টি-টোয়েন্টি সিরিজ

৭ উইকেটে জিতে সমতায় বাংলাদেশ

প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২২, ২১:১৭

সাহস ডেস্ক

সিরিজ বাঁচাতেই যেন দ্বিতীয় ম্যাচে জ্বলে উঠলেন মোসাদ্দেক হোসেন। ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং পারফর্মেন্স করে গণ্ডির মধ্যে আটকে রেখেছেন স্বাগতিকদের। একাই নেন ৫ উইকেট। জিম্বাবুয়ে থামে ১৩৫ রানে। ১৩৬ রানের সহজ লক্ষ্য পেয়ে লিটন দাস, আফিফ হোসেনের ব্যাটে অনায়াসেই তা পার করে বাংলাদেশ। রবিবার (৩১ জুলাই) হারারে মাঠে তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ১৩৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ১৫ বল বাকি থাকতেই ৭ উইকেটে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। এতে ৩ ম্যাচ সিরিজে ১-১ জয়ে সমতায় ফিরল নুরুল হাসানের দল।

এদিন জিম্বাবুয়ের দেওয়া ১৩৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ১৭.৩ ওভারে মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। দলের হয়ে শুরুতে ব্যাট হাতে নামের লিটন দাস ও মুনিম শাহরিয়ার। বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেননি মুনিম। ম্যাচের চতুর্থ ওভারের তৃতীয় বলে রিচার্ড এনগারাভার স্লোয়ারে আড়াআড়ি শট খেলতে গিয়ে পুরোপুরি মিস করেন। এতে বোল্ড হয়েছেন মুনিম। এমন বলে শট খেলতে হলে আত্মবিশ্বাস থাকতে হয়, অথবা বাজে কিছু হবে না এমন আশায় থাকতে হয়। কিন্তু দুটিতেই পিছিয়ে মুনিম। ফেরার আগে ৮ বলে ১ চারে ৭ রান করেন তিনি। প্রথম ম্যাচেও ৮ বলে মাত্র ৪ রান করেছিলেন তরুণ এ ওপেনার। পঞ্চম ওভারে ৩৭ রানে প্রথম উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ।

এরপর নামেন এনামুল হক বিজয়। পাওয়ারপ্লেতে ৫৩ রান তুলেছেন বিজয় লিটন। ষষ্ঠ ওভারে ওয়েলিংটন মাসাকাদজার বলে এসেছে দুটি চার। একটি মেরেছেন লিটন, অন্যটি বিজয়। আগের দিনের চেয়ে ভালো শুরু করেছেন এনামুল, প্রথম ৬ বলে করেছেন ১০ রান। মুনিমকে হারালেও বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছে ইতিবাচকই। প্রথম ৬ ওভারে উঠছে ৫৩ রান। এরপর অর্ধশতক তুলে নেন লিটন দাস। প্রথম ম্যাচে বড় স্কোরের সুযোগ হারিয়েছেন তিনি। ভালো শুরুর পর আউট হয়েছিলেন নাটকীয়ভাবে, যদিও শুরুতে শটটা আলগাই খেলেছিলেন। দ্বিতীয় ম্যাচে তার ভালোই ‘ক্ষতিপূরণ’ দিয়েছেন বাংলাদেশ ওপেনার। ২৮ বলেই পূর্ণ করেন অর্ধশতক। রায়ান বার্লের শর্ট বল টেনে চার মেরে মাইলফলকে পৌঁছান তিনি। ক্যারিয়ারে এটি তার ষষ্ঠ অর্ধশতক। এর পরপরই ফেরেন লিটন। শন উইলিয়ামসকে সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লু হন তিনি। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে অবশ্য খুব একটা সন্তুষ্ট মনে হয়নি তাকে, তবে সিরিজে রিভিউ নেই। থাকলে হয়তো রিভিউ নিতেন তিনি। ফেরার আগে ৩৩ বলে ৬ চার ২ ছক্কায় ৫৬ রান করেন লিটন দাস। ৭৮ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

লিটনের পরেই ফেরেন এনামুল হক বিজয়। সিকান্দার রাজার বল স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বিজয়। ফেরার আগে ১৫ বলে ২ চারে ১৬ রান করেন বিজয়। সিরিজে এটি তার দ্বিতীয় ইনিংস। প্রথম ইনিংসে ২৭ বলে ২৬ করেছিলেন তিনি। ৪ বলের মধ্যে ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ৭৮ রানে ১ উইকেট থেকে ৮১ রানে ৩ উইকেটে পরিণত হন তারা। তখন বাংলাদেশের প্রয়োজন ৬০ বলে ৫৪ রান। তখন দলের হাল ধরেন আফিফ হোসেন ও নাজমুল হাসান শান্ত। ৪ বলের মধ্যে লিটন ও এনামুলকে হারানোর পর সতর্ক ব্যাটিং করেছেন আফিফ-শান্ত। নেননি কোনো ঝুঁকি। লিটনের ৩৩ বলে ৫৬ রানের ইনিংসেই মূলত কাজটা সহজ হয়ে গেছে। আর কোনো উইকেট না হারিয়ে ১৫ বল বাকি থাকতেই ৭ উইকেটের জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। আফিফ ২৮ বলে ১ চার ১ ছক্কয় ৩০ রান এবং নাজমুল ২১ বলে ১ চারে ১৯ রান করেন নাজমুল। দুজনেই অপরাজিত থাকেন।

এর আগে টস জিতে ব্যাট করে নির্ধারিত ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৩৫ রান সংগ্রহ করে স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের বোলারদের তুলোধুনো করে দু’শ পার করে জিম্বাবুইয়ান ব্যাটাররা। এটিই বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম দু’শ ছাড়ানোর রেকর্ড তাদের। এর আগে একবার দু’শ ছাড়িয়েছিল, ২০১২ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। তবে এদিন আর পরলেন না জিম্বাবুইয়ান ব্যাটাররা। আসছেন আর উইকেট নিচ্ছেন। নিজের শেষ ওভার তথা ৪র্থ ওভারের পঞ্চম বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে মিডউইকেটে হাসান মাহমুদের হাতে ভালো ক্যাচে পরিণত হন মিল্টন শুম্বা। আর এই উইকেটের মাধ্যমেই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির এক ম্যাচে ৫ উইকেটের রেকর্ড গড়ে ফেললেন মাত্র ২০ রান দিয়ে। এটাই নিজের ক্যারিয়ারের সেরা পারফর্মেন্স। পাশাপাশি দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ইলিয়াস সানি, সাকিব আল হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমানের পর চতুর্থ বোলার হিসেবেও কীর্তি গড়লেন মোসাদ্দেক হোসেন।

যিনি লম্বা সময় ধরে ছিলেন জাতীয় দলের বাইরে। তিন বছর পর শ্রীলঙ্কা সিরিজের মধ্য দিয়েই দলে ফিরলেন। সেই সিরিজে তেমন কিছু করতে পারেননি। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজেও খুব একটা কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারেননি। সফলতা ছিল না জিম্বাবুয়ে সিরিজের প্রথম ম্যাচেও। তবে দ্বিতীয় ম্যাচের শুরুতে করেছেন বাজিমাত। ওভারে এসেছেন আর উইকেট নিয়েছেন। ৪ ওভারে মাত্র ২০ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিয়ে নিজের সেরা পারফর্মেন্স উপহার দিয়ে রেকর্ড গড়েছেন স্পিন অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।

প্রথম ম্যাচের মতো আজও টসে জিতে আগে ব্যাটিং নেয় জিম্বাবুয়ে। শুরুতে বোলিংয়ে আসেন মোসাদ্দেক। প্রথম বলেই নেন উইকেট। বলটা ছিল অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে। তাতেই ব্যাট চালিয়ে আউটসাইড-এজড হন রেজিস চাকাভা। উইকেটের পেছনে ভালো ক্যাচ নেন নুরুল হাসান। টি-টোয়েন্টিতে এ নিয়ে সপ্তম বারের মতো প্রথম বলেই উইকেট পেল বাংলাদেশ। এর পর থেকেই চলে মোসাদ্দেকের স্পিন ভেলকি। যার কারণে প্রথম ওভারেই আবারও নেন উইকেট। আবারও একই ভাবে বল দিলেন মোসাদ্দেক, অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে। আবারও ব্যাট চালালেন ওয়ানডাউনে নামা ওয়েসলি মাধেভেরে। ব্যাটে বলে করেছিলেন, তবে সোজা ক্যাচ গেছে কাভারে। প্রথম ওভারের শেষ বলে দ্বিতীয় উইকেটটি পেয়ে যান তিনি। বোলিংয়ে স্বপ্নের মতো শুরু পেয়েছে বাংলাদেশ!

এরপর মোসাদ্দেক পান তৃতীয় উইকেট। নিজের দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলে অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিনকে শিকার করেন তিনি। অফ স্টাম্প ঘেঁষা লাইনের বলটি রিভার্স সুইপ করতে চেয়েছিলেন আরভিন। তবে টাইমিং করতে পারেননি। গ্লাভসে লেগে বল গেছে স্লিপে, যেখানে বেশ ভালো ক্যাচ নিয়েছেন লিটন দাস। ৬ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। এবার নিজের ৩ ওভারে ৪ উইকেট মোসাদ্দেকের। ইনিংসের পঞ্চম ও নিজের তৃতীয় ওভার করতে এসে ফেরালেন শন উইলিয়ামসকে। চতুর্থ বলে মোসাদ্দেককে আক্রমণ করতে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলতে যায় উইলিয়ামস। মোসাদ্দেকের হাতে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। জিম্বাবুয়ে চতুর্থ উইকেট হারিয়েছে ২০ রানের মাথায়। আর ৩ ওভারে মাত্র ১৪ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন মোসাদ্দেক। আর এতেই গড়েন একটি রেকর্ড। টি-টোয়েন্টিতে এটিই তার সেরা বোলিং। এর আগেরটি ছিল ২১ রানে ২ উইকেট। শুধু নিজের নয়, বাংলাদেশেরও একটা রেকর্ড গড়ে ফেললেন তিনি। বাংলাদেশের কোনো ডানহাতি স্পিনারের জন্য টি-টোয়েন্টিতে এখন এটিই সেরা বোলিং। এর আগের রেকর্ডটি ছিল মাহমুদউল্লাহর, ১০ রানে ৩ উইকেট। এরপর নিজের শেষ ওভারে এসে পেয়ে গেলেন পঞ্চম উইকেটটির দেখা। তার শেষ ওভারের পঞ্চম বলে মিল্টন শুম্বাকে মিডউইকেটে হাসান মাহমুদের ক্যাচে পরিণত করেন মোসাদ্দেক। জিম্বাবুয়ে পঞ্চম উইকেট হারিয়েছে মাত্র ৩১ রানেই।

এদিকে ভিন্ন ভূমিকায় স্বাগতিক সিকান্দার রাজা। দ্বিতীয় ওভারেই নেমেছেন রাজা, জিম্বাবুয়ে ৫ রানে ২ উইকেট হারানোর পর। এরপর ধীর গতিতে এগোতে থাকেন তিনি। এর মধ্যে আরও তিন সতীর্থকে ড্রেসিংরুমে ফিরতে দেখেছেন। কিন্তু নিজের জায়গা ধরে রেখে অর্ধশতক তুলে নেন। আগের ম্যাচে ২৬ বলে ৭ চার ৪ ছক্কায় ২৫০ স্ট্রাইক রেট নিয়ে ৬৫ রান করে অপরাজিত ছিলেন রাজা। আজ আর অপরাজিত থাকতে পারেননি। তবুও করেছেন ফিফটি। রাজাকে থামালে মোস্তাফিজ। ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে মোস্তাফিজের বল তুলে মারতে গিয়ে বল খাড়া উপরে উঠে যায়। কাভারে সেটির ক্যাচ তুলে নেন মুনিম শাহরিয়ার। তখন ৭ উইকেটে জিম্বাবুয়ের ১১৬ রান। তার মূল অবদানই রাজার। ফেরার আগে ৫৩ বলে ৪ চার ২ ছক্কায় ৬২ রান করেন সিকান্দার রাজা।

এর আগে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে প্রথম উইকেট শিকার করলেন হাসান মাহমুদ। প্রথম বলে চার খেলেও স্টাম্প লাইনে বোলিং করে গেছেন হাসান। তার পুরস্কারও পেলেন তিনি। ১৮ ওভারের চতুর্থ বলে বোল্ড করলেন রায়ান বার্লকে। এই উইকেট দিয়েই রাজার সঙ্গে বার্লের ৬৫ বলে ৮০ রানের জুটি ভাঙে। ফেরার আগে ৩১ বলে ৩ চারে ৩২ রান করেন বার্ল। পরে মাসজাকাদজাকে রানআউট করেন শরিফুল ইসলাম। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৩৫ রান তুলতে সক্ষম হয় স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে।

বাংলাদেশের হয়ে মোসাদ্দেক হোসেন ৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে নিয়েছেন ৫ উইকেট। এছাড়া ১টি করে উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজ ও হাসান মাহমুদ। ৪ ওভার করে মোস্তাফিত দিয়েছেন ৩০ রান আর হাসান দিয়েছেন ২৬ রান। এদিন রান খরুচে শরিফুল ইসলাম ৩৭ রান দিয়ে পাননি কোনো উইকেট।

ম্যাচ সেরা হয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত