চ্যাম্পিয়নস লিগ

রিয়ালই জিতল ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট

প্রকাশ : ২৯ মে ২০২২, ০৫:৩৫

সাহস ডেস্ক

রাতটা ছিল ভিনিসিয়ুস জুনিয়র ও থিবো কোর্তোয়ার। ৫৯ মিনিটে ভিনিসিয়ুস গোলটা করেছেন ঠিকই, তার আগে ও পরে অবিশ্বাস্য দক্ষতায়, একের পর এক গোল বাঁচিয়ে ম্যাচ জয়ের মূলনায়ক হয়েছেন গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া। এই দুই যুগলবন্দীতেই লিভারপুলকে হারিয়ে ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরল স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ। এই জয়ে রেকর্ড ১৪তম চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জিতল স্পেনের দলটি।

শনিবার (২৮ মে) দিবাগত রাতে স্তাদে দে ফ্রান্সে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে লিভারপুলকে ১-০ গোলে হারিয়ে ১৪তম শিরোপা ঘরে তুললো রিয়াল। তবে লিভারপুলের আর প্রতিশোধ নেওয়া হলো না। ২০১৮ সালে এই রিয়ালের কাছেই ৩-১ গোলে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল তাদের। চার বছর পর তার শোধ নেওয়ার সুযোগ পেয়েও সেই রিয়ালের কাছেই আবারও স্বপ্ন ভঙ্গ হলো ইংলিশ দলটির।

ফাইনাল ম্যাচটি রাত ১টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা দেড়টায় শুরু হয়। কারণ, ম্যাচ শুরুর আগে দর্শকদের সঙ্গে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গন্ডগোলের কারণে কিক-অফ পিছিয়ে দেওয়া হয়। দুই দলের সমর্থকেরা ফাইনাল দেখার জন্য প্যারিসে পৌঁছালেও অনেকে বিনা টিকিটে মাঠে প্রবেশের চেষ্টা করেন। ফলে, তাদের সামলাতে কিছুটা বেগ পেতে হয় পুলিশকে। এছাড়া লিভারপুলের সমর্থকদের গ্যালারিতে পৌঁছাতেও বিলম্ব হয়। ম্যাচ শুরুর আগে স্টেডিয়াম মাতান কিউবান পপস্টার কামিলা কাবেও।

পিএসজি, চেলসি, ম্যানচেস্টার সিটির মত দলকে হারিয়ে প্রত্যাবর্তনের অবিশ্বাস্য কিছু গল্প লিখে ফাইনালে নাম লেখায় রিয়াল। তবে ফাইনালে তেমন কিছু করতে হয়নি তাদের। প্রতিপক্ষকে আটকে রেখে একটি গোল করেই কাজটা সেরে ফেলে দলটি। ৯টি গোল বাঁচান কোর্তোয়া। যার মধ্যে কয়েকটি ছিল অবিশ্বাস্য।

মাঝমাঠে দুই দলই প্রায় সমান বল দখলে থাকলেও একের পর এক আক্রমণ চালিয়ে যায় লিভারপুল। প্রথমার্ধেই কমপক্ষে দুটি গোল পেতে পারতো ক্লপের দল। কিন্তু রিয়ালের দেয়াল হয়ে ছিলেন কোর্তোয়া। মাত্র পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে নিশ্চিত দুটি গোল বাঁচিয়ে দেন বেলজিয়ান এ গোলরক্ষক। তবে ম্যাচে রিয়ালের গোলটিই ছিল প্রথম লক্ষ্যে রাখা কোনো শট। এর আগে ২৫তম মিনিটে করিম বেনজেমা ডি-বক্সের বাইরে থেকে শট নিয়েছিলেন, যা সহজেই ধরে ফেলেন লিভারপুল গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকার। এটাই দলটি প্রথম শট। এমনকি প্রথমার্ধে এটাই ছিল তাদের একমাত্র শট। অন্যদিকে এ অর্ধে ১০টি শট নিয়েছে লিভারপুল, যার মধ্যে ৫টি ছিল লক্ষ্যে। তবে বিরতিতে যাওয়ার আগে ৪৩তম মিনিটে বেজেমার গোলে এগিয়ে থাকতে পারত রিয়াল কিন্তু অফসাইডের কারণে তা বাতিল হয়ে যায়। পরে গোল শূন্য নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল।

বিরতি থেকে ফিরে এসে আক্রমণের ধারা বজায় রেখে খেলতে থাকে রিয়াল। আর এই ধারার বিপরীতেই গোল আদায় করে নেয় দলটি। ম্যাচের ৫৯তম মিনিটে ফেদে ভালভার্দের ক্রস থেকে অরক্ষিত অবস্থায় বল পেয়ে যান ভিনিসিয়াস জুনিয়র। ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকারকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়ান আরেক ব্রাজিয়ালন তারকা ভিনিসিউস জুনিয়র। এতে ১-০তে এগিয়ে যায় রিয়াল মাদ্রিদ।

সমতায় ফিরতে মরিয়া লিভারপুল ৬৪তম মিনিটেই গোল পেতে পারতো। হেন্ডারসনের কাছ থেকে বল পেয়ে দারুণ এক কোণাকোণি শট নিয়েছিলেন সালাহ। কিন্তু আবারও দুর্দান্ত কোর্তোয়া। তার শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান তিনি। পাঁচ মিনিট পর আবারও সালাহকে হতাশ করেন কোর্তোয়া। ৭৪তম মিনিটে আলেকজান্ডার-আর্নল্ডের শটে কেবল পা লাগাতে পারলেই গোল পেতে পারতেন জোতা। ছয় মিনিট পর তো গোললাইন থেকে ঝাঁপিয়ে ঠেকান কোর্তুয়া। ৮২তম মিনিটে আবারও অবিশ্বাস্য কোর্তোয়া। সালাহর শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান এ গোলরক্ষক। আরও কিছু সুযোগ ছিল লিভারপুলের। কিন্তু ওই একজন কোর্তোয়ার কারণে আর জুটলো না গোল, হলো না প্রতিশোধ নেওয়া। চার বছর পর আবারও হেরে গেলো ইয়ুর্গেন ক্লপের দল লিভারপুল। এদিকে পাল্টা আক্রমণ থেকে সুযোগ ছিল পেয়েছিল রিয়াল, কিন্তু তার আজে লাগাতে পারেনি। অবশেষে এই ১-০ গোলের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে কার্লো আনচেলত্তির দল রিয়াল মাদ্রিদ।

পরিসখ্যান বলছে, চ্যাম্পিয়নস লিগ বা ইউরোপিয়ান কাপে সবচেয়ে বেশি শিরোপা জিতেছে রিয়াল। ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নদের টুর্নামেন্টে মোট ১৬ বার ফাইনাল খেলেছে দলটি, যার মধ্যে শিরোপা জিতেছে ১৩ বার। দ্বিতীয়তে আছে এসি মিলান, ৭ বার। তৃতীয়তে আছে বায়ার্ন মিউনিখ, ৬ বার। এবং অন্য কোনো ক্লাবগুলো ৫ বারের বেশি শিরোপাটি জিতজে পারেনি।

তবে রিয়ালের সঙ্গে ফাইনালে ব্যক্তিগত অর্জনেও এগিয়ে আছে খেলোয়াড় ও কোচরা। ১৪তম শিরোপার মধ্যে প্রথম ছয়টিতেই খেলেছেন ফ্রান্সিসকো (পাকো) হেন্তো। খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগ বা ইউরোপিয়ান কাপ জয়ের রেকর্ড এই স্প্যানিশ তারকারই। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাঁচটি শিরোপা জিতেছেন চারজন। এবারও চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় দুইয়ে উঠে এসেছেন গ্যারেথ বেল, করিম বেনজেমা, দানি কারভাহাল, ইসকো, মার্সেলো ও লুকা মদরিচ।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত