বাংলাদেশ ৬-০ পাকিস্তান

সাবিনার হ্যাটট্রিকে বিধ্বস্ত পাকিস্তান

প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৮:৪৭

সাহস ডেস্ক

খেলার শুরু থেকেই মুহুর্মুহু আক্রমণ। প্রতিপক্ষের সীমানায় ত্রাস ছড়ালেন সাবিনা খাতুন, মনিকা চাকমারা। শুরুতেই মিলল গোল, সময়ে সময়ে বাড়তে থাকল ব্যবধান। অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের হ্যাটট্রিকে পাকিস্তানকে বিধ্বস্ত করল বাংলাদেশ। শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানকে ৬-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছেন সাবিনা খাতুনের দল।

দলের হয়ে হ্যাটট্রিক করেন অধিনায়ক সাবিনা। সাফের টুর্নামেন্টে এটি তার দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক। এর আগে ২০১৬ সালের সাফে শিলিগুড়িতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৬-০ গোলের জয়ে ৫ গোল একাই করেছিলেন বাংলাদেশের এই ‘গোলমেশিন’। সাফে এ পর্যন্ত ১৯ গোল হয়ে গেল সাবিনার। পরপর দুই ম্যাচে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেলেন সাবিনা। ম্যাচে সাবিনার হ্যাটট্রিক ছাড়া ১টি করে গোল করেন মণিকা চাকমা, সিরাত জাহান স্বপ্না, ঋতুপর্ণা চাকমা।

এদিন নান্দনিক ফুটবলের পসরা সাজিয়ে মনভরানো খেলা উপহার দিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। সানজিদা আক্তারের ড্রিবলিং, সাবিনার ব্যাকহিল পাস মুগ্ধ করেছে খেলা দেখতে আসা প্রবাসী বাংলাদেশিদের। কৃষ্ণা রানী, মারিয়া মান্দাদের পায়ে বল পড়তেই ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ বলে গলা ফাটিয়েছেন দর্শকেরা। ছোট-বড় লাল-সবুজ পতাকায় ছেয়ে গিয়েছিল গ্যালারি।

কাঠমুন্ডুতে বাংলাদেশি প্রবাসি দর্শক

আট বছর পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফেরা পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়টা অবশ্য অনুমিতই ছিল। তবে ব্যবধান কত হবে, সেটাই ছিল দেখার বিষয়; যদিও পাকিস্তান দলে রয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের নারী লিগে খেলা মারিয়া খান, সৈয়দা মাফারা ও জুলফিয়া নাজির। ম্যাচে দু-একবার অবশ্য বাংলাদেশের রক্ষণে ঢুকে আতঙ্ক ছড়িয়েছেন মারিয়া, জুলফিয়া। কিন্তু গোল হয়নি। এদিকে বাংলাদেশের থেকে বয়সে এগিয়ে পাকিস্তান দলের বেশ কয়েকজন ফুটবলার। কিন্তু সাবিনা, সানজিদাদের অভিজ্ঞতা আর গতিময় ফুটবলের কাছে পেরে ওঠেনি পাকিস্তান।

এর আগে গত বুধবার নিজেদের প্রথম ম্যাচে মালদ্বীপকে ৩-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে সে ম্যাচে সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি সাবিনারা। এবার আর সেই ভুল হয়নি। শুরু থেকেই আক্রমণে উঠেছে বাঘিনীরা। খেলার শুরুতেই বাংলাদেশকে এগিয়ে দেন মনিকা চাকমা। তৃতীয় মিনিটে থ্রোয়িং থেকে বল নিয়ে দুজনকে কাটিয়ে বক্সে ঢুকে সাবিনা শট নিয়েছিলেন। তা পাকিস্তানি ডিফেন্ডার ফিরিয়ে দিলে ফাঁকায় দাঁড়ানো মনিকা বল পেয়ে যান। ডান কোনা ধরে নিখুঁত শট জালে বল জড়ান মনিকা।

তবে ১১ মিনিটেই এসেছিল ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ। সুর্বণ ওই সুযোগ নষ্ট করে বাংলাদেশ। বা দিক থেকে তৈরি হওয়া আক্রমণ থেকে মণিকার ক্রস বক্সে আসলে জায়গা করে নিয়েছিলেন সাবিনা। বাংলাদেশ অধিনায়কের নেয়া শট বারের উপর দিয়ে চলে যায়। ১৬ মিনিটে কর্নার থেকে পাওয়া বল আঁখি খাতুন অল্পের জন্য মাথা লাগাতে পারেননি। ২২ মিনিটে সমতায় ফেরার সুযোগ পেয়েছিল পাকিস্তান। কর্নার থেকে পাওয়া বল লাফ দিয়ে উঠে হেডের উচ্চতায় পেয়েছিলেন সুহা হিরানি। মাথায় পেছনের দিকে লাগায় বল লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে রক্ষা পায় বাংলাদেশ।

পাকিস্তানকে একটুও স্বস্তি দেয়নি সাবিনারা। চালাতে থাকে একের পর এক আক্রমণ। এর ফলে ২৭ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন স্বপ্না। সাবিনার কাছ থেকে বলের যোগান পেয়ে বক্সে ঢুকে দারুণ নৈপুণ্যে বল জালে জড়ান সিরাত জাহান স্বপ্না। তার তিন মিনিট পরই নিজের প্রথম ও দলের তৃতীয় গোল পান সাবিনা। ডান দিক থেকে আসা ক্রস দেখে বুদ্ধিদীপ্তভাবে বক্সে ঢুকে যান তিনি। প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডার ওই বল ক্লিয়ার করতে না পেরে উল্টো তুলে দেন সাবিনার পায়ে। টোকা মেরে জালে জড়িয়ে দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন ৩৫ মিনিটে। আঁখির লং পাস ধরে ডান দিক থেকে ক্রস বাড়ান সানজিদা। গোলমুখ থেকে বল পেয়ে অনায়াসে বাকি কাজ সারেন সাবিনা। তখন স্কোরলাইন ৪-০। এরপর বিরতিতে যাওয়ার খানিক আগে পাকিস্তানের জুলফিয়া নাজির বল নিয়ে বক্সে ঢুকে গোলরক্ষক রুপনা চাকমাকে কাটিয়ে এগিয়ে যান। কিন্তু অরক্ষিত গোলবারে থেকে ডিফেন্ডার আঁখি সেই বলটি ক্লিয়ার করেন। পরে ৪-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় বাংলাদেশের মেয়েরা।

হ্যাটট্রিকের পর অধিনায়ক সাবিনা খাতুন

বিরতি থেকে ফিরে এসে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করেন অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। ম্যাচের ৫৯ মিনিটে ডানদিকে থ্রোয়িং থেকে বল পেয়ে বক্সে ক্রস করেন সানজিদা। দারুণ সেই বলের ফ্লাইট বুঝে লাফিয়ে জালে জড়ান সাবিনা। এতে নিজের হ্যাটট্রিকের সঙ্গে হয়ে যায় দলের পঞ্চম গোল। এরপর কৃষ্ণার বদলি হিসেবে নামা ঋতুপর্ণার গোলটাও ছিল দেখার মতো। ম্যাচের ৭৭ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে নেয়া শট পাকিস্তানের গোলরক্ষক শাহিদ বুখারির মাথার ওপর দিয়ে জালে জড়ায়। এতে ৬ গোল হজম করে পাকিস্তানের মেয়েরা। এছাড়াও শেষ দিকেও একাধিকবার পাকিস্তানের বক্সে আতঙ্ক ছড়ায় বাংলাদেশের মেয়েরা। এর আগে ২০১০ এসএ গেমসে একবার পাকিস্তানের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। ঢাকায় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে সেবার ২-০ গোলে পাকিস্তানকে হারিয়েছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। অবশ্য ভুটানে ২০১৮ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে বয়সভিত্তিক সাফে বড় জয় পায় বাংলাদেশ। থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে পাকিস্তানকে ১৭-০ গোলে উড়িয়ে দেন মারিয়া মান্দা, তহুরা খাতুনেরা।

বাংলাদেশ দল:
রুপনা চাকমা, মাসুরা পারভীন, আঁখি খাতুন, শিউলি আজিম (নীলুফার ইয়াসমিন), মণিকা চাকমা, মারিয়া মান্দা, শামসুন্নাহার, সানজিদা আক্তার (মার্জিয়া), কৃষ্ণা রানী সরকার (ঋতুপর্ণা চাকমা), সিরাত জাহান স্বপ্না (তহুরা) ও সাবিনা খাতুন (শামসুন্নাহার জুনিয়র)।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত