ওয়ানডে সিরিজ

শেষ ম্যাচে ২৫৬ তুলেছে বাংলাদেশ

প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২২, ১৭:০৪

সাহস ডেস্ক

 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে আফিফ হোসেন ও এনামুল হক বিজয়ের দুর্দান্ত অর্ধশতকে ২৫৬ রান তুলতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। বুধবার (১০ আগস্ট) হারারে স্পোটিং ক্লাবে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচেও টস হেরে আগে ব্যাটিং পায় তামিম ইকবালের দল। ফলে সিরিজের তিন ম্যাচেই টস হেরেছেন টাইগার অধিনায়ক। এর আগে টি-টোয়েন্টি সিরিজেও টানা টস হেরেছিল বাংলাদেশ।

আগে ব্যাট করতে নেমে এনামুল হক বিজয়কে নিয়ে ইতিবাচক শুরু করেন তামিম ইকবাল। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই রিচার্ড এনগারাভাকে চার মেরে শুরু তার। পরের ২ ওভারে কোনো বাউন্ডারি না আসলেও ভিক্টর নিয়াউচির করা চতুর্থ ওভারে কাভার ড্রাইভের পর অন ড্রাইভে টানা দুই চার মারেন তামিম। ওই ওভারে এসেছে ১২ রান। বিনা উইকেটে বাংলাদেশ তুলেছে ২২ রান। তবে এদিন ইনিংস বড় করতে পারেনি তামিম। এনামুল হকের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির কারণে ফিরতে হয় আগেভাগেই।

এনগারাভার বলে পয়েন্টে খেলেছিলেন এনামুল, তাকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে আসতে দেখে দৌড় শুরু করেন তামিম। তবে এনামুলের সেদিকে যেন খেয়ালই ছিল না, দাঁড়িয়েই থাকেন তিনি। অপর প্রান্ত থেকে ক্রিজের অর্ধেকেরও বেশি পেরিয়ে গিয়েছিলেন তামিম। সেখান থেকে ফিরে আসাটা মোটেও সহজ নয়। পয়েন্টে ভালো ফিল্ডিং করা মাধেভেরের থ্রো-টাও সুবিধার ছিল না। তবে তামিম এতটাই বেরিয়ে গিয়েছিলেন, এনগারাভা ডানদিকে ঝুঁকে বল সংগ্রহ করে স্টাম্প ভাঙার সময় পেয়েছেন। ডাইভ দিয়েও ক্রিজে সময়মতো পৌঁছাতে পারেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। ফেরার আগে ৩০ বলে ৩ চারে ১৯ রান করেন তামিম ইকবাল। ৯ ওভারের তৃতীয় বলে বাংলাদেশ হারায় ৪১ রানে প্রথম উইকেট।

পরের ওভারেই শান্তর ডাক। ১০তম ওভারের প্রথম বলে ব্র্যাড এভান্সের শর্ট বলে লাফিয়ে উঠে কাট করতে গিয়েছিলেন নাজমুল। ধরা পড়েছেন ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট। মুখোমুখি প্রথম বলেই আউট নাজমুল হোসেন শান্ত। তার দুই বলের মাথায় মুশফিকের ডাক। ওই ওভারের চতুর্থ বলে এভান্সের শর্ট বল ছিল অফ স্টাম্পের বাইরে, শেষ মুহূর্তে গিয়ে সেটিতেই ব্যাট চালালেন মুশফিক। থার্ডম্যান থেকে বেশ খানিকটা ছুটে এসে ডাইভ দিয়ে ভালো ক্যাচ নিয়েছেন রিচার্ড এনগারাভা। ৪ বলের মধ্যে বাংলাদেশ হারাল নাজমুল ও মুশফিককে-দুজনই ফিরলেন কোনো রান না করেই। ৮ বলের মধ্যে বাংলাদেশ হারায় ৩ উইকেট।

শর্ট বলে নাজমুল-মুশফিক আউট হলেও শর্ট বলে এখন পর্যন্ত ভিন্ন ফলই আনছেন এনামুল হক। এনগারাভার শর্ট বলে হুক করে প্রথমে মেরেছেন ছয়, বাংলাদেশের ৫০ রান হয়ে গেছে তাতে। পরে এভান্সকে আরেকটি হুকে মেরেছেন আরেকটি ছয়। এ দুইয়ের মাঝে এভান্সকে লং অন দিয়ে মেরেছেন আরেকটি চার। ফলে তখন ৩৯ বলে ৪৪ রানে অপরাজিত ছিলেন এনামুল। ১৪তম ওভার শেষে বাংলাদেশের তখন ৬৮ রান। এনামুলের সঙ্গে ব্যাট করছিলেন মাহমুদউল্লাহ। পরে অর্ধশতক করেন এনামুল। ৪৮ বলের ইনিংসে ৪টি চার ও তিনটি ছক্কা মেরেছেন তিনি। এটি তার ক্যারিয়ারের পঞ্চম অর্ধশতক।

প্রথম ম্যাচে করেছিলেন ৭৩ রান। দ্বিতীয় ম্যাচে ২০ রান করে হয়েছিলেন রানআউট। তৃতীয় ম্যাচে এসে ছিলেন দারুণ ছন্দে। তার অর্ধশতকের পর ১০০ রান পার করে বাংলাদেশ। স্লটে পেয়েছিলেন, তবে তাতে শুধু ফ্লিকের মতো করলেন এনামুল। টাইমিং ছিল দুর্দান্ত, বল চলে গেছে ডিপ স্কয়ার লেগ বাউন্ডারি পেরিয়ে ছাদের ওপর! এনামুলের এটি চতুর্থ ছক্কা, ওই শটেই ১০০ ছুঁয়ে ফেলে বাংলাদেশ। ঠিক পরের বলেই এভান্স অফ স্টাম্পের বাইরে জায়গা দিয়েছেন, ড্রাইভ করে চার মারেন এনামুল। এরপর ৭৬ রানে থামেন তিনি। আগের বলটি ছিল লেগ সাইডে, লেগবাইয়ে এসেছিল চার। পরেরটি অফ স্টাম্প লাইনে। লুক জঙ্গুয়ের বলে এনামুল ধন্দে পড়ে গেলেন, শেষ পর্যন্ত ফেসটা ওপেন করে বিপদ ডেকে এনেছেন তিনি। খোঁচা দিয়ে কট বিহাইন্ড হয়ে ফেরেন এনামুল। ফেরার আগে ৭১ বলে  ৬ চার ৪ ছয়ে ৭৬ রান করেন এনামুল হক বিজয়। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ৯০ বলে ৭৭ রানের জুটি ভাঙে তার। বাংলাদেশ চতুর্থ উইকেট হারায় ১২৪ রানে।

আলগা শটে আউট হন মাহমুদউল্লাহ। অফ স্টাম্পের বাইরের বলটা স্টাম্পেই ডেকে আনেন মাহমুদউল্লাহ। শুরু থেকেই রান তুলতে ভুগতে থাকা মাহমুদউল্লাহ ৬৮ বল খেলে ৩৫ করে ফেরেন তিনি। মেরেছেন ৩টি চার। ১৭৩ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। পরে এলবিডব্লু শিকার হন মিরাজ। সিকান্দার রাজার করা ওভারে গুডলেংথের বলটা সামনে ঝুঁকে ডিফেন্ড করতে গিয়ে লাগান প্যাডে। জোড়ালো আবেদনে সারা দেন আম্পায়ার। তবে এ সিদ্ধান্তে মোটেও সন্তুষ্ট হতে পারেননি মিরাজ। রিভিউ নেই বলে কিছুই করার ছিল না। ফেরার আগে ২৪ বলে ১৪ রান করে আফিফের সঙ্গে ৩৩ রানের জুটি ভাঙেন মিরাজ।

পরে অর্ধশতক তুলে ফেলেন আফিফ। রাজার বলে ডাবলস নিয়ে ফিফটি পূর্ণ করেন আফিফ। ফিফটি করতে ৫৭ বল খেলেছন তিনি। ক্যারিয়ারে এটি তার তৃতীয় ফিফটি, সর্বশেষটি পেয়েছিলেন গত মার্চে, জোহানেসবার্গে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। এরপরই রানআউট হন তাইজুল। মিডউইকেটের দিকে খেলে ডাবলস নিতে গিয়েছিলেন আফিফ হোসেন, সাড়াও দিয়েছিলেন তাইজুল। তবে তাদিওয়ানাশে মারুমানির সরাসরি থ্রোয়ে রানআউট তাইজুল ইসলাম।

এরপর ৪৮তম ওভারে মাত্র ২ বল স্ট্রাইক পেয়েছেন আফিফ। মাঝে ফিরেছেন হাসান মাহমুদ। শেষ বলে প্যাডল স্কুপের মতো শটে মেরেছেন চার। জঙ্গুয়ের ওভারে ৭ রানের বেশি ওঠেনি। পরের ওভারে স্ট্রাইক ফিরে পেতে আফিফকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৩ বল। তবে সেটিও মোস্তাফিজের রানআউটের বিনিময়ে। শেষ ৩ বলে অবশ্য ৩ রানের বেশি নিতে পারেননি আফিফ, তবে শেষ ওভারে ধরে রেখেছেন স্ট্রাইক। ৫০তম ওভারে নো, দুটি ওয়াইড-লুক জঙ্গুয়ের করা শেষ ওভারটি দীর্ঘই হলো। তাতে উঠেছে ১২ রান। প্রথম দুই ওয়ানডেতে ৩০৩ ও ২৯০ রানের পর তৃতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশ তুলতে পারে ২৫৬ রান। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন আফিফ হোসেন। ৮১ বলে ৬ চার ২ ছক্কায় ৮৫ রান করেন তিনি।

স্বাগতিকদের হয়ে ব্রাড ইভান্স ও লুক জঙ্গুয়ে ২টি করে এবং নাগারাভা ও সিকান্দার রাজা ১টি করে উইকেট নেন।

বাংলাদেশের দেয়া ২৫৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামবে সিকান্দার রাজার দল।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত