৫৮ রানে নেই ৫ উইকেট। ফাইনালের মাঠে আরেকবার পিছিয়ে পড়ল লঙ্কানরা।

তবে ভানুকা রাজাপক্ষে, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা খেললেন হার না মানা ইনিংস। ২১ বলে ৫ চার ১ ছক্কায় ৩৬ রান করে হাসারাঙ্গা ফিরলেও, ৪৫ বলে ৬ চার ৩ ছক্কায় ৭১ রান করে অপরাজিত থাকেন রাজাপক্ষে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ৬৭ বলে শ্রীলঙ্কা তুলল ১১২ রান। প্রথম ১০ ওভারে যে দলের রান ছিল ৫ উইকেটে ৬৭, সেই দলই শেষ ১০ ওভারে তুলে ফেলল ১০৩ রান, মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে! অর্থাৎ নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৭০ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। পাকিস্তানের হয়ে হ্যারিস রউফ ৪ ওভার বল করে ২৯ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। আর নাসিম শাহ, শাহদাব খান ও ইফতিখার আহমেদ ১টি করে উইকেট নেন।

যদিও টি-টোয়েন্টিতে ১৭০ রান এমন কোনো স্কোর নয়, বিশেষ করে পরে ব্যাটিং করলে। দুবাইয়ে পরে ব্যাটিং করা মানেই জয়, শ্রীলঙ্কাও এই টুর্নামেন্টে ৪টি জয় পেয়েছে এভাবেই। চলতি বছরে আগে ব্যাট করে একটি ম্যাচও জেতেনি লঙ্কানরা। প্রথম ইনিংস শেষে তাই ফেবারিট ছিল পাকিস্তানই। এরপর প্রথম বৈধ বল করার আগেই শ্রীলঙ্কার তরুণ পেসার দিয়ে বসলেন ৯ রান। তবে আবারও ঘুরে দাঁড়াল তারা। চতুর্থ ওভারে মাদুশানের পরপর দুই বলে ফর্ম খুঁজে ফেরা বাবর আজম ও ফখর জামান ফিরে যান। তখন পাক দলের রান মাত্র ২২। এরপরই সতর্ক হয়ে পড়েন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ইফতিখার আহমেদ। দুজনের জুটিতে ওঠে ৭১ রান, তবে তারা খেলে ফেলেন ৫৯ বল। এরপরই মাদুশানের ওপর চড়াও হতে গিয়ে ফেরেন ইফতিখার। পাকিস্তানের তখন প্রতি ওভারে দরকার ১২-এর বেশি করে রান। উফতিখার ফেরার আগে ৩১ বলে ২ চার ১ ছক্কায় ৩২ রান করেন।

লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকার হাতে চ্যাম্পিয়ন চেক তুলে দিচ্ছেন সৌরভ গাঙ্গুলী।

ইফতিখার ফেরার পর বাঁহাতি মোহাম্মদ নেওয়াজকে আগে পাঠিয়েছিল পাকিস্তান। তবে লঙ্কান অধিনায়কের দুটি সিদ্ধান্ত দারুণভাবে কাজে লাগে। যখন বাঁহাতি নেওয়াজ ব্যাটে আসে, তখন অফ স্পিনার ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে আনেন শানাকা। রিজওয়ান যখন চামিকা করুনারত্নেকে ছয় মেরে গিয়ার বদলানোর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন তখন শানাকা আনেন তার ট্রাম্পকার্ড ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে, এসেই সফল তিনি। ওই ওভারেই দিয়েছেন ১৪ রান, কিন্তু উইকেট নিয়েছেন ৩টি। ফিরলেন রিজওয়ান, আসিফ আলী (০), খুশদিল শাহ (২)। ৪৯ বলে ৪ চার ১ ছক্কায় ৫৫ রান করে ফেরেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। আগের ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩টি উইকেটই নিয়েছিলেন হাসারাঙ্গা।

এরপর শেষ ৩ ওভারে পাকিস্তানের দরকার ছিল ৫৯ রান। কিন্তু আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো নাসিম শাহের মতো কোনো ব্যাটারকে পায়নি পাকিস্তান। খুঁজে পায়নি রূপকথার কোনো নায়ককে। উল্টো ম্যাচের শেষ বলে হারিস রউফকে বোল্ড করে শেষটা রাঙিয়েছেন করুনারত্নে। প্রায় নিখুঁত ফিল্ডিং, চাপের মুখেও দারুণ বোলিং, দুর্দান্ত অধিনায়কত্বে পাকিস্তানকে ২৩ রানে হারিয়ে ষষ্ঠবারের মতো এশিয়া কাপের চ্যাম্পিয়ন হলো শ্রীলঙ্কাই। দলের হয়ে প্রামদ মাধুশান ৪ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে নিয়েছেন ৪টি উইকেট। হাসারাঙ্গা ৪ ওভারে ২৭ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩টি উইকেট। আর করুনারন্তে ২টি এবং মহেশ থিকশানা নিয়েছেন ১টি উইকেট। ম্যাচ সেরা হয়েছেন ভানুকা রাজাপক্ষে ও সিরিজ সেরা হয়েছে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা।